ফোন চুরি বা হারিয়ে গেলে প্রথমে কী করবেন? টেনশন নয়, মাথা ঠান্ডা রাখুন, বলছেন বিশেষজ্ঞরা

ফোন চুরি বা হারিয়ে গেলে প্রথমে কী করবেন? টেনশন নয়, মাথা ঠান্ডা রাখুন, বলছেন বিশেষজ্ঞরা

ফোন হারিয়ে গেলে বা চুরি হলে অনেকের প্রথম প্রতিক্রিয়া হয় হতাশা এবং আতঙ্ক। বিশেষত যদি ফোনের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিগত তথ্য, অফিসের ডকুমেন্ট, ব্যাংক অ্যাপ কিংবা সোশ্যাল মিডিয়ার লগইন করা থাকে, তাহলে ভয় আরও বাড়ে। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই সময় সবচেয়ে বড় অস্ত্র হল ‘ধৈর্য’ আর ‘ঠান্ডা মাথা’। প্রথমেই আত্মবিশ্বাস ধরে রাখুন। আতঙ্কিত না হয়ে দ্রুত সঠিক পদক্ষেপ নিলেই হারানো ফোন ফেরত পাওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই বাড়ে।

চমকপ্রদ তথ্য! ইতিমধ্যেই ৩৩ লক্ষেরও বেশি মোবাইল ফোন ব্লক করেছে ভারত সরকার

সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সারা দেশে এখন পর্যন্ত প্রায় ৩৩.৫ লক্ষ মোবাইল ফোন ব্লক করা হয়েছে Sanchar Saathi পোর্টালের মাধ্যমে। এর মধ্যে প্রায় ২০.২৮ লক্ষ ফোন ফিরে পাওয়া গিয়েছে। এই সাফল্য সাধারণ মানুষের মধ্যে আশার আলো জাগিয়েছে। আগের মতো এখন আর ফোন চুরি গেলে নিরাশ হওয়ার কারণ নেই। কারণ প্রযুক্তি ও প্রশাসন একযোগে কাজ করছে ফোন উদ্ধারের জন্য।

সঞ্চার সাথী পোর্টাল: ফোন উদ্ধারের ডিজিটাল সহায়ক

টেলিকম বিভাগের অধীনে C-DOT (Centre for Development of Telematics) তৈরি করেছে ‘Sanchar Saathi’ পোর্টাল। এই পোর্টালটি হারানো অথবা চুরি যাওয়া ফোন ট্র্যাক, ব্লক ও রিকভার করার কাজে অভূতপূর্ব ভূমিকা পালন করছে। এখানে Central Equipment Identity Register (CEIR)-এর মাধ্যমে দেশের সমস্ত মোবাইল ফোনের ইউনিক IMEI নম্বরের রেকর্ড রাখা হয়। সেখান থেকেই ফোনের অবস্থান ও ব্যবহার সম্পর্কিত আপডেট পাওয়া সম্ভব হচ্ছে।

সহজ কয়েকটি ধাপে হারানো ফোন ফিরে পাওয়ার উপায়! জেনে নিন এখনই

প্রথম ধাপ, নিজের টেলিকম অপারেটর (Jio, Airtel, Vi বা BSNL)-এর কাছ থেকে ডুপ্লিকেট সিম নেওয়া। কারণ পুরনো নম্বর চালু না থাকলে ফোন ট্রেস করা কঠিন।

দ্বিতীয় ধাপ, নিকটবর্তী থানায় গিয়ে একটি FIR বা সাধারণ ডায়েরি (GD) করতে হবে।

শুধু IMEI নয়! আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য লাগবে রেজিস্ট্রেশনের সময়

Sanchar Saathi পোর্টালে ফোন ব্লক করতে গেলে শুধুমাত্র IMEI নম্বর যথেষ্ট নয়। আপনাকে জানাতে হবে FIR বা GD নম্বর, আধার কার্ডের সঙ্গে যুক্ত ঠিকানা, বিকল্প যোগাযোগ নম্বর এবং যদি থাকে তাহলে কেনার ইনভয়েসের কপি। কারণ এসব তথ্য যাচাই করেই ফোন ব্লক বা ট্র্যাকের অনুমতি দেয় কর্তৃপক্ষ।

ফোন উদ্ধারে সাইবারক্রাইম টিম ও টেলিকম অপারেটররা একসঙ্গে মাঠে নামছে

একবার রেজিস্ট্রেশন হয়ে গেলে দেশের বিভিন্ন সাইবারক্রাইম ইউনিট এবং সংশ্লিষ্ট টেলিকম অপারেটরদের কাছে সেই তথ্য পৌঁছে যায়। তারা সঙ্গে সঙ্গে ফোন ট্রেসিং প্রক্রিয়া শুরু করে। ফোনের নতুন সিম চালু হলেই নেটওয়ার্কের মাধ্যমে লোকেশন ট্র্যাক করে রিপোর্ট পাঠায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

দ্রুত পদক্ষেপ নিন, দেরি করলে ফেরত পাওয়া কঠিন! বলছে বিশেষজ্ঞ সংস্থা C-DOT

বিশেষজ্ঞরা স্পষ্টভাবে সতর্ক করছেন—ফোন চুরি বা হারিয়ে গেলে সময়ই এখানে সবচেয়ে বড় ফ্যাক্টর। C-DOT-এর মতে, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ফোন হারানোর ঘটনা থানায় জানানো এবং Sanchar Saathi পোর্টালে রেজিস্ট্রেশন করাই একমাত্র উপায়। কারণ প্রযুক্তিগত দিক থেকে ফোন যত বেশি সময় অচিহ্নিত থাকবে, তত বেশি তা পাচার হওয়ার বা চোরেদের হাতে হার্ডওয়্যার পাল্টে ফেলার ঝুঁকি বেড়ে যায়।

চোরেরা অনেক সময় ফোনের IMEI নম্বর বদলে দেয় বা ফোন দেশের বাইরে পাচার করে দেয়। ফলে ট্র্যাক করাও প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। কিন্তু দ্রুত রিপোর্ট করলে দেশের সমস্ত টেলিকম অপারেটর এবং সাইবারক্রাইম ইউনিট একযোগে ফোনের খোঁজ শুরু করে। ফোন যেখানে-ই চালু হোক, তা সিগন্যালের মাধ্যমে ট্রেস করা সম্ভব হয়ে ওঠে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ‘প্রথম ২৪ ঘণ্টা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই সময়ের মধ্যে ফোন ব্লক ও ট্র্যাকিং প্রসেস শুরু করা গেলে, ফেরত পাওয়ার সম্ভাবনা অন্তত ৭০ শতাংশ বেড়ে যায়।’ তাই আর দেরি নয়। ফোন খোওয়া গেলেই সঙ্গে সঙ্গে থানায় অভিযোগ ও সঞ্চার সাথী পোর্টালে আবেদন করুন। ক্ষতির আগেই বাঁচার এটিই একমাত্র উপায়।

Leave a comment