৩রা সেপ্টেম্বর বলিউড অভিনেতা শক্তি কাপুর-এর জন্য একটি বিশেষ দিন। ১৯৫২ সালে দিল্লিতে সুনীল কাপুর নামে জন্মগ্রহণ করেন শক্তি কাপুর। তিনি হিন্দি সিনেমায় খলনায়ক এবং কমেডি অভিনেতা—দুই রূপেই নিজের পরিচিতি তৈরি করেছেন। তাঁর অসাধারণ অভিনয় শৈলী, কমেডির প্রতিভার ছাপ এবং খলনায়কের ভূমিকায় তাঁর বলিষ্ঠ উপস্থিতি তাঁকে বলিউডের স্মরণীয় মুখগুলির মধ্যে একজন করে তুলেছে। আজ তাঁর জন্মদিনে আমরা তাঁর জীবন, সংগ্রাম, ক্যারিয়ার এবং অর্জনগুলির উপর আলোকপাত করব।
শক্তি কাপুরের জন্ম ও পরিবার
শক্তি কাপুর দিল্লিতে এক পাঞ্জাবী হিন্দু পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা কাপড়ের ব্যবসা করতেন এবং তিনি তাঁর ছেলেকে সাধারণ জীবন দিতে চেয়েছিলেন। ছোটবেলা থেকেই শক্তি অভিনয় এবং সিনেমায় ক্যারিয়ার গড়ার প্রতি আকৃষ্ট ছিলেন।
ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়া (FTII) থেকে পড়াশোনা শেষ করে তিনি বলিউডে আসেন। প্রথম দিকে তিনি অনেক ছোট চরিত্রে অভিনয় করলেও কোনো বড় সাফল্য পাননি। তাঁর সংগ্রাম তখনই ফলপ্রসূ হয় যখন তাঁকে সঞ্জয় দত্তের "রকি" ছবিতে খলনায়ক চরিত্রে নেওয়া হয়। সঞ্জয় দত্তের বাবা সুনীল দত্ত অনুভব করেন যে তাঁর আসল নাম "সুনীল কাপুর" এই ভূমিকার জন্য উপযুক্ত নয়, এবং তখনই তিনি তাঁর নাম শক্তি কাপুর রাখেন।
চলচ্চিত্র ক্যারিয়ারের শুরু
শক্তি কাপুর ১৯৭৭ সালে "খেল খিলাড়ী কা" ছবি দিয়ে বলিউডে আত্মপ্রকাশ করেন। প্রথম দিকে তিনি বেশ কিছু সাধারণ চরিত্রে অভিনয় করেন। ১৯৮০-৮১ সালে তিনি তাঁর পরিচিতি তৈরি করেন। "কুরবানী" এবং "রকি" ছবিতে তাঁর খলনায়কের ভূমিকা দর্শকদের মধ্যে অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়।
১৯৮৩ সালে শক্তি কাপুর "হিরো" এবং "হিম্মতওয়ালা"র মতো ছবিতে খলনায়কের চরিত্রে অভিনয় করেন। এই ছবিগুলিতে তাঁর খলনায়কের চরিত্র দর্শকদের মনে গভীর ছাপ ফেলে। তাঁর অভিনয়রীতি এবং সংলাপ বলার ভঙ্গি তাঁকে খলনায়কের ভূমিকার জন্য প্রিয় অভিনেতা করে তোলে।
স্মরণীয় সংলাপ ও কমেডির ধরণ
নব্বইয়ের দশকে শক্তি কাপুর কমেডি চরিত্রেও তাঁর প্রতিভার পরিচয় দেন। তিনি "রাজা বাবু", "চালবাজ", "তোহফা", "ইনসাফ" এবং "আন্দাজ আপনা আপনা"র মতো ছবিতে দর্শকদের মনোরঞ্জন করেন। "রাজা বাবু" ছবিতে নান্দু-র চরিত্রের জন্য তিনি ফিল্মফেয়ার বেস্ট কমেডিয়ান অ্যাওয়ার্ডও পান।
তাঁর সংলাপ এবং কমেডির ধরণ এতটাই স্মরণীয় যে আজও মিমিক্রি শিল্পীরা তাঁর সংলাপ নকল করেন। তাঁর বিখ্যাত সংলাপগুলির মধ্যে রয়েছে—
- "আও ললিতা" (তোহফা)
- "ম্যাঁ নन्हा সা ছোঁটা সা বাচ্চা হুঁ" (চালবাজ)
- "নান্দু সবকা বন্ধু, সমঝতা নহি হ্যায় ইয়ার" (রাজা বাবু)
শক্তি কাপুরের টেলিভিশন এবং বহুভাষিক ছবিতে অবদান
শক্তি কাপুর শুধুমাত্র বলিউডের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেননি। তিনি মালয়ালম, বাংলা, ওড়িয়া এবং অসমীয়া সিনেমাতেও অভিনয় করেছেন। ২০১১ সালে তিনি বিগ বস ৫-এর প্রতিযোগী ছিলেন এবং দর্শকদের মধ্যে তাঁর জনপ্রিয়তা বজায় রেখেছিলেন। তিনি তাঁর শ্যালিকা पद्मिनी কোলাপুরেরীর সাথে "আসমান সে গিরে খজুর পে আটকে"র মতো ছবিতেও কাজ করেছেন। এছাড়া তিনি ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হিসেবেও সক্রিয় আছেন।
ব্যক্তিগত জীবন
শক্তি কাপুর শিবাঙ্গী কাপুরকে বিয়ে করেছেন। শিবাঙ্গী অভিনেত্রী पद्मिनी কোলাপুরী এবং তেজস্বিনী কোলাপুরীর বড় বোন। তাঁদের দুই সন্তান—পুত্র সিদ্ধান্ত কাপুর এবং কন্যা শ্রদ্ধা কাপুর, যারা আজ তাঁদের অভিনয়ের জোরে বলিউডে নিজস্ব পরিচিতি তৈরি করছেন। শক্তি কাপুর তাঁর পরিবারের সাথে মুম্বাইয়ের জুহুতে থাকেন।
শক্তি কাপুরের জীবনে বিতর্ক ও চ্যালেঞ্জ
শক্তি কাপুরের জীবন বিতর্ক থেকেও মুক্ত ছিল না। ২০০৫ সালে ভারত টিভি কর্তৃক প্রকাশিত একটি ভিডিওতে তাঁর বিরুদ্ধে যৌন সুবিধা নেওয়ার অভিযোগ আনা হয়। এই ঘটনার কারণে ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন প্রোডিউসার্স গিল্ড তাঁকে সাময়িকভাবে নিষিদ্ধ করে। যদিও পরে গিল্ড এই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়।
এছাড়াও, একটি গ্যাং তাঁকে অপহরণের পরিকল্পনা করেছিল, কিন্তু উচ্চ অগ্রিম অর্থের দাবির কারণে সেই পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়। শক্তি কাপুর এই সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেন এবং জানান যে তাঁকে ফাঁসানো হয়েছিল।
পুরস্কার ও সম্মান
শক্তি কাপুর তাঁর ক্যারিয়ারে অনেক ফিল্মফেয়ার পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছেন এবং জয়ীও হয়েছেন। কিছু প্রধান অর্জনগুলি নিম্নরূপ:
- ১৯৮৪: মওয়ালি – বেস্ট কমেডি রোল (মনোনয়ন)
- ১৯৮৫: তোহফা – মনোনয়ন
- ১৯৯৫: রাজা বাবু – বেস্ট কমেডি রোল (বিজেতা)
- আন্দাজ আপনা আপনা – মনোনয়ন
- ১৯৯৭: ল্যাফার – মনোনয়ন
- ১৯৯৮: জুড়ওয়া – মনোনয়ন
সংলাপ ও চরিত্র আজও দর্শকদের মনে
শক্তি কাপুর প্রমাণ করেছেন যে খলনায়ক এবং কমেডি—দুই ভূমিকাতেই সাফল্য অর্জন করা সম্ভব। তাঁর অভিনয় শৈলী, সংলাপ বলার ভঙ্গি এবং কমেডির প্রতিভা তাঁকে ভারতীয় সিনেমায় এক স্বতন্ত্র স্থান করে দিয়েছে। তাঁর সংলাপ এবং চরিত্রগুলি আজও দর্শকদের মনে জীবন্ত।
যখন আমরা ৩রা সেপ্টেম্বর শক্তি কাপুরের জন্মদিন পালন করি, তখন এটি শুধুমাত্র তাঁর জন্ম উদ্যাপন নয়। এই দিনটি তাঁর অসাধারণ অভিনয়, কমেডি এবং খলনায়কের ভূমিকায় তাঁর অবদান স্মরণ করার একটি উপলক্ষ। শক্তি কাপুর প্রমাণ করেছেন যে কঠোর পরিশ্রম, নিষ্ঠা এবং সৃজনশীলতার মাধ্যমে যেকোনো চ্যালেঞ্জ জয় করা যায়।