স্মার্টফোনগুলি আমাদের কথোপকথন শোনে না, বরং বিজ্ঞাপনগুলি ব্যবহারকারীর সার্চ হিস্টরি, লোকেশন এবং ব্রাউজিং ডেটার ভিত্তিতে দেখানো হয়। ভাইরাল ভিডিওর দাবিগুলি প্রযুক্তিগতভাবে প্রমাণিত হয়নি, সচেতন থাকা জরুরি।
Grok AI: আপনি কি কখনও লক্ষ্য করেছেন যে আপনি কোনও পণ্য, স্থান বা পরিষেবা সম্পর্কে আপনার বন্ধুর সাথে কথা বলেছেন এবং কিছুক্ষণের মধ্যেই সেই সম্পর্কিত বিজ্ঞাপনগুলি আপনার ফোনে দেখা যেতে শুরু করেছে? যদি হ্যাঁ, তবে আপনি একা নন। এই অভিজ্ঞতা লক্ষ লক্ষ স্মার্টফোন ব্যবহারকারীর হয়, যা একটি সাধারণ প্রশ্ন উত্থাপন করে - আমাদের ফোন কি আমাদের কথা শুনে আমাদের বিজ্ঞাপন দেখায়?
সম্প্রতি ইন্টারনেটে ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিও এই প্রশ্নটি আবার আলোচনায় এনেছে। তবে, স্মার্টফোনগুলি কি সত্যিই ব্যবহারকারীদের কথা শোনে?
ভাইরাল ভিডিও সন্দেহ বাড়িয়েছে
সম্প্রতি ইন্টারনেটে একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে যেখানে একজন পুলিশ অফিসার সন্দীপ যাদবকে লোকেদের এই পরামর্শ দিতে দেখা যায় যে, 'ফোন কলে কথা বলার সময় ইন্টারনেট বন্ধ করে দেওয়া উচিত কারণ কিছু অ্যাপ কল চলাকালীন আপনার কথা শুনতে পারে।' এই ভিডিওটি লক্ষ লক্ষ বার দেখা হয়েছে এবং এর ফলে অনেক ব্যবহারকারীর মনে ভয় তৈরি হয়েছে যে তাদের স্মার্টফোন তাদের বিরুদ্ধে গোপনে ব্যবহার করা যেতে পারে।
AI চ্যাটবট Grok-এর জবাব: 'ফোন শোনে না, ডেটা দেখায়'
ভাইরাল ভিডিওর জবাবে, একজন ব্যবহারকারী এআই চ্যাটবট Grok-কে প্রশ্ন করেন যে স্মার্টফোনগুলি কথোপকথন শুনে ব্যবহারকারীদের বিজ্ঞাপন দেখায় কিনা?
Grok-এর উত্তরটি ছিল অত্যন্ত আকর্ষণীয়। তার মতে, আজকের স্মার্টফোন এবং অ্যাপগুলি সাধারণত ব্যবহারকারীদের কথোপকথন রেকর্ড করে বিজ্ঞাপন দেখায় না। বরং, এই বিজ্ঞাপনগুলি ব্যবহারকারীর:
- সার্চ হিস্টরি
- লোকেশন ডেটা
- ব্রাউজিং প্যাটার্ন
- অ্যাপ ব্যবহারের আচরণ
এরকম ডিজিটাল কার্যকলাপের ভিত্তিতে টার্গেট করা হয়। এআই অ্যালগরিদম এই ডেটা পয়েন্টগুলি বুঝে অনুমান করে যে ব্যবহারকারীর কোন ধরনের বিজ্ঞাপন পছন্দ হতে পারে।
Apple এবং Google-ও অস্বীকার করেছে
Grok আরও যোগ করেছে যে প্রযুক্তি জায়ান্ট কোম্পানিগুলি, যেমন Apple এবং Google, আগেই এই বিষয়টি অস্বীকার করেছে যে তারা 'Active Listening' অর্থাৎ সক্রিয়ভাবে ব্যবহারকারীর কথা শোনার প্রক্রিয়া ব্যবহার করে।
Apple-এর মতে, তাদের ভয়েস অ্যাসিস্ট্যান্ট Siri তখনই সক্রিয় হয় যখন 'Hey Siri' বলা হয়, এবং একই প্রক্রিয়া Google Assistant-এর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। তা সত্ত্বেও, ব্যবহারকারীদের পরামর্শ দেওয়া হয় যে তারা তাদের স্মার্টফোনের মাইক্রোফোন পারমিশন সেটিংস সময়ে সময়ে অবশ্যই পরীক্ষা করে দেখুন।
Apteco গবেষণা: ব্যবহারকারীর অভ্যাসের উপর নজর রাখা হয়
সম্প্রতি, যুক্তরাজ্যের একটি ডেটা অ্যানালিটিক্স সংস্থা Apteco এই বিষয়ে একটি গবেষণা করেছে। গবেষণায় দেখা গেছে যে অনেক জনপ্রিয় অ্যাপ ব্যবহারকারীর প্রতিটি ডিজিটাল কার্যকলাপ ট্র্যাক করে এবং তাদের একটি প্রোফাইল তৈরি করে।
এই প্রোফাইলে ব্যবহারকারীর সার্চিং অভ্যাস, অ্যাপের ব্যবহার, ভিজিট করা ওয়েবসাইট, লোকেশন হিস্টরি এবং সোশ্যাল মিডিয়া ইন্টারঅ্যাকশন-এর মতো বিষয়গুলি অন্তর্ভুক্ত থাকে। এই তথ্যগুলির ভিত্তিতে, সংস্থাগুলি আপনাকে সেই জিনিসগুলি দেখাতে শুরু করে যা আপনার পছন্দ হতে পারে। তবে, এই গবেষণায় কথোপকথন শোনার কোনও সুস্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
তাহলে কেন মনে হয় যে ফোন আমাদের কথা শুনছে?
এই বিভ্রমের পিছনে বেশ কয়েকটি কারণ থাকতে পারে:
- কো-ইনসিডেন্স বা কাকতালীয় ঘটনা: যখন আমরা কোনও বিষয়ে আলোচনা করি এবং কিছুক্ষণের মধ্যেই সেই সম্পর্কিত বিজ্ঞাপন দেখি, তখন আমাদের মনে হয় এটি কাকতালীয় ঘটনা নয়, বরং নজরদারি।
- ডেটা অ্যালগরিদমের ক্ষমতা: আজকের বিজ্ঞাপনের অ্যালগরিদমগুলি এত উন্নত হয়েছে যে তারা কেবল কয়েকটি কার্যকলাপ দেখেই আমাদের আগ্রহের ধারণা করতে পারে।
- আগের সার্চের প্রভাব: হতে পারে আপনি আগে থেকেই সেই বিষয়ে কিছু সার্চ করেছেন এবং পরে সেই বিষয়ে আলোচনা করেছেন। বিজ্ঞাপনগুলি আপনার আগের সার্চের উপর ভিত্তি করে তৈরি হয়, আপনার সাম্প্রতিক কথোপকথনের উপর নয়।
ব্যবহারকারীর করণীয়?
যদিও কথোপকথন শোনার অভিযোগ সম্পূর্ণরূপে প্রমাণিত হয়নি, তবুও ব্যবহারকারীদের সতর্ক থাকা জরুরি। আপনি নীচে দেওয়া পদক্ষেপগুলি অনুসরণ করে আপনার গোপনীয়তাকে আরও কিছুটা সুরক্ষিত করতে পারেন:
- মোবাইলের Settings > Privacy > Microphone Access-এ গিয়ে দেখুন কোন অ্যাপগুলি মাইক্রোফোনের অনুমতি পেয়েছে
- অপ্রয়োজনীয় অ্যাপগুলির মাইক্রোফোন অ্যাক্সেস বন্ধ করুন
- সার্চ হিস্টরি এবং লোকেশন ডেটা সময়-সময় পরিষ্কার করুন
- ব্যক্তিগত ডেটা শেয়ার করার আগে অ্যাপগুলির গোপনীয়তা নীতি অবশ্যই পড়ুন