প্ল্যাটফর্ম ফি-তে নতুন বৃদ্ধি, গ্রাহকদের কপালে চিন্তা
উৎসবের মরশুম ঘনিয়ে আসতেই গ্রাহকদের জন্য আবারও বাড়তি খরচের বোঝা। অনলাইন ফুড ডেলিভারির অন্যতম বড় সংস্থা Swiggy ঘোষণা করেছে, প্ল্যাটফর্ম ফি বাড়িয়ে ১৫ টাকা করা হলো। গ্রাহকরা বলছেন, প্রতিবার অর্ডারের সঙ্গে যুক্ত এই বাড়তি খরচ ধীরে ধীরে বড় অঙ্কের চাপ তৈরি করছে।
জ়োম্যাটোর পথে হাঁটল Swiggy
মঙ্গলবারই Swiggy-র প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী Zomato প্ল্যাটফর্ম ফি ১০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১২ টাকা করেছিল। তার ২৪ ঘণ্টা কাটতে না কাটতেই Swiggy-ও ফি বাড়িয়ে দিল। এ নিয়ে ফের বাজারে প্রতিযোগিতা নিয়ে নতুন আলোচনা শুরু হয়েছে। ব্যবসায়িক মহলের একাংশ মনে করছে, উৎসবের মরশুমে বাড়তি চাহিদা সামলাতে উভয় সংস্থাই বাড়তি রাজস্ব তুলতে চাইছে।
আগে ছিল ১২ টাকা, তারপর বেড়ে হলো ১৪ টাকা
গ্রাহকদের জন্য প্ল্যাটফর্ম ফি কোনো নতুন বিষয় নয়। চলতি বছরের ১৪ অগস্ট পর্যন্ত Swiggy প্রতিটি অর্ডারে ১২ টাকা নিত। পরে তা বাড়িয়ে ১৪ টাকা করা হয়েছিল। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তা আরও এক ধাপ বেড়ে দাঁড়াল ১৫ টাকা।
শহরভেদে ভিন্ন ফি, গ্রাহকদের প্রশ্ন
Swiggy জানিয়েছে, সব শহরে এক রকম নয় এই চার্জ। যেখানে অর্ডারের চাপ বেশি, সেখানে ফি তুলনামূলক বেশি ধার্য করা হবে। অর্থাৎ চাহিদা এবং লোকেশন অনুযায়ী ফি পরিবর্তিত হবে। এতে ছোট শহরের তুলনায় মহানগরে বসবাসকারী গ্রাহকদের কপালে বাড়তি চাপ পড়ছে।
ফি-এর সঙ্গে যুক্ত নয় জিএসটি
গ্রাহকদের আরও হতাশ করেছে এই তথ্য যে, প্ল্যাটফর্ম ফি-এর উপরও GST যুক্ত হয় না। ফলে চূড়ান্ত বিল আরও বেড়ে যায়। অনলাইন খাবার অর্ডারকারীরা সোশ্যাল মিডিয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন—"খাবারের দাম, ডেলিভারি চার্জ, টিপসের পর এবার প্ল্যাটফর্ম ফি-ও দিনে দিনে বাড়ছে, তাহলে সাধারণ ক্রেতার অবস্থা কী হবে?"
২০২৩ সালে শুরু হয়েছিল Swiggy-র প্ল্যাটফর্ম ফি
ইতিহাস ঘেঁটে দেখা যাচ্ছে, ২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে প্রথমবার Swiggy প্ল্যাটফর্ম ফি চালু করে। তখন প্রতিটি অর্ডারে মাত্র ২ টাকা ধার্য করা হয়েছিল। ক্রমশ তা বাড়তে বাড়তে আজ ১৫ টাকা ছুঁয়েছে। অনেকেই বলছেন, শুরুতে নামমাত্র চার্জ দিয়ে গ্রাহকদের অভ্যস্ত করানো হয়েছিল, পরে ধীরে ধীরে তা বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
জ়োম্যাটোও হাঁটছে একই পথে
Swiggy-র পদক্ষেপের কিছুদিন পরেই Zomato-ও প্ল্যাটফর্ম ফি চালু করে। বর্তমানে Zomato-র ফি দাঁড়িয়েছে ১২ টাকা। তবে বাজার বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, Swiggy-র মতো তারাও আগামী মাসগুলিতে আবারও ফি বাড়াতে পারে।
উৎসবের মরশুমেই কেন বাড়ানো হলো ফি?
প্রশ্ন উঠছে, বছরের এই সময়ে কেন হঠাৎ প্ল্যাটফর্ম ফি বাড়ানো হলো? বিশ্লেষকরা বলছেন, দুর্গাপুজো, দীপাবলি, বড়দিন থেকে শুরু করে নিউ ইয়ার—সব মিলিয়ে পরবর্তী কয়েক মাসে ফুড ডেলিভারির অর্ডার সর্বাধিক হয়। তাই এই সময়েই বাড়তি ফি বসিয়ে সংস্থাগুলি রাজস্ব সর্বাধিক করার চেষ্টা করছে।
সাধারণ গ্রাহকের উপর চাপ বাড়ছে
অর্ডার করা খাবারের দাম তো আছেই, তার সঙ্গে ডেলিভারি চার্জ, টিপস এবং এখন এই প্ল্যাটফর্ম ফি। সব মিলিয়ে সাধারণ গ্রাহকদের উপর মাসিক খাবারের খরচ অনেকটাই বেড়ে যাচ্ছে। অনেকে এখন অনলাইনের পরিবর্তে সরাসরি রেস্তরাঁয় গিয়ে খাবার কিনতে আগ্রহী হচ্ছেন।
সামাজিক মাধ্যমে তীব্র সমালোচনা
Swiggy ও Zomato—দু’টি সংস্থাকেই নেটিজেনরা কড়া সমালোচনা করেছেন। অনেকের বক্তব্য, এই সংস্থাগুলি ক্রমশ গ্রাহকদের থেকে বাড়তি অর্থ আদায় করছে, অথচ ডেলিভারি বয়দের মজুরি বৃদ্ধির বিষয়ে তেমন উদ্যোগ দেখা যায় না। আবার কেউ কেউ বলছেন, প্ল্যাটফর্ম ফি-এর অজুহাতে কোম্পানিগুলি নিজেদের মুনাফা বাড়াচ্ছে।
প্রতিযোগিতার বাজারে টিকে থাকতে বাধ্য গ্রাহকরা
ফুড ডেলিভারি বাজারে মূলত Swiggy আর Zomato-র একচেটিয়া আধিপত্য। তাই বিকল্প কম। এর ফলে গ্রাহকরা অনিচ্ছা সত্ত্বেও এই বাড়তি ফি মেনে নিচ্ছেন। অর্থনীতিবিদদের মতে, সঠিক প্রতিযোগিতা না থাকায় এ ধরনের সংস্থা চাইলে নিজেদের মতো করে চার্জ বাড়াতে পারছে।
সামনে আরও বাড়ার আশঙ্কা
শিল্প বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এটাই শেষ নয়। আগামী বছর আরও একবার প্ল্যাটফর্ম ফি বাড়তে পারে। কারণ খরচ মেটানো এবং মুনাফা বজায় রাখতে এই সংস্থাগুলির অন্য উপায় নেই। ফলে গ্রাহকদের এখন থেকেই প্রস্তুত থাকতে হবে আরও বড় খরচের জন্য।