শ্রাবণ মাসে তীর্থযাত্রা: শিবের আশীর্বাদ লাভের উপায়

শ্রাবণ মাসে তীর্থযাত্রা: শিবের আশীর্বাদ লাভের উপায়

শ্রাবণ মাস শুরু হয়ে গেছে এবং সারা দেশ থেকে শিবভক্তদের ভিড় মন্দির, জ্যোতির্লিঙ্গ এবং তীর্থস্থানগুলির দিকে उमড়ছে। ভোলেবাবাকে প্রসন্ন করতে এই মাসে লক্ষ লক্ষ श्रद्धालु কাওাড় নিয়ে বের হন, রুদ্রাভিষেক করেন এবং বিশেষ করে তীর্থযাত্রার আয়োজন করেন। তবে এই ধর্মীয় যাত্রা সফল ও সার্থক করতে কিছু বিষয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। এই যাত্রা কেবল ছবি তোলা বা ঘোরার উপলক্ষ্য নয়, বরং আত্মশুদ্ধি এবং শিবতত্ত্বের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার মাধ্যম।

তীর্থযাত্রা বনাম পর্যটন যাত্রার পার্থক্য বুঝুন

যারা শিবালয় এবং জ্যোতির্লিঙ্গের দর্শনের জন্য বের হন, তাদের এই কথাটি বুঝতে হবে যে তীর্থযাত্রা, সাধারণ পর্যটন যাত্রা থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। ঘোরাঘুরির সময় মন ভালো লাগে, কিন্তু তীর্থযাত্রা আত্মাকে স্পর্শ করে।

তীর্থস্থানে গিয়ে সেলফি তোলা, বাজার থেকে কেনাকাটা করা বা খাদ্য অনুসন্ধানে এদিক-ওদিক ঘোরাঘুরি করা এই যাত্রার উদ্দেশ্যকে দুর্বল করে দেয়। তীর্থযাত্রার ভাব হলো – নিজের ভেতরের যাত্রা, আত্মার সঙ্গে সংযোগ, এবং ঈশ্বরের উপস্থিতি অনুভব করা।

শ্রাবণ মাসে রুদ্রাভিষেকের বিশেষ গুরুত্ব

পুরাণ ও শাস্ত্রে বলা হয়েছে – ‘রুদ্রাভিষেকং কুর্বীত মাসমাত্রং দিনে দিনে’। অর্থাৎ, শ্রাবণ মাসে যদি কোনো ব্যক্তি প্রতিদিন রুদ্রাভিষেক করেন, তবে তিনি শিবের বিশেষ কৃপা লাভ করেন। ভক্তদের এই মাসে সংযম রেখে নক্ত ব্রত (এক বেলা আহার) করা উচিত এবং প্রতিদিন ভগবান শিবের জলাভিষেক বা পঞ্চামৃত দিয়ে অভিষেক করা উচিত।

মৌন ব্রত ও মনের একাগ্রতা জরুরি

যারা দীর্ঘ তীর্থযাত্রায় বের হন, যেমন অমরনাথ, কেদারনাথ, কাশী বিশ্বনাথ বা মহাকাল, তাদের উচিত পুরো পথে মৌন থেকে, নাম-জপ করতে করতে এগিয়ে যাওয়া। বাইরের জগতের সঙ্গে কথা বলার পরিবর্তে নিজের মনের কথা শোনা উচিত। যতোটা সম্ভব, মোবাইল ফোনের ব্যবহার সীমিত করুন। মন ও আত্মার মধ্যে একটি সেতু তৈরি হোক – এটাই এই যাত্রার সার্থকতা হবে।

ভিআইপি হওয়ার মোহ ত্যাগ করুন

শ্রাবণে শিবালয় এবং বড় মন্দিরগুলিতে খুব ভিড় হয়। এমন পরিস্থিতিতে অনেকে দ্রুত দর্শনের জন্য ভিআইপি পাস বা আলাদা ব্যবস্থার চেষ্টা করেন। কিন্তু শাস্ত্রে ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে, ঈশ্বরের দরবারে সবাই সমান। ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়ানোর পর পাওয়া কয়েক সেকেন্ডের দর্শনই জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান মুহূর্ত হতে পারে।

সেই মুহূর্তগুলোকে মোবাইল ক্যামেরায় বন্দী করার চেষ্টা করবেন না, বরং নিজের মনে ধারণ করুন। চোখ বন্ধ করুন এবং সেই চিত্রটি স্মরণ করুন। এটাই ধ্যানাবস্থা, যেখানে আত্মা-পরমাত্মার মিলন হয়।

খাবার-দাবারের দিকে বিশেষ মনোযোগ দিন

শ্রাবণ মাসে এবং বিশেষ করে তীর্থযাত্রার সময় সাত্ত্বিক ও সীমিত আহার করা আবশ্যক। পেঁয়াজ, রসুন, মাংস, মদ্যপান-এর মতো জিনিস থেকে সম্পূর্ণ দূরত্ব বজায় রাখা উচিত। বেশি ভাজাভুজি ও বাইরের খাবার খেলে যাত্রাপথে আলস্য ও অসুস্থতা বাড়তে পারে, যা যাত্রার উদ্দেশ্যকে নষ্ট করতে পারে।

শিবকে সবার আগে রক্ষাকর্তা মনে করুন

অনেক শিবভক্ত তাদের তীর্থযাত্রা শুরু করেন ভগবানকে রাখি বাঁধার মাধ্যমে। এটি একটি প্রতীক যে যাত্রায় সবার আগে শিবই তাদের রক্ষাকর্তা হবেন। শ্রাবণের এই পবিত্র মাসে ভগবান শিবকে প্রথম প্রণাম এবং তাঁর নামের প্রথম উচ্চারণ, পুরো যাত্রাটিকে বিশেষ করে তোলে।

দর্শনের আগে মনকে শান্ত করুন

যখন আপনি কোনো মন্দির বা জ্যোতির্লিঙ্গের দর্শনের জন্য পৌঁছান, তখন সেখানকার ভিড় দেখে অস্থির হবেন না। দর্শনের তাড়াহুড়োয় মন অশান্ত হতে পারে। এর পরিবর্তে, যখন দর্শনের পালা আসবে, তখন শান্ত মনে সেই মুহূর্তটিকে নিজের মধ্যে ধারণ করুন। চোখ বন্ধ করে সেই দর্শনকে আপনার হৃদয়ে ধারণ করার চেষ্টা করুন। এমনটা করলে সেই রূপ আপনার ভেতরে চিরকালের জন্য মুদ্রিত হয়ে যাবে।

তীর্থযাত্রার পর ধ্যান ও সাধনা বাড়ান

যখন আপনি তীর্থযাত্রা থেকে ফিরবেন, তখন সেই শক্তি অনুভব করুন যা আপনি সেখানে পেয়েছেন। যদি সম্ভব হয়, তবে প্রতিদিন সকালে সেই দর্শনকে স্মরণ করে ধ্যান করুন। এটি আত্মিক শক্তিকে দীর্ঘকাল ধরে বজায় রাখে এবং যাত্রাটিকে ব্যর্থ হতে দেয় না।

শিবালয়গুলির যাত্রা আত্মার পরীক্ষা

শ্রাবণে করা শিব যাত্রা কেবল একটি ধর্মীয় কর্তব্য নয়, বরং আত্মার পরীক্ষা। এতে সংযম, নিয়ম ও ত্যাগের কষ্টিপাথরে উত্তীর্ণ হতে হয়। তবেই শিবের কৃপা লাভ করা যায়।

Leave a comment