বলিউড গায়িকা ও অভিনেত্রী সুলক্ষণা পণ্ডিতের জীবনাবসান, ৭১ বছর বয়সে থেমে গেল সুরের যাত্রা

বলিউড গায়িকা ও অভিনেত্রী সুলক্ষণা পণ্ডিতের জীবনাবসান, ৭১ বছর বয়সে থেমে গেল সুরের যাত্রা
সর্বশেষ আপডেট: 2 ঘণ্টা আগে

হিন্দি সিনেমার জনপ্রিয় গায়িকা ও অভিনেত্রী সুলক্ষণা পণ্ডিতের ৬ নভেম্বর ২০২৫ তারিখে জীবনাবসান হয়েছে। তাঁর বয়স হয়েছিল ৭১ বছর। তাঁর মৃত্যুর কারণ কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট বলে জানানো হয়েছে।

সুলক্ষণা পণ্ডিতের প্রয়াণ: বলিউডের জনপ্রিয় গায়িকা ও অভিনেত্রী সুলক্ষণা পণ্ডিতের ৬ নভেম্বর, ২০২৫ তারিখে জীবনাবসান হয়েছে। তাঁর বয়স হয়েছিল ৭১ বছর। তাঁর ভাই ও প্রখ্যাত সঙ্গীতজ্ঞ ললিত পণ্ডিত তাঁর প্রয়াণের খবর নিশ্চিত করেছেন। জানা গেছে যে, তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত (কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট) হয়ে মারা গেছেন। 

সুলক্ষণা দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ ছিলেন এবং বৃহস্পতিবার রাত আটটায় মুম্বাইয়ের নানাবতী হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁর প্রয়াণের খবরে বলিউড এবং সঙ্গীত জগতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

সুলক্ষণা পণ্ডিতের জন্ম ও পারিবারিক পটভূমি

সুলক্ষণা পণ্ডিতের জন্ম ১৯৫৪ সালের ১২ জুলাই ছত্তিশগড়ের রায়গড়ে হয়েছিল। তাঁর পরিবার সঙ্গীত ও শিল্পের সঙ্গে যুক্ত ছিল। তিনি মহান শাস্ত্রীয় গায়ক পণ্ডিত জসরাজের ভাইঝি ছিলেন এবং বলিউডের প্রখ্যাত সঙ্গীত পরিচালক জুটি যতীন-ললিতের বোনও ছিলেন। সঙ্গীত তাঁদের পরিবারে ঐতিহ্যের মতো প্রবাহিত ছিল এবং এই পরিবেশেই তিনি শৈশব থেকেই সঙ্গীতের শিক্ষা গ্রহণ করেন।

অভিনেত্রী হিসেবে সুলক্ষণা তাঁর কর্মজীবন শুরু করেন ১৯৭৫ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র 'উলझन' দিয়ে। এই ছবিতে তিনি কিংবদন্তি অভিনেতা সঞ্জীব কুমারের সঙ্গে কাজ করেছিলেন। এরপর তিনি বলিউডের অনেক হিট ছবিতে অভিনয় করেন, যার মধ্যে 'হেরা ফেরি', 'আপনাপন', 'খানদান', 'চেহরে পে চেহরা', 'ধরম কাঁটা' এবং 'ওয়াক্ত কি দিওয়ার' উল্লেখযোগ্য। তাঁর অভিনয় এবং পর্দায় সাবলীলতা তাঁকে সেই সময়ের অন্যতম সেরা অভিনেত্রীতে পরিণত করেছিল।

সঙ্গীত জীবন

সুলক্ষণা পণ্ডিতের সঙ্গীত জীবন অত্যন্ত প্রভাবশালী ছিল। তিনি মাত্র ৯ বছর বয়সে গান গাওয়া শুরু করেন এবং ১৯৬৭ সালে প্লেব্যাক সিংগিংয়ে আত্মপ্রকাশ করেন। তাঁর কণ্ঠের মাধুর্য এবং আবেগের গভীরতা তাঁকে দ্রুত পরিচিতি এনে দেয়। ১৯৭৫ সালে 'সংকল্প' ছবির 'তু হি সাগর হ্যায় তু হি কিনারা' গানটি তাঁর কর্মজীবনের একটি মাইলফলক প্রমাণিত হয়েছিল। এই গানের জন্য তিনি সেরা প্লেব্যাক সিঙ্গার হিসেবে ফিল্মফেয়ার পুরস্কারও লাভ করেন। এছাড়াও, তিনি ১৯৬৭ সালের ছবি 'তকদির'-এ লতা মঙ্গেশকরের সাথে 'সাত সমুন্দর পার' গানটি গেয়েছিলেন, যা অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়েছিল।

সুলক্ষণা বিভিন্ন ভাষায় তাঁর গায়কির জাদু ছড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি হিন্দি, বাংলা, মারাঠি, ওড়িয়া এবং গুজরাটি সহ একাধিক ভাষায় গান গেয়েছেন। তাঁর জনপ্রিয় গানগুলির মধ্যে 'পরদেসিয়া তেরে দেশ মেঁ', 'বেকরার দিল টুট গয়া', 'ইয়ে পেয়ার কিয়া হ্যায়' এবং 'সোনা রে তুঝে ক্যায়সে মিলুঁ' উল্লেখযোগ্য। তাঁর বহুমুখিতা এবং সঙ্গীতের প্রতি নিষ্ঠা তাঁকে সেই সময়ের সবচেয়ে বহুমুখী প্লেব্যাক সিঙ্গার হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করেছিল।

সুলক্ষণা পণ্ডিত কেবল একজন গায়িকা ছিলেন না, তিনি এমন একজন শিল্পী ছিলেন যিনি অভিনয় এবং সুরের এক অসাধারণ সংমিশ্রণ উপস্থাপন করেছিলেন। সঙ্গীত ও চলচ্চিত্র জগৎ উভয় ক্ষেত্রেই তাঁর অবদান অমূল্য। তিনি ছিলেন এক অনুপ্রেরণাদায়ী ব্যক্তিত্ব, যাঁর গান আজও সঙ্গীতপ্রেমীদের হৃদয়ে অনুরণিত হয়। তাঁর প্রয়াণে কেবল পরিবারই নয়, সমগ্র ভারতীয় চলচ্চিত্র ও সঙ্গীত শিল্পের এক অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে।

 

Leave a comment