শিবু সোরেনের শেষকৃত্যে যোগ দিতে রাঁচি গেলেন তেজস্বী যাদব

শিবু সোরেনের শেষকৃত্যে যোগ দিতে রাঁচি গেলেন তেজস্বী যাদব

তেজस्वी যাদব শিবু সোরেনের শেষকৃত্যে যোগ দিতে রাঁচি রওনা হয়েছেন। তিনি শোক প্রকাশ করে বলেন, দেশ একজন মহান নেতাকে হারিয়েছে।

Tejashwi Yadav: ঝাড়খণ্ডের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী এবং আদিবাসী সমাজের বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর হিসাবে পরিচিত শিবু সোরেনের শেষকৃত্য আজ তাঁর পৈতৃক গ্রাম নিমরা, রামগড় জেলায় অনুষ্ঠিত হবে। এই উপলক্ষে, রাষ্ট্রীয় জনতা দল (RJD) নেতা তেজস্বী যাদব আজ সকালে পাটনা থেকে রাঁচির উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছেন। রওনা হওয়ার আগে তিনি মিডিয়ার সাথে কথা বলার সময় শিবু সোরেনের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেন এবং তাঁকে 'দরিদ্র, দলিত ও আদিবাসীদের সত্যিকারের প্রতিনিধি' বলে অভিহিত করেন।

তেজস্বী যাদবের শ্রদ্ধাঞ্জলি, ব্যক্তিগত দুঃখ প্রকাশ

পাটনা বিমানবন্দরে রওনা হওয়ার সময় তেজস্বী যাদব সাংবাদিকদের বলেন, 'গতকাল যখন এই খবর পাই, মন খুব খারাপ হয়ে যায়। আমরা শিবু সোরেনজিকে কেবল একজন রাজনীতিবিদ হিসেবে নয়, একজন আন্দোলনকারী, সংগ্রামী ও নিবেদিতপ্রাণ নেতা হিসেবে জানি। তিনি জীবনভর বঞ্চিত, আদিবাসী ও গরিবদের অধিকারের জন্য সংগ্রাম করেছেন। তাঁর প্রয়াণ দেশের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি।' তেজস্বী আরও বলেন, 'শিবু সোরেন আমাদের পিতার (লালু প্রসাদ যাদব) পুরনো সহকর্মী ছিলেন। তাঁরা দুজনে এক সময়ে সামাজিক ন্যায়বিচার ও প্রান্তিক সমাজের জন্য একসাথে সংগ্রাম করেছেন। তাঁর রাজনৈতিক জীবন আগামী প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করবে।'

রাঁচিতে জনস্রোত

শিবু সোরেনের শেষ দর্শনের জন্য রাঁচিতে তাঁর মোরাবাদী বাসভবনে সকাল থেকেই মানুষের ঢল নেমেছে। আদিবাসী সম্প্রদায়, ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চা (JMM)-এর কর্মী, সামাজিক সংগঠনের প্রতিনিধি এবং সাধারণ নাগরিক বিপুল সংখ্যায় তাঁকে শ্রদ্ধা জানাতে এসেছেন। সকলের চোখ ছিল ভেজা, প্রতিটি মুখ ছিল আবেগপূর্ণ। পারিবারিক সূত্র অনুযায়ী, শেষকৃত্যের প্রক্রিয়া তাঁর পৈতৃক গ্রাম নিমরায় দুপুর নাগাদ সম্পন্ন করা হবে। সেখানেও হাজার হাজার মানুষের সমাগম হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

'গুরুজি'-র শেষযাত্রায় দেশভর থেকে নেতাদের আগমন

শিবু সোরেন, যাঁকে সকলে ভালোবেসে 'গুরুজি' বলতেন, তাঁর প্রয়াণ জাতীয় স্তরে একটি যুগের অবসান বলে মনে করা হচ্ছে। শুধুমাত্র ঝাড়খণ্ড নয়, সারা দেশ থেকে রাজনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা তাঁর শেষ দর্শনের জন্য রাঁচি আসছেন। তেজস্বী যাদব ছাড়াও কংগ্রেস নেতা মল্লিকার্জুন খাড়গে, ঝামুমো কার্যকরী সভাপতি হেমন্ত সোরেন, ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী এবং অন্যান্য অনেক বিশিষ্ট নেতা এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন।

দেশের আদিবাসী আন্দোলনের মুখ ছিলেন 'গুরুজি'

শিবু সোরেনের জীবন ছিল সংগ্রামমুখর। তিনি ঝাড়খণ্ড রাজ্য গঠনের জন্য দীর্ঘ লড়াই করেছেন। তিনি শুধু ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চার প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন না, আদিবাসী স্বার্থ রক্ষার জন্য তিনি বহু গণআন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছেন। কোয়েল-কারো, ভূমি অধিগ্রহণ ও খনির মতো বিষয়ে তিনি সরকারকে বহুবার নড়াতে বাধ্য করেছিলেন। দিল্লির গঙ্গা রাম হাসপাতালে গত সোমবার ৮১ বছর বয়সে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ 'গুরুজি'-র চিকিৎসা দিল্লিতে চলছিল। সোমবার রাতে তাঁর মরদেহ বিশেষ বিমানে রাঁচি আনা হয়, যেখানে মোরাবাদীতে তাঁর বাসভবনে শেষ দর্শনের জন্য রাখা হয়।

তেজস্বী বললেন – 'শিবু সোরেনের মতো নেতা বিরল'

তেজস্বী যাদব তাঁর শোকবার্তায় বলেন, 'আজ রাজনীতিতে আদর্শের অভাব দেখা যাচ্ছে, কিন্তু শিবু সোরেনের মতো নেতারা সবসময় সমাজের জন্য কাজ করে গেছেন। তিনি ক্ষমতাকে উপায় হিসেবে দেখেননি, সেবার মাধ্যম হিসেবে দেখেছেন। আমরা সকলে তাঁর আদর্শ থেকে প্রেরণা নিতে থাকব।' তিনি আরও বলেন যে, আগামী প্রজন্মের উচিত শিবু সোরেনের আদর্শকে বোঝা এবং তাঁর অসমাপ্ত কাজকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া।

শোকে মূহ্যমান ঝাড়খণ্ড

পুরো ঝাড়খণ্ডে আজ শোকের আবহাওয়া। রাজ্য সরকার একদিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছে। সমস্ত সরকারি অফিস, স্কুল ও প্রতিষ্ঠানে আজ কাজকর্ম বন্ধ থাকবে। মানুষজন নিজ নিজ স্তরে 'গুরুজি'-কে স্মরণ করছেন এবং শ্রদ্ধা নিবেদন করছেন। ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেন বলেন, 'আমার জন্য এটা শুধু রাজনৈতিক ক্ষতি নয়, পারিবারিক ক্ষতি। তিনি আমাদের শুধু রাজনীতি নয়, আদিবাসী গৌরবের পাঠ শিখিয়েছেন।'

Leave a comment