বিহারের ভোটার তালিকা যাচাইকরণ: ওয়াইসির মুসলিমদের পাসপোর্ট তৈরির আবেদন

বিহারের ভোটার তালিকা যাচাইকরণ: ওয়াইসির মুসলিমদের পাসপোর্ট তৈরির আবেদন

বিহারে ভোটার তালিকা যাচাইকরণ নিয়ে রাজনীতি তুঙ্গে। এআইএমআইএম প্রধান ওয়াইসি মুসলিমদের পাসপোর্ট ও জন্ম প্রমাণপত্র তৈরি করার আবেদন জানিয়েছেন। তিনি এটিকে পিছনের দরজা দিয়ে এনআরসি বলেছেন।

Bihar Voter List News: বিহার বিধানসভা নির্বাচনের আগে ভোটার তালিকা যাচাইকরণের প্রক্রিয়া রাজনৈতিক চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। নির্বাচন কমিশন কর্তৃক পরিচালিত এই অভিযান নিয়ে বিরোধী দলগুলো উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। রাষ্ট্রীয় জনতা দলের রাজ্যসভার সাংসদ মনোজ ঝা এই বিষয়টি সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত নিয়ে গেছেন। তাঁর অভিযোগ, এই প্রক্রিয়া অসাংবিধানিক এবং এর ফলে লক্ষ লক্ষ মানুষের নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ যেতে পারে।

ওয়াইসির মুসলিম সম্প্রদায়ের কাছে আবেদন

এর মধ্যে এআইএমআইএম প্রধান আসাদউদ্দিন ওয়াইসি মুসলিম সম্প্রদায়ের লোকেদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, মানুষ যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তাদের পাসপোর্ট এবং জন্ম প্রমাণপত্র বানিয়ে নিক। তেলেঙ্গানার গোধানে একটি সভায় ভাষণ দেওয়ার সময় তিনি বলেন, যদি কারও নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ যায়, তাহলে সরকারের কাছে প্রশ্ন করার অধিকার থাকবে না। ওয়াইসি কেন্দ্র সরকারের সমালোচনা করে বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী যদি সবচেয়ে বেশি খুশি হন তবে তা হল মুসলিম সম্প্রদায়ের নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ গেলে।

পিঙ্ক টিকিটের মতো বিষয় নয়, এটি নাগরিকত্বের সঙ্গে জড়িত: ওয়াইসি

ওয়াইসি বলেন, এটি শুধু নির্বাচনী বিষয় নয়, এটি সরাসরি নাগরিকত্বের সঙ্গে জড়িত একটি বিষয়। তিনি জনগণকে সতর্ক করে বলেন যে এই ভোটার তালিকা যাচাইকরণ 'ব্যাকডোর এনআরসি'ও হতে পারে। তাঁর ধারণা, এই প্রক্রিয়া নাগরিকত্ব প্রমাণ করার একটি নতুন উপায় হতে পারে, যা সংবিধানের মূল কাঠামোর বিরোধী।

নির্বাচন কমিশনের অধিকার নিয়ে প্রশ্ন

ওয়াইসি নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনের নাগরিকত্ব নির্ধারণ করার অধিকার নেই। এই অধিকার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে আছে। তিনি বুঝিয়ে বলেন, কোনও নাগরিকের নাগরিকত্ব নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা নিয়ে থাকেন, যার মধ্যে এসপি বর্ডার, মন্ত্রণালয়ের তিনজন কর্মকর্তা এবং সবশেষে ফরেনার্স ট্রাইবুনাল অন্তর্ভুক্ত থাকেন।

৭১ লক্ষ ভোটারের উপর সংকট

গণমাধ্যম সূত্রে খবর, প্রায় ৭১ লক্ষেরও বেশি ভোটারের নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ যেতে পারে। নির্বাচন কমিশনের মতে, রাজ্যে প্রায় সাত কোটি ভোটার নিবন্ধিত আছেন, কিন্তু এদের মধ্যে ৯.০২ শতাংশ ভোটারের সম্পর্কে কোনো সঠিক তথ্য পাওয়া যায়নি। এই পরিস্থিতি আসন্ন নির্বাচনে বড় ধরনের নির্বাচনী বৈষম্যের কারণ হতে পারে।

ভোটার তালিকা যাচাইকরণের প্রক্রিয়া

রাজ্য জুড়ে চলা এই প্রক্রিয়ায় প্রত্যেক ভোটারকে তাদের পরিচয়পত্র, ঠিকানা এবং জন্ম তারিখ সম্পর্কিত তথ্য সরবরাহ করতে হচ্ছে। যাদের কাগজপত্র সম্পূর্ণ নেই, অথবা যাদের তথ্যে কোনো ভুল আছে, তাদের নাম কাটার সম্ভাবনা রয়েছে। নির্বাচন কমিশনের বক্তব্য, এই পদক্ষেপ স্বচ্ছতা এবং নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করার জন্য নেওয়া হয়েছে, কিন্তু বিরোধী দল এটিকে নাগরিকত্বের অধিকারের উপর হামলা হিসেবে দেখছে।

ডিজিটাল নথিপত্রের গুরুত্ব

ওয়াইসি বলেন, এখন সময় এসেছে মানুষ তাদের নথি ডিজিটাল রূপে সুরক্ষিত রাখুক। তিনি 'ডিজিটাল ইন্ডিয়া'র কথা উল্লেখ করে বলেন, যদি আপনার কাছে ডিজিটাল পাসপোর্ট, আধার কার্ড এবং জন্ম প্রমাণপত্র না থাকে, তাহলে ভবিষ্যতে সমস্যা হতে পারে। তিনি আরও বলেন যে পাসপোর্ট তৈরি করা এখন শুধু বিদেশ ভ্রমণের প্রয়োজন নয়, বরং নিজের পরিচয় প্রমাণ করার মাধ্যমও হয়ে উঠেছে।

Leave a comment