ইলাহাবাদ হাইকোর্ট আজ মথুরার শাহী ঈদগাহ মসজিদকে বিতর্কিত কাঠামো ঘোষণা করার বিষয়ে রায় দিতে পারে। হিন্দু পক্ষ দাবি করেছে যে মসজিদের স্থানে পূর্বে মন্দির ছিল এবং এর সমর্থনে ঐতিহাসিক প্রমাণ পেশ করা হয়েছে।
উত্তর প্রদেশ: মথুরায় অবস্থিত শাহী ঈদগাহ মসজিদ এবং শ্রীকৃষ্ণ জন্মভূমির মধ্যে বহু বছরের পুরনো বিতর্ক নিয়ে আজ ইলাহাবাদ হাইকোর্ট থেকে একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত আসতে পারে। এই রায়টি শুধু আইনি দৃষ্টিকোণ থেকে গুরুত্বপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে না, বরং সামাজিক ও ধর্মীয় দিক থেকেও এর প্রতিধ্বনি দূর-দূরান্তে শোনা যেতে পারে।
হাইকোর্টের লখনউ বেঞ্চের বিচারপতি রাম মনোহর নারায়ণ মিশ্রের একক বেঞ্চ এই মামলার রায় সংরক্ষণ করেছিলেন, যা আজ শোনানো হতে পারে। হিন্দু পক্ষের প্রধান আবেদনকারী, অ্যাডভোকেট মহেন্দ্র প্রতাপ সিং, এই আবেদন দাখিল করেছিলেন যে শাহী ঈদগাহ মসজিদকে একটি ‘বিতর্কিত কাঠামো’ ঘোষণা করা হোক।
মামলাটি কী?
মথুরার শ্রীকৃষ্ণ জন্মভূমির কাছে অবস্থিত শাহী ঈদগাহ মসজিদ নিয়ে এই বিতর্কটি বিশেষভাবে ২০১৯ সাল থেকে গভীর হয়েছে, যখন কিছু সংগঠন এবং আবেদনকারীরা আদালতে দাবি করে যে মসজিদটি সেই স্থানে তৈরি হয়েছে, যা একসময় ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জন্মস্থান ছিল।
মহেন্দ্র প্রতাপ সিংয়ের দাখিল করা আবেদনে বলা হয়েছে যে ঐতিহাসিক প্রমাণ এবং পুরনো বই থেকে স্পষ্ট হয় যে সেখানে মূলত একটি মন্দির ছিল, যা মুঘল আমলে ভেঙে মসজিদে রূপান্তরিত করা হয়েছিল। সিং মসজিদটিকে 'বিতর্কিত কাঠামো' ঘোষণা করে এর উপর আইনি নিষেধাজ্ঞা জারির আবেদন করেছেন।
ঐতিহাসিক দলিলের উল্লেখ
আবেদনকারী মহেন্দ্র প্রতাপ সিং তাঁর দাবির সমর্থনে বেশ কয়েকটি ঐতিহাসিক দলিল এবং লেখকের উল্লেখ করেছেন। এর মধ্যে 'মাসির-ই-আলমগিরি'-র মতো মুঘল যুগের গ্রন্থ, ১৯ শতকের সংগ্রাহক এফএস গ্রাউসের রিপোর্ট এবং ব্রিটিশ আমলে মথুরার ভূমি রাজস্ব সম্পর্কিত কাগজপত্র অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
তিনি আদালতে যুক্তি দিয়েছিলেন যে:
- খসরা-খাতুনিতে শাহী ঈদগাহের নাম নেই।
- নগর নিগমেও এর কোনো বৈধ রেকর্ড নেই।
- বিদ্যুৎ সংযোগ অবৈধভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে, যার উপর বিদ্যুতের চুরির অভিযোগও রয়েছে।
- মসজিদ পরিচালন কমিটি কোনো কর পরিশোধ করছে না এবং কোনো সরকারি নিয়মও মানছে না।
এই ভিত্তিতে, তিনি আবেদন করেছেন যে যতক্ষণ না মসজিদের বৈধতার কোনো প্রমাণ নেই, ততক্ষণ পর্যন্ত এটিকে বিতর্কিত কাঠামো হিসেবে ঘোষণা করা হোক।
হিন্দু পক্ষের ঐক্যবদ্ধ সমর্থন
এই পুরো ঘটনায় মহেন্দ্র প্রতাপ সিংয়ের সাথে আরও অনেক হিন্দু সংগঠন এবং ব্যক্তি সমর্থন জুগিয়েছেন। তাঁরা বিতর্কের সময় ঐক্যবদ্ধভাবে মহেন্দ্র প্রতাপ সিংয়ের যুক্তিগুলিকে সমর্থন করেছেন এবং এটিকে শ্রীকৃষ্ণ জন্মভূমির সাথে যুক্ত একটি আস্থার বিষয় হিসেবে তুলে ধরেছেন।
সকল পক্ষ এই বিষয়ে জোর দিয়েছিল যে এই মামলাটি কেবল একটি ধর্মীয় স্থানের নয়, বরং লক্ষ লক্ষ ভক্তের অনুভূতি এবং ধর্মীয় অধিকারের সঙ্গে জড়িত।
শাহী ঈদগাহ কর্তৃপক্ষের নীরবতা
অন্যদিকে, শাহী ঈদগাহ মসজিদ পরিচালনা কমিটির পক্ষ থেকে এখনও পর্যন্ত প্রকাশ্যে কোনো সুস্পষ্ট দলিল আদালতে পেশ করা হয়নি, যা মসজিদের আইনি অবস্থানকে স্পষ্ট করতে পারে। আদালতের কাছে তাদের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত এই দাবি করা হয়েছে যে এই বিতর্কটি ১৯৬৮ সালের একটি চুক্তিতে ইতিমধ্যেই মীমাংসিত হয়েছে, যা এখন আর পুনরায় উত্থাপন করা যায় না।
তবে, আবেদনকারীরা এই চুক্তিটিকে অবৈধ বলে চ্যালেঞ্জ করেছেন এবং বলেছেন যে সেই চুক্তিতে প্রকৃত জন্মভূমির অধিকার রক্ষা করা হয়নি।
আদালতের প্রক্রিয়া এবং আজকের শুনানি
৫ মার্চ, ২০২৫ তারিখে মহেন্দ্র প্রতাপ সিংয়ের দাখিল করা আবেদনের ওপর গত কয়েক মাস ধরে অবিরাম বিতর্ক চলছিল। উভয় পক্ষের যুক্তি শোনার পর বিচারপতি রাম মনোহর নারায়ণ মিশ্র এই বিষয়ে রায় সংরক্ষণ করেন, যা আজ অর্থাৎ ৪ জুলাই, ২০২৫ তারিখে শোনানোর সম্ভাবনা রয়েছে।
সূত্র অনুযায়ী, আদালতের কার্যসূচিতে এই মামলাটি সবার উপরে রয়েছে এবং নিরাপত্তা কারণের জন্য প্রয়াগরাজ ও মথুরায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
রায় এবং সম্ভাব্য প্রভাব
যদি ইলাহাবাদ হাইকোর্ট শাহী ঈদগাহ মসজিদকে বিতর্কিত কাঠামো ঘোষণা করে, তবে এই সিদ্ধান্তটি কেবল মথুরায় নয়, সারা দেশে আইনি, সামাজিক ও ধর্মীয় স্তরে একটি নতুন বিতর্কের জন্ম দিতে পারে।
এ ধরনের মামলায় আদালত কেবল কাগজপত্র-এর প্রমাণের উপর নির্ভর করে না, বরং ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট, ধর্মীয় অনুভূতি এবং আইনের সাংবিধানিক সীমাবদ্ধতার মধ্যে থেকে রায় দেয়।
এর আগে, অযোধ্যার রাম জন্মভূমি-বাবরি মসজিদ মামলায়ও সুপ্রিম কোর্ট উভয় পক্ষের যুক্তি গভীরভাবে শুনে ঐতিহাসিক রায় দিয়েছিল। মথুরার এই মামলাটিও এখন সেই দিকেই অগ্রসর হচ্ছে বলে মনে হচ্ছে।