শশী থারুর রাহুল গান্ধীর ট্রাম্প-সম্পর্কিত বক্তব্যের সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করে বলেছেন যে ভারতের অর্থনীতি মৃত নয়, বরং বিকল্প এবং অংশীদারিত্বের সাথে এগিয়ে যাচ্ছে।
Shashi Tharoor: ভারতের অর্থনীতি নিয়ে সম্প্রতি রাজনৈতিক বাগ্বিতণ্ডা ও আন্তর্জাতিক মন্তব্যের মধ্যে কংগ্রেসের वरिष्ठ নেতা এবং সাংসদ শশী থারুর একটি ভিন্ন ও ভারসাম্যপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি পেশ করেছেন। যেখানে রাহুল গান্ধী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিতর্কিত বক্তব্যের সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন, সেখানে থারুর কেবল সেটি খারিজই করেননি, বরং ভারতের অর্থনৈতিক দিকনির্দেশ নিয়ে আশা ও সমাধান-ভিত্তিক একটি দৃষ্টিভঙ্গিও তুলে ধরেছেন।
ট্রাম্পের বক্তব্য এবং রাহুল গান্ধীর প্রতিক্রিয়া
ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি ভারত ও রাশিয়ার অর্থনীতিকে 'ডেড' অর্থাৎ মৃতপ্রায় বলেছিলেন। এই মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় রাহুল গান্ধী বলেন যে ট্রাম্প কোনো ভুল কথা বলেননি। তিনি ব্যঙ্গ করে বলেন, 'প্রধানমন্ত্রী মোদী ও অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন ছাড়া সবাই জানেন যে ভারতের অর্থনীতির কী অবস্থা।'
থারুরের জবাব: ভারতের অর্থনীতি মৃত নয়
শশী থারুর এই মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন যে ভারতের অর্থনীতি মৃতপ্রায় নয়, বরং এটি বিভিন্ন ক্ষেত্রে এগিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, 'আমাদের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চাপের কাছে নতি স্বীকার করার প্রয়োজন নেই। যদি আমেরিকার সাথে বাণিজ্য চুক্তি না হয়, তবে ভারতের কাছে ইউরোপ, ব্রিটেন এবং অন্যান্য দেশের সাথে বিকল্প অংশীদারিত্বের সুযোগ রয়েছে।' থারুর আরও স্পষ্ট করে জানান যে ভারত ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ব্রিটেন এবং অন্যান্য দেশের সাথে আলোচনা চালাচ্ছে এবং কিছু চুক্তি ইতিমধ্যেই হয়ে গেছে। তিনি বলেন, 'যদি আমেরিকান বাজার আমাদের জন্য সীমিত হয়ে যায়, তবে আমাদের বৈচিত্র্য এনে, উৎপাদন ক্ষমতা বাড়িয়ে, অন্যান্য বাজারে আমাদের পণ্য পৌঁছতে হবে।'
আমেরিকার অনুচিত চাপ
শশী থারুর বলেছেন যে আমেরিকা কর্তৃক ভারতের উপর ২৫% শুল্ক আরোপ এবং রাশিয়া থেকে তেল-গ্যাস কেনার উপর সম্ভাব্য ৩৫-১০০% পর্যন্ত জরিমানার আলোচনা উদ্বেগজনক। তিনি এটিকে আমেরিকান বাণিজ্য নীতির একতরফা দৃষ্টিভঙ্গি বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, 'যদি এই জরিমানা কার্যকর হয়, তবে এটি ভারত-আমেরিকা বাণিজ্য সম্পর্ককে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। তবে আমাদের জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করতে হবে।'
কংগ্রেসের মধ্যে মতভেদ, কিন্তু উদ্দেশ্য এক
থারুরের এই বক্তব্য ইঙ্গিত দেয় যে কংগ্রেস পার্টির মধ্যেও ভারতের অর্থনীতি ও বিদেশ নীতি নিয়ে মতভেদ রয়েছে। তবে, এই মতভেদের পেছনে উদ্দেশ্য হল ভারতের অর্থনৈতিক পরিস্থিতির উন্নতি ঘটানো। রাজ্যসভার সাংসদ রাজীব শুক্লাও ট্রাম্পের বক্তব্যকে ভিত্তিহীন বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, 'ভারতের অর্থনীতি স্থিতিশীল এবং শক্তিশালী। কোন দেশ ভারতের সাথে ব্যবসা করবে, তা কেউ ঠিক করে দিতে পারে না। আমরা কারও চাপে নতি স্বীকার করব না।'
প্রিয়াঙ্কা চতুর্বেদীর ট্রাম্পকে কটাক্ষ
শিবসেনা (ইউবিটি)-র সাংসদ প্রিয়াঙ্কা চতুর্বেদীও ট্রাম্পের বক্তব্যের সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেন যে 'এই ধরনের দাবি হয় অহংকার থেকে প্রসূত, নয়তো অজ্ঞতার পরিচায়ক।' তিনি আরও বলেন যে ভারতের অর্থনীতি নিয়ে এই ধরনের মন্তব্য ভারতীয় স্বার্থের পরিপন্থী এবং এর প্রতিবাদ করা উচিত।
ভারতের পথ: আত্মনির্ভরতা ও বিকল্প অংশীদারিত্ব
থারুর আরও বলেন যে ভারতের উচিত তার অর্থনৈতিক কৌশলে বৈচিত্র্য আনা। তিনি বলেন, 'আমরা কেবল একটি বাজারের উপর নির্ভর করতে পারি না। আমেরিকার পণ্য ভারতীয় বাজারে প্রতিযোগিতামূলক নয় এবং ভারতের গড় শুল্ক ১৭%, যা বিশ্ব মানের বিচারে বেশি নয়।'