ছোটবেলা থেকেই অভিনয়ের শখ আর চোখে বড় বড় স্বপ্ন নিয়ে এই মেয়েটি দারিদ্র্যের কারণে মাত্র ১৪ বছর বয়সে নিজের চেয়ে বড় এক মদ্যপ ব্যক্তির স্ত্রী হয়ে যায় এবং সংসারের দায়িত্বে জড়িয়ে পড়ে। স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে সে শ্বশুরবাড়ি থেকে পালিয়ে চেন্নাইয়ের পথ ধরে।
এন্টারটেইনমেন্ট নিউজ: সাউথ সিনেমার সবচেয়ে সাহসী এবং আলোড়ন সৃষ্টিকারী অভিনেত্রী সিল্ক স্মিতার আজ প্রয়াণ দিবস। তাঁর জীবনের গল্প কেবল গ্ল্যামার ও জনপ্রিয়তার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না, বরং এটি ছিল সংগ্রাম, বেদনা এবং রহস্যে ভরা। ছোটবেলা থেকেই অভিনয়ের প্রতি আগ্রহী সিল্ক স্মিতা মাত্র ৩৫ বছর বয়সে এমন সাফল্য অর্জন করেছিলেন, যা অনেক শিল্পী তাঁদের সারা জীবনেও পান না।
সিল্ক স্মিতার আসল নাম ছিল বিজয়লক্ষ্মী ভাদলাপতি। তাঁর জন্ম ১৯৬০ সালের ২ ডিসেম্বর অন্ধ্রপ্রদেশের এল্লুরুতে। দারিদ্র্যের কারণে তাঁর পড়াশোনা অসম্পূর্ণ থেকে যায় এবং তাঁর শৈশব খেলাধুলা ও পড়াশোনার বদলে গৃহস্থালীর কাজে অতিবাহিত হয়। ১৪ বছর বয়সেই তাঁর বিয়ে দেওয়া হয়েছিল, যার স্বামী ছিলেন মদ্যপ ও গার্হস্থ্য সহিংসতায় জড়িত। গার্হস্থ্য অত্যাচার ও শ্বশুরবাড়ির নিপীড়নে অতিষ্ঠ হয়ে সিল্ক স্মিতা শ্বশুরবাড়ি থেকে পালিয়ে চেন্নাই পৌঁছে যান।
মেকআপ আর্টিস্ট থেকে অভিনেত্রী পর্যন্ত
চেন্নাইয়ে তাঁর এক মাসির সাহায্যে সিল্ক স্মিতা সিনেমায় মেকআপ আর্টিস্ট হিসেবে কাজ শুরু করেন। অভিনেত্রীদের টাচআপের কাজ করার সময় তিনি ফিল্ম জগতের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করেন এবং ধীরে ধীরে ছোটখাটো রোল ও আইটেম নাম্বার পেতে শুরু করেন। যদিও এই সময়ে কিছু প্রযোজক তাঁর সুযোগ নিয়েছিলেন এবং সিল্ককে তাঁর কাজে সীমাবদ্ধ করে রেখেছিলেন।
সিল্ক স্মিতা প্রথম বড় সুযোগ পান ১৯৭৯ সালে অ্যান্টনি ইস্টম্যানের মালয়ালম চলচ্চিত্র ‘ইনায়ে থিডি’তে। যদিও ছবিটি মুক্তি পেয়েছিল ১৯৮১ সালে। তামিল সিনেমায় তাঁর পরিচয় হয় ‘বন্দিচাক্কারম’ (১৯৮০) ছবির মাধ্যমে। এতে তাঁর চরিত্রের নাম ছিল সিল্ক, যা তিনি নিজের নামের সাথে যুক্ত করে সিল্ক স্মিতা হয়ে ওঠেন।
সাউথ ইন্ডাস্ট্রির আলোড়ন সৃষ্টিকারী অভিনেত্রী
সিল্ক স্মিতার সাহসী দৃশ্য এবং ডান্স নাম্বারগুলি তাঁকে সাউথ ইন্ডাস্ট্রির সবচেয়ে আলোড়ন সৃষ্টিকারী অভিনেত্রীতে পরিণত করেছিল। তাঁর গান ছাড়া অনেক ছবি মুক্তি পেত না। তাঁর কাজের চাহিদা এতটাই বেড়ে গিয়েছিল যে প্রযোজক-পরিচালকরা তাঁকে যেকোনো ছবিতে অন্তত একটি গানের জন্য নেওয়াটা বাধ্যবাধকতা বলে মনে করতেন। সিল্ক তাঁর কর্মজীবনে কমল হাসান, রজনীকান্ত এবং চিরঞ্জীবীর মতো সুপারস্টারদের সাথে কাজ করেছেন। তাঁর ফিল্মি যাত্রায় তামিল, তেলুগু, কন্নড়, মালয়ালম এবং হিন্দি মিলিয়ে প্রায় ৪৫০টি ছবিতে তাঁর অবদান ছিল।
সিল্ক স্মিতা ফিল্মি জীবনে অর্থ ও খ্যাতি অর্জন করেছিলেন ঠিকই, কিন্তু তাঁর আশেপাশের মানুষজন—পরিবার, স্বামী, বন্ধু এবং কিছু প্রেমিক—সবাই তাঁর সুযোগ নিতে থাকলেন। তাঁর ব্যক্তিগত জীবন ছিল সংগ্রাম ও মানসিক চাপে পরিপূর্ণ। একসময় তাঁর ঘনিষ্ঠ এক বন্ধু তাঁকে প্রযোজক হওয়ার পরামর্শ দেন, কিন্তু তাঁর দুটি প্রযোজনা ফ্লপ হয়ে যায় এবং তাঁর প্রায় ২ কোটি টাকার ক্ষতি হয়। এই ক্ষতির প্রভাব তাঁর মানসিক স্বাস্থ্য এবং ব্যক্তিগত জীবনের ওপরও পড়েছিল।
সিল্ক স্মিতার ওপর নির্মিত চলচ্চিত্র
সিল্ক স্মিতার জীবন নিয়ে অনেক চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে। সবচেয়ে আলোচিত হলো ২০১১ সালের বিদ্যা বালান অভিনীত চলচ্চিত্র ‘দ্য ডার্টি পিকচার’, যা একতা কাপুর প্রযোজনা করেছিলেন। এছাড়াও কন্নড় ছবি ‘সিল্ক সাক্কাথ হট’ (২০১৩), মালয়ালম ছবি ‘ক্লাইম্যাক্স’ (২০১৩) এবং তামিল ছবি ‘মার্ক অ্যান্টনি’ (২০২৩)-এ তাঁর চরিত্রকে তুলে ধরা হয়েছে।
১৯৯৬ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর সিল্ক স্মিতার জীবনাবসান ঘটে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, তিনি নিজের বাড়িতে সিলিং ফ্যান থেকে ঝুলে আত্মহত্যা করেছিলেন। তবে তাঁর মৃত্যুকে ঘিরে আজও অনেক রহস্য রয়ে গেছে। বলা হয় যে, মৃত্যুর পরও তাঁর শরীরে কোনো পোশাক ছিল না, যা থেকে স্পষ্ট হয় যে ইন্ডাস্ট্রি এবং সমাজে তাঁকে কেবল কামুকতার প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছিল।