মধ্যপ্রদেশে স্মার্ট মিটার বিভ্রাট: অতিরিক্ত বিল নিয়ে গ্রাহকদের বিক্ষোভ

মধ্যপ্রদেশে স্মার্ট মিটার বিভ্রাট: অতিরিক্ত বিল নিয়ে গ্রাহকদের বিক্ষোভ

মধ্যপ্রদেশে বিদ্যুৎ বিভাগ দ্বারা স্থাপিত স্মার্ট মিটারগুলি এখন গ্রাহকদের জন্য স্বস্তি নয়, বরং উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। রাজ্যের বিভিন্ন জেলা থেকে এমন অভিযোগ আসছে, যেখানে গ্রাহকদের প্রকৃত ব্যবহারের থেকে কয়েকগুণ বেশি বিদ্যুতের বিল ধরানো হচ্ছে। ভোপাল, সিহোর এবং বুরহানপুরের মতো শহরগুলিতে গ্রাহকরা সমস্যায় পড়েছেন এবং বর্ধিত বিলের বিরুদ্ধে রাস্তায় বিক্ষোভ করছেন।

 বিল ১৫,০০০ পর্যন্ত—গ্রাহকদের ক্ষোভ

রাজ্যের অনেক অঞ্চলে গ্রাহকরা অভিযোগ করেছেন যে যেখানে আগে বিদ্যুতের বিল ২০০ থেকে ৫০০ টাকার মধ্যে আসত, এখন তা হঠাৎ করে ৫,০০০ থেকে ১৫,০০০ টাকা পর্যন্ত পৌঁছে গেছে। এমনকি দুটি কামরার সাধারণ বাড়িতেও এত বেশি বিল আসছে, যেখানে এসি বা কুলার কিছুই নেই।
ভোপালের নারকেলখেড়া এলাকায় সম্প্রতি স্মার্ট মিটার বসানো হয়েছে এবং এখানকার অনেক বাসিন্দা হঠাৎ করে বেড়ে যাওয়া বিল নিয়ে হতবাক। মানুষের অভিযোগ, মিটারের রিডিং প্রকৃত ব্যবহারের সঙ্গে মিলছে না।

এমন একটি ঘটনাও সামনে এসেছে যেখানে এক ব্যক্তির মায়ের মৃত্যু হয় এবং বিল পরিশোধে একদিন দেরি হওয়ায় বিভাগ তার বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। এতে অসন্তোষ আরও বেড়েছে।

বিক্ষোভ এবং লাইন

বিদ্যুৎ বিলের অস্বাভাবিক বৃদ্ধিতে রাজ্যজুড়ে প্রতিবাদ জোরালো হয়েছে। ভোপালে বিদ্যুৎ বিভাগের অফিসের বাইরে দীর্ঘ লাইন দেখা যাচ্ছে, যেখানে লোকেরা তাদের বিল সংশোধন করতে এসেছেন। অন্যদিকে, সিহোরে ক্ষুব্ধ গ্রাহকরা কালেক্টরের কার্যালয় ঘেরাও করে প্রতিবাদ জানিয়েছেন।

পরিস্থিতি এতটাই গুরুতর হয়ে উঠেছে যে অনেক জায়গায় নিরাপত্তা বাহিনীর তত্ত্বাবধানে স্মার্ট মিটার বসানো হচ্ছে, যাতে বিক্ষোভ দমন করা যায়। বুরহানপুরে মঙ্গলবার কংগ্রেস শহর বন্ধের ডাক দেয়, যার প্রভাব বাজারে স্পষ্ট দেখা গেছে। সাধারণ মানুষের অভিযোগ, স্মার্ট মিটার লাগানোর পর থেকে তাদের বিলগুলি অপ্রত্যাশিতভাবে বাড়ছে, যা সাধারণ মানুষের পকেটে সরাসরি প্রভাব ফেলছে।

১৮ লক্ষ স্মার্ট মিটার স্থাপন করা হয়েছে

বিদ্যুৎ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত রাজ্যে ১৮ লক্ষ স্মার্ট মিটার স্থাপন করা হয়েছে এবং বিভাগের লক্ষ্য হল ২০২৭ সালের মধ্যে ৫০ লক্ষ মিটার স্থাপন করা। বিভাগের দাবি, এই মিটারগুলি বিদ্যুৎ ব্যবহারের সঠিক তথ্য সরবরাহ করে এবং প্রযুক্তিগতভাবে আরও স্বচ্ছতা নিয়ে আসে।

তবে, ক্রমবর্ধমান অভিযোগের মধ্যে বিদ্যুৎ বিভাগের সিনিয়র পিআরও মনোজ দ্বিবেদী বলেছেন যে সাগর এবং বিদिशा-র মতো কিছু এলাকা থেকে অভিযোগ পাওয়া গেছে, যেগুলির সমাধান করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, অন্য কোনো এলাকা থেকে কোনো অভিযোগ এলে তার তদন্ত করা হবে এবং প্রয়োজন হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সরকারের মন্ত্রীও চিন্তিত

যখন এই বিষয়ে মোহন সরকারের মন্ত্রী লখন পটেলকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, তখন তিনি স্বীকার করেন যে তিনিও বিদ্যুতের বিলে গরমিলের অভিযোগ পাচ্ছেন। তিনি বলেন, বিল বাড়ানোর অভিযোগ আমার কাছেও এসেছে এবং আমি এর তদন্তের নির্দেশ দিয়েছি।

এখন যখন সরকারের মন্ত্রীও স্বীকার করছেন যে বিদ্যুতের বিলে গরমিল হচ্ছে, তখন বিদ্যুৎ বিভাগের জন্য এই অভিযোগগুলি গুরুত্ব সহকারে নিয়ে ব্যাপক ও নিরপেক্ষ তদন্ত করা জরুরি হয়ে পড়েছে। মানুষকে এই বিশ্বাস দিতে হবে যে স্মার্ট মিটার তাদের জন্য উপকারী, আর্থিক বোঝা নয়।

Leave a comment