হিমন্ত শর্মাকে জেলে পাঠানোর চ্যালেঞ্জ রাহুলের: ২০২৬-এর নির্বাচনে রাজনৈতিক উত্তাপ

হিমন্ত শর্মাকে জেলে পাঠানোর চ্যালেঞ্জ রাহুলের: ২০২৬-এর নির্বাচনে রাজনৈতিক উত্তাপ

অসমে মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত শর্মাকে জেলে পাঠানোর চ্যালেঞ্জ জানালেন রাহুল গান্ধী। কংগ্রেস সভাপতি খাড়গেও কড়া মনোভাব দেখিয়েছেন। এতে ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের রাজনৈতিক সুর স্পষ্ট হতে দেখা যাচ্ছে।

Assam Assembly Election 2026: অসমে আগামী বছর অনুষ্ঠিত হতে চলা বিধানসভা নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক তৎপরতা তুঙ্গে। কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী এবং মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মার মধ্যে পুরনো রাজনৈতিক শত্রুতা এখন প্রকাশ্যে এসেছে। দুই নেতাই একে অপরকে জেলে পাঠানোর খোলা চ্যালেঞ্জ জানিয়েছেন। এর থেকে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে যে এবারের অসম নির্বাচন অত্যন্ত আক্রমণাত্মক এবং ব্যক্তিগত অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগের মধ্যে ঘুরপাক খাবে।

'জেলে পাঠানোর' চ্যালেঞ্জ থেকে শুরু নতুন রাজনৈতিক লড়াই

২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে রাহুল গান্ধীর 'ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা' চলাকালীন অসমে পুলিশ এবং কংগ্রেস কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এরপর মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত রাহুল গান্ধীর বিরুদ্ধে FIR দায়ের করার এবং লোকসভা নির্বাচনের পর তাঁকে জেলে পাঠানোর কথা বলেছিলেন। এবার দেড় বছর পর রাহুল গান্ধী পাল্টা আক্রমণ করে বলেন যে কংগ্রেস সরকার গঠিত হলে হিমন্ত বিশ্ব শর্মাকে জেলে পাঠানো হবে।

রাহুল ও খাড়গের অসম সফর

সম্প্রতি রাহুল গান্ধী এবং কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে অসম সফর করেন। এই সময় তাঁরা কংগ্রেস কর্মীদের সঙ্গে বৈঠক করে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের রোডম্যাপ তৈরি করেন। ছায়গাঁওয়ে আয়োজিত জনসভায় রাহুল গান্ধী বলেন, মুখ্যমন্ত্রী নিজেকে রাজা মনে করেন, কিন্তু শীঘ্রই তিনি জেলে যাবেন। তিনি মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তকে দেশের সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত মুখ্যমন্ত্রী বলে অভিহিত করেন।

কংগ্রেসের নির্বাচনী এজেন্ডা: দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের ওপর আক্রমণ

রাহুল গান্ধী এবং খাড়গে দুজনেই স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে কংগ্রেস এই নির্বাচনে দুর্নীতির ইস্যুকে প্রধান গুরুত্ব দেবে। কংগ্রেসের অভিযোগ, হিমন্ত এবং তাঁর পরিবার দুর্নীতিতে জড়িত এবং রাজ্যের সম্পত্তির অপব্যবহার করছেন। রাহুল বলেন, বিজেপি সরকার অসমের জমি এবং সম্পত্তি শিল্পপতিদের হাতে তুলে দিচ্ছে। একইসঙ্গে খাড়গেও অভিযোগ করেন যে রাজ্যে গণতন্ত্র দুর্বল হয়ে পড়েছে এবং ক্ষমতার অপব্যবহার হচ্ছে।

হিমন্তের পাল্টা আক্রমণ: রাহুল নিজেই জামিনে মুক্ত

রাহুল গান্ধীর মন্তব্যের তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা। তিনি বলেন, রাহুল গান্ধী নিজে ৫০০০ কোটি টাকার বেশি ন্যাশনাল হেরাল্ড কেলেঙ্কারিতে জামিনে মুক্ত। তিনি রাহুলকে দেশের সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত নেতাদের মধ্যে একজন বলে উল্লেখ করেন। এই বক্তব্য রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে আরও উত্তপ্ত করার ইঙ্গিত দেয়।

গৌরব গগৈয়ের নেতৃত্বে কংগ্রেসের নতুন মিশন

কংগ্রেস সম্প্রতি গৌরব গগৈকে প্রদেশ সভাপতি করেছে। তিনি ক্রমাগত হিমন্ত বিশ্ব শর্মা এবং তাঁর স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও জমি দখলের মতো গুরুতর অভিযোগ করে আসছেন। রাহুল গান্ধী এবং খাড়গের সফর থেকে এটা স্পষ্ট যে কংগ্রেস এখন পুরো আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বিজেপির সবচেয়ে বড় মুখকে নির্বাচনে হারানোর কৌশল তৈরি করছে।

কংগ্রেসের রণনীতি: আক্রমণাত্মক প্রচার এবং কর্মী सशक्तिकরণ

ছায়গাঁওয়ের সভায় রাহুল গান্ধী কর্মীদের দলের মেরুদণ্ড আখ্যা দিয়ে তাঁদের সিংহ ও সিংহী বলেছেন। তিনি আরও বলেন যে কংগ্রেস একটি নতুন দল তৈরি করেছে এবং জমিতে কাজ শুরু হয়ে গেছে। এর মাধ্যমে রাহুল কর্মীদের মনোবল বাড়ানোর চেষ্টা করেছেন, যা বিগত বছরগুলোতে ক্ষমতার বাইরে থাকার কারণে দুর্বল হয়ে গিয়েছিল।

অসমে কংগ্রেসকে প্রত্যাবর্তনের সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে

বর্ষীয়ান সাংবাদিকদের মতে, অসমে বিজেপির প্রভাব এখন আর ততটা শক্তিশালী নেই, যতটা ২০১৬ এবং ২০২১ সালের নির্বাচনে ছিল। বদরুদ্দিন আজমলের দলের মুসলিম ভোটের ওপর দখল দুর্বল হয়েছে এবং বিরোধী ঐক্যের সুবিধা কংগ্রেস পেতে পারে। এই কারণেই কংগ্রেস এখন হিমন্তের বিরুদ্ধে সরাসরি এবং আক্রমণাত্মক প্রচার চালাচ্ছে।

রাহুল-হিমন্তের পুরনো রাজনৈতিক শত্রুতার নির্বাচনী প্রভাব

হিমন্ত বিশ্ব শর্মা কংগ্রেস ছাড়ার পর বহুবার রাহুল গান্ধীর ওপর ব্যক্তিগত আক্রমণ করেছেন। তিনি এটাও বলেছেন যে কংগ্রেসে তাঁকে মুখ্যমন্ত্রী না করার কারণ ছিলেন রাহুল গান্ধী। অন্যদিকে, রাহুল গান্ধী এখন প্রকাশ্যে হিমন্তের বিরুদ্ধে কথা বলেন। ২০২৪ সালের 'ভারত জোড়ো যাত্রা'র সময়ও রাহুল প্রতিটি মঞ্চ থেকে তাঁকে 'দেশের সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত মুখ্যমন্ত্রী' বলেছিলেন।

Leave a comment