টাটা ক্যাপিটালের আইপিও: বিনিয়োগকারীদের জন্য নতুন সুযোগ

টাটা ক্যাপিটালের আইপিও: বিনিয়োগকারীদের জন্য নতুন সুযোগ

শেয়ার বাজারে অস্থিরতার মধ্যে বিনিয়োগকারীদের নজর এখন টাটা গ্রুপের নন-ব্যাংকিং ফিনান্স কোম্পানি টাটা ক্যাপিটালের দিকে। আসলে, টাটা ক্যাপিটাল তাদের পাবলিক অফার অর্থাৎ IPO আনার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। এর জন্য, কোম্পানিটি বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা সেবি (SEBI)-এর কাছে তাদের নথি জমা দিয়েছে।

এর আগে এপ্রিল ২০২৫-এ কোম্পানিটি গোপনে নথি দাখিল করেছিল। এখন জুলাই মাসে সেবির অনুমোদন পাওয়ার পরে টাটা ক্যাপিটাল আপডেটেড DRHP জমা দিয়েছে। কোম্পানির পরিকল্পনা শেয়ার বাজার থেকে প্রায় ২ বিলিয়ন ডলার অর্থাৎ প্রায় ১৬,৮০০ কোটি টাকা সংগ্রহ করা।

কতগুলি শেয়ার ইস্যু করা হবে, কে বিক্রি করবে

টাটা ক্যাপিটালের এই পাবলিক ইস্যুতে মোট ৪৭.৫৮ কোটি শেয়ার অফার করা হবে। এর মধ্যে ২১ কোটি নতুন ইকুইটি শেয়ার থাকবে যা কোম্পানি নিজেই ইস্যু করবে। এছাড়াও ২৬.৫৮ কোটি শেয়ার অফার ফর সেল (OFS)-এর অধীনে বিক্রি করা হবে।

OFS-এর মাধ্যমে টাটা সন্স তাদের অংশ থেকে ২৩ কোটি শেয়ার বিক্রি করবে। একই সময়ে, ইন্টারন্যাশনাল ফিনান্স কর্পোরেশন (IFC)-ও তাদের অংশ থেকে ৩.৫৮ কোটি শেয়ার বাজারে ছাড়বে। অর্থাৎ, সব মিলিয়ে কোম্পানির বড় অংশ এখন সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য উপলব্ধ হতে চলেছে।

কোম্পানির ভ্যালুয়েশন এবং আইপিও-র আকার

সূত্রের খবর অনুযায়ী, টাটা ক্যাপিটালের ভ্যালুয়েশন এই ইস্যুর মাধ্যমে প্রায় ১১ বিলিয়ন ডলার অর্থাৎ ৯২,৪০০ কোটি টাকা পর্যন্ত পৌঁছতে পারে। সবকিছু পরিকল্পনা অনুযায়ী চললে এটি টাটা গ্রুপের সবচেয়ে বড় আর্থিক ইউনিটগুলির মধ্যে একটি হিসেবে উঠে আসবে। ১৬,৮০০ কোটি টাকার এই ইস্যুর সাথে কোম্পানি বাজারে একটি শক্তিশালী উপস্থিতি তৈরি করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এই ইস্যু আগামী সপ্তাহগুলোতে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আলোড়ন সৃষ্টি করতে পারে, বিশেষ করে যখন বাজারে অস্থিরতা বজায় রয়েছে।

টাটা ক্যাপিটাল স্পষ্ট করে দিয়েছে যে তারা এই IPO থেকে যে পুঁজি সংগ্রহ করবে, তা তাদের Tier-1 ক্যাপিটাল বাড়ানোর জন্য ব্যবহার করবে। NBFC সেক্টরে ক্রমাগত বাড়তে থাকা প্রতিযোগিতার কথা মাথায় রেখে কোম্পানিটি তাদের আর্থিক ক্ষমতাকে শক্তিশালী করতে চায়।

এই তহবিল থেকে কোম্পানির ঋণ দেওয়ার ক্ষমতাও বাড়বে, যার ফলে তারা ছোট-বড় ঋণের জন্য বেশি গ্রাহকদের আকর্ষণ করতে পারবে। এর পাশাপাশি, কোম্পানি তাদের বাণিজ্যিক সম্প্রসারণের পরিকল্পনা নিয়েও কাজ করবে।

এই ইস্যুর বড় ম্যানেজার কারা

এত বড় ইস্যু সামলানোর জন্য দেশ এবং বিদেশের নামী ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকিং কোম্পানিগুলোকে একসাথে যুক্ত করা হয়েছে। টাটা ক্যাপিটালের এই আইপিও ম্যানেজ করার দায়িত্বে রয়েছে Kotak Mahindra Capital, Axis Capital, Citi, BNP Paribas, HDFC Bank, HSBC, ICICI Securities, IIFL, SBI Capital এবং JP Morgan-এর মতো সংস্থা।

এই সমস্ত বড় আর্থিক কোম্পানির সাথে মিলিত হয়ে টাটা ক্যাপিটাল তাদের ইস্যুকে সফল করতে কোনো কসুর ছাড়ছে না।

টাটা ক্যাপিটালের ব্যবসা কী

টাটা গ্রুপের এই কোম্পানিটি দেশের বড় নন-ব্যাংকিং ফিনান্স কোম্পানিগুলোর মধ্যে অন্যতম। টাটা ক্যাপিটাল কনজিউমার লোন, বিজনেস ফাইন্যান্সিং, ইনফ্রাস্ট্রাকচার ফাইন্যান্স এবং ওয়েলথ ম্যানেজমেন্টের মতো পরিষেবা দিয়ে থাকে।

এর মূল ফোকাস রিটেল লোন, হাউজিং ফিনান্স এবং SME লোন সেক্টরের উপর। বিগত কয়েক বছরে কোম্পানিটি দ্রুত বৃদ্ধি দেখিয়েছে এবং এখন পাবলিক ইস্যুর মাধ্যমে তারা তাদের ব্যবসাকে আরও উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে।

IPO থেকে টাটা গ্রুপের কী লাভ হবে

টাটা গ্রুপ আগে থেকেই শেয়ার বাজারে লিস্টেড কোম্পানিগুলোর মাধ্যমে শক্তিশালী উপস্থিতি বজায় রেখেছে। কিন্তু টাটা ক্যাপিটালের তালিকাভুক্তি এই পোর্টফোলিওকে আরও শক্তিশালী করবে। এর ফলে গ্রুপটি বিনিয়োগকারীদের আস্থা আরও বেশি করে অর্জন করতে পারবে এবং NBFC সেক্টরে এর প্রভাব আরও বাড়বে।

টাটা সন্স OFS-এর মাধ্যমে ভালো পরিমাণ অর্থ পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, যা তারা তাদের অন্যান্য ব্যবসায়িক কাজেও বিনিয়োগ করতে পারবে।

বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বেড়েছে আগ্রহ

আইপিও-র খবরের পর থেকে বাজারে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আলোচনা শুরু হয়েছে। যদিও শেয়ার বাজারে আজকাল কিছুটা পতন দেখা যাচ্ছে, তবে টাটা ব্র্যান্ডের দৃঢ়তার কথা মাথায় রেখে এই ইস্যু নিয়ে যথেষ্ট উৎসাহ রয়েছে।

বিনিয়োগকারীরা এটিকে একটি সুরক্ষিত এবং নির্ভরযোগ্য বিনিয়োগের বিকল্প হিসেবে দেখছেন। টাটা ক্যাপিটালের IPO কবে খুলবে, তার তারিখ এখনও ঘোষণা করা হয়নি, তবে এর প্রস্তুতি জোরকদমে চলছে।

টাটা গ্রুপ দীর্ঘ সময় পর তাদের কোনো বড় কোম্পানির IPO নিয়ে আসছে। এর আগে টাটা টেকনোলজিস ২০২৩ সালে IPO নিয়ে এসেছিল, যা অসাধারণ সাড়া পেয়েছিল। একইভাবে, এখন টাটা ক্যাপিটালের ইস্যু নিয়েও বড় প্রত্যাশা রয়েছে।

Leave a comment