স্কুলে কালো জাদু: ভালোবাসার উন্মাদনা ও কুসংস্কারের পরিণতি

স্কুলে কালো জাদু: ভালোবাসার উন্মাদনা ও কুসংস্কারের পরিণতি

এই গল্পটি একটি ছোট শহরের সরকারি স্কুলের, যেখানে সবকিছু স্বাভাবিকভাবে চলছিল। ছাত্ররা পড়াশোনায় ব্যস্ত ছিল, শিক্ষকেরা তাদের কাজে এবং ছেলেমেয়েদের দুষ্টুমি ছিল সাধারণ ঘটনা। কিন্তু এই স্কুলেই একটি অদ্ভুত ঘটনা সবার মনোযোগ আকর্ষণ করলো। একটি মেয়ে স্কুলেরই একটি ছেলেকে পছন্দ করতে শুরু করে এবং ধীরে ধীরে তাকে পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা এত বেড়ে যায় যে সে এমন কিছু করে বসে যা কেউ স্বপ্নেও ভাবেনি — কালো জাদু। 

আকর্ষণ থেকে উন্মাদনা: মেয়েটির বদলে যাওয়া চিন্তা

শুরুতে, মেয়েটি ছেলেটিকে ভালো লাগতে শুরু করে। সে তাকে দূর থেকে দেখত, তার আশেপাশে থাকার চেষ্টা করত, কিন্তু যখন ছেলেটি কোনো মনোযোগ দিল না, তখন সে মনে করল তাকে কিছু আলাদা করতে হবে। তার বান্ধবী মজা করে বলল, 'কালো জাদু দিয়ে সব সম্ভব।' মেয়েটি এটা সিরিয়াসলি নেয়। ধীরে ধীরে আকর্ষণ এক ধরনের উন্মাদনায় পরিণত হয় এবং সে ছেলেটিকে নিজের বশে আনার জন্য কালো জাদু করার পথ বেছে নেয়।

টোটকা-তাবিজের শুরু: যখন স্কুল হলো পরীক্ষাগার

মেয়েটি যখন অনুভব করলো যে ছেলেটি তার দিকে মনোযোগ দিচ্ছে না, তখন সে কিছু আলাদা করার কথা ভাবল। সে ইন্টারনেট এবং কিছু পরিচিতদের কাছ থেকে কালো জাদু সম্পর্কিত টোটকা শিখতে শুরু করে। এরপর সে ছেলেটির খাতা থেকে তার নাম এবং ছবি নেয়, এবং কোনোভাবে তার চুলও সংগ্রহ করে। স্কুলের একটি নির্জন কোণে সে লাল সুতো, লেবু এবং লঙ্কা-সহ নানান জিনিস নিয়ে টোটকা করতে শুরু করে। তার বিশ্বাস ছিল এই উপায়ে ছেলেটি তার প্রতি আকৃষ্ট হবে এবং তাকে ভালোবাসতে শুরু করবে, কিন্তু সে বুঝতে পারল না যে এই পথ ভুল।

ছেলেটির জীবনে অদ্ভুত পরিবর্তন

যখন মেয়েটি টোটকা শুরু করে, কিছুদিনের মধ্যেই ছেলেটির আচরণে পরিবর্তন দেখা যায়। সে আগের মতো হাসিখুশি ও মিশুক ছিল না, বরং প্রায়ই চুপচাপ ও ভীতু থাকত। সে বিনা কারণে চমকে উঠত এবং তার পড়াশোনাতেও মন বসছিল না। অনেক সময় রাতে তার অদ্ভুত ও ভয়ংকর স্বপ্ন আসত, যা দেখে সে ঘাবড়ে যেত। তার শিক্ষক এবং বাবা-মা মনে করলেন সে মানসিক চাপে ভুগছে বা কোনো রোগে আক্রান্ত, কিন্তু আসল কারণ ছিল অন্য কিছু — তার উপর কেউ কালো জাদু করেছে, যার কারণে তার জীবনে এই অদ্ভুত ঘটনাগুলো ঘটছিল।

বন্ধুদের সন্দেহ এবং সত্যের উন্মোচন

ছেলেটির কিছু ঘনিষ্ঠ বন্ধুর সন্দেহ হলো যে এসব স্বাভাবিক নয়। তারা স্কুলে তার আশেপাশে জিনিসপত্র লক্ষ করলো এবং একদিন স্কুলের পিছনে কিছু অদ্ভুত জিনিস খুঁজে পেল — লেবু, কলসি, চুল এবং কিছু মন্ত্র লেখা কাগজ। তারা তৎক্ষণাৎ এই বিষয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষকে জানায় এবং পরে একজন শিক্ষক মেয়েটিকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। প্রথমে সে ভয় পেয়ে যায়, কিন্তু পরে সে সবকিছু স্বীকার করে নেয় যে সে কালো জাদু করেছে।

ফলাফল এবং শিক্ষা: কালো জাদু সমাধান নয়

যখন সত্য সামনে এল, তখন স্কুলে হুলুস্থুল পড়ে যায়। মেয়েটিকে কাউন্সেলিং-এর জন্য পাঠানো হয় এবং তাকে বোঝানো হয় যে ভালোবাসা পাওয়ার জন্য, কাউকে নিজের বশে আনার জন্য জোর করা, প্রতারণা করা বা তন্ত্র-মন্ত্রের সাহায্য নেওয়া ভুল। ছেলেটিকেও মানসিক এবং আবেগিক সাহায্য দেওয়া হয় যাতে সে আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারে। এই ঘটনা থেকে স্কুলের অন্যান্য ছাত্রছাত্রীরাও শিক্ষা পেল যে কুসংস্কার ও ভুল পথে চললে কোনো সঠিক ফল পাওয়া যায় না।

সমাজে কালো জাদুর মানসিকতা

আজকের আধুনিক যুগেও, ভারতে অনেকে ভালোবাসা পাওয়ার জন্য, সফল হওয়ার জন্য বা কারও থেকে প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য কালো জাদু ও টোটকা-তাবিজের আশ্রয় নেয়। এই ধারণা, বিশেষ করে কিশোর বয়সীদের মধ্যে বেশি দেখা যায়, কারণ সেই সময়ে তাদের বোধ সম্পূর্ণরূপে বিকশিত হয় না। তারা টিভি, ইন্টারনেট বা অন্যদের কথায় প্রভাবিত হয়ে এমন কুসংস্কারের ওপর বিশ্বাস স্থাপন করে। তাই প্রয়োজন হলো বাবা-মা ও শিক্ষকদের শিশুদের সঠিক দিকনির্দেশনা দেওয়া এবং বোঝানো যে ভালোবাসা, সাফল্য এবং সম্পর্ক, পরিশ্রম, সততা ও ভালো আচরণের মাধ্যমেই টিকে থাকে। কালো জাদু কেবল ভয় ও ক্ষতির কারণ হয়, সমাধান নয়।

এই ঘটনা প্রমাণ করে দিয়েছে যে, যদি সঠিক সময়ে শিশুদের সঠিক দিকনির্দেশনা না দেওয়া হয়, তাহলে তারা ভুল পথে যেতে পারে। একটি মেয়ের নিষ্পাপ চাওয়া যখন কুসংস্কারে পরিণত হয়, তখন সে শুধু নিজেকেই বিপদে ফেলেনি, বরং অন্য একজন ছাত্রকে মানসিক উদ্বেগে ফেলেছিল। আমাদের বুঝতে হবে যে প্রেম, বন্ধুত্ব এবং সম্পর্ক বিশ্বাস, সম্মান ও উপলব্ধির দ্বারা গঠিত হয়, কোনো টোটকা বা তাবিজের দ্বারা নয়। আমাদের নতুন প্রজন্মকে কুসংস্কারের দিকে নয়, বিজ্ঞান ও সংবেদনশীলতার দিকে এগিয়ে যেতে উৎসাহিত করতে হবে।

Leave a comment