পাকিস্তানের রাজনীতিতে নতুন মোড়: আসিম মুনির ও বিলাওয়াল ভুট্টোর সম্ভাব্য ভূমিকা

পাকিস্তানের রাজনীতিতে নতুন মোড়: আসিম মুনির ও বিলাওয়াল ভুট্টোর সম্ভাব্য ভূমিকা

পাকিস্থানে সেনা প্রধান আসিম মুনির এবং বিলাওয়াল ভুট্টো-র নতুন ভূমিকায় আসার জল্পনা তুঙ্গে। লাগাতার বৈঠক এবং বিবৃতিতে রাজনৈতিক চাঞ্চল্য বেড়েছে।

PAK News: পাকিস্থানের রাজনীতিতে আবার অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। সেনা প্রধান জেনারেল আসিম মুনিরের রাষ্ট্রপতি এবং বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারির প্রধানমন্ত্রী হওয়ার জল্পনা নতুন মোড় নিয়েছে। সম্প্রতি আসিম মুনিরের রাষ্ট্রপতি জারদারি এবং প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের সঙ্গে পরপর সাক্ষাতগুলি এই জল্পনাকে আরও জোরালো করেছে। যদিও, প্রধানমন্ত্রী শরিফ এই খবরগুলি সম্পূর্ণভাবে অস্বীকার করে গুজব বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। তা সত্ত্বেও, প্রতিরক্ষামন্ত্রী কিছু মন্তব্য রাজনৈতিক পরিবর্তনের সম্ভাবনাকে পুনরায় জাগিয়ে তুলেছে।

পাকিস্থানে ফের রাজনৈতিক অস্থিরতার আভাস

পাকিস্থানের রাজনীতিতে উত্থান-পতন নতুন কিছু নয়, তবে এবার যে ঘটনাগুলি সামনে এসেছে, তা অনেক প্রশ্ন তৈরি করেছে। মিডিয়া রিপোর্ট অনুযায়ী, পাকিস্থানে সেনা প্রধান আসিম মুনিরের রাষ্ট্রপতি হওয়ার এবং পাকিস্তান পিপলস পার্টির তরুণ নেতা বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারির প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আলোচনা জোরেশোরে চলছে।

জেনারেল আসিম মুনিরের দুটি গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষাৎ

পাকিস্থানের নামকরা মিডিয়া সংস্থা The Express Tribune-এর রিপোর্ট অনুসারে, কয়েক দিন আগে সেনা প্রধান ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনির প্রথমে রাষ্ট্রপতি আসিফ আলি জারদারির সঙ্গে দেখা করেন। এর পরেই তিনি প্রধানমন্ত্রী হাউসে যান, যেখানে তিনি প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের সঙ্গে আলোচনা করেন।

এই দুটি উচ্চ-পর্যায়ের বৈঠক রাজনৈতিক মহলে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, যদি এটি নিছক সাধারণ আলোচনা হত, তবে এটিকে এত গুরুত্ব দেওয়া হত না। কিন্তু যেভাবে এই দুটি সাক্ষাৎ একই দিনে হয়েছে, তা ক্ষমতা পরিবর্তনের জল্পনাকে আবারও উস্কে দিয়েছে।

রাষ্ট্রপতি পদের জন্য মুনিরের নাম কেন আলোচনায়?

পাকিস্থানে সেনাবাহিনীর রাজনীতিতে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ হস্তক্ষেপ কোনো গোপন বিষয় নয়। ইতিহাস সাক্ষী যে যখনই দেশে অস্থিরতা বেড়েছে, সেনাবাহিনী হয় সরাসরি ক্ষমতা দখল করেছে, অথবা পর্দার আড়াল থেকে সরকার তৈরি ও ভেঙেছে।

এই প্রেক্ষাপটে যখন আসিম মুনিরের রাষ্ট্রপতি হওয়ার কথা হয়, তখন তাকে এড়িয়ে যাওয়া যায় না। সূত্রানুসারে, যদি বর্তমান রাষ্ট্রপতি আসিফ আলি জারদারি পদত্যাগ করেন, তবে এই পথ সুগম হতে পারে।

প্রতিরক্ষামন্ত্রীর বক্তব্যে রাজনৈতিক উত্তাপ বৃদ্ধি

এই পুরো ঘটনাপ্রবাহে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক সামনে এসেছে। পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রীও সাম্প্রতিক সময়ে রাজনৈতিক পরিবর্তনের খবরকে খারিজ করেছেন, তবে একই সঙ্গে তিনি বলেছেন যে রাষ্ট্রপতি জারদারি যদি পদত্যাগ করেন, তবে নতুন বিকল্পগুলি বিবেচনা করা যেতে পারে।

প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের সাফাই

পাকিস্থানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ ১১ জুলাই মিডিয়াকে সম্বোধন করে এই জল্পনাগুলিকে গুজব বলে উড়িয়ে দেন। তিনি স্পষ্ট করে বলেন, “রাষ্ট্রপতি জারদারি পদত্যাগ করছেন না এবং জেনারেল আসিম মুনিরও রাষ্ট্রপতি হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেননি। এগুলো সবই মিডিয়ায় ছড়ানো মিথ্যা কথা।”

তবে শরিফের এই সাফাই সেইসব লোকেদের সন্তুষ্ট করতে পারেনি যারা মনে করেন যে পাকিস্থানের রাজনীতিতে আসল ক্ষমতা এখনও রাওয়ালপিন্ডির হাতে, ইসলামাবাদে বসা নির্বাচিত নেতাদের হাতে নয়।

বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি: পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী?

বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি, যিনি আগে বিদেশমন্ত্রী ছিলেন এবং বর্তমানে পাকিস্তান পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান, তাঁকেও নিয়ে জল্পনা চলছে। সূত্রানুসারে, যদি রাজনৈতিক সমীকরণ বদলায়, তবে তাঁকে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া যেতে পারে।

এটি জোট সরকারের মধ্যে চলা ক্ষমতার ভারসাম্যকে নতুন করে সংজ্ঞায়িত করতে পারে। যদিও বিলাওয়ালের পক্ষ থেকে এখনও পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো বিবৃতি পাওয়া যায়নি।

২৭তম সংবিধান সংশোধনের আলোচনা

মিডিয়া রিপোর্টে আরও বলা হচ্ছে যে, পাকিস্থানে খুব শীঘ্রই ২৭তম সংবিধান সংশোধনের প্রক্রিয়া শুরু হতে পারে। যদি এমনটা হয়, তবে এটি রাজনৈতিক ব্যবস্থায় বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়। সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতির ভূমিকা নতুন করে সংজ্ঞায়িত করা যেতে পারে অথবা এমন একটি নতুন রাজনৈতিক কাঠামো তৈরি করা যেতে পারে, যেখানে সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপ প্রাতিষ্ঠানিকভাবে বাড়বে।

Leave a comment