টেসলার অটো পাইলট দুর্ঘটনায় ২ হাজার কোটি টাকার ক্ষতিপূরণ!

টেসলার অটো পাইলট দুর্ঘটনায় ২ হাজার কোটি টাকার ক্ষতিপূরণ!

এলন মাস্কের ইলেকট্রিক গাড়ি কোম্পানি টেসলাকে একটি পুরোনো দুর্ঘটনা মামলায় বড় ধাক্কা লেগেছে। ২০১৯ সালে ঘটা একটি দুর্ঘটনা নিয়ে আমেরিকার একটি জুরি টেসলাকে প্রায় ২৪৩ মিলিয়ন ডলার অর্থাৎ প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। এই ক্ষতিপূরণ দুর্ঘটনায় নিহত মহিলা ও গুরুতর আহত তার সঙ্গীকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে দেওয়া হবে।

অটোপাইলট সিস্টেম নিয়ে প্রশ্ন

টেসলার গাড়িগুলি তাদের অটো পাইলট প্রযুক্তির জন্য বিখ্যাত, কিন্তু অনেক সময় এই প্রযুক্তি বিতর্কে জড়িয়েছে। ২০১৯ সালের যে দুর্ঘটনায় এই জরিমানা ধার্য করা হয়েছে, তাতেও টেসলার অটো পাইলট প্রযুক্তিকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। এই দুর্ঘটনায় ২২ বছর বয়সী এক তরুণীর প্রাণ যায় এবং তার প্রেমিক গুরুতরভাবে আহত হন।

সেলফোনে মগ্ন ছিলেন ড্রাইভার, অটো পাইলট সামলাতে পারেনি গাড়ি

রিপোর্ট অনুযায়ী, গাড়ি চালাচ্ছিলেন যিনি, তার মনোযোগ মোবাইল ফোনের দিকে ছিল। এমন পরিস্থিতিতে তিনি গাড়ির নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন। যেহেতু টেসলার গাড়ি অটো পাইলট মোডে ছিল, তাই আশা করা হয়েছিল গাড়িটি নিজেই পরিস্থিতি সামলে নেবে। কিন্তু তা হয়নি। গাড়িটি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় এবং দুর্ঘটনা ঘটে।

কোম্পানির দায়িত্ব স্থির হল

আমেরিকার আদালতের জুরি এই মামলায় স্পষ্টভাবে বলেছে যে চালকের মনোযোগ সরে গেলেও, যেহেতু টেসলা তাদের গাড়িকে 'অটোনমাস' অর্থাৎ স্বয়ংক্রিয়ভাবে চলতে সক্ষম বলে দাবি করে, তাই কোম্পানিরও পুরো দায়িত্ব বর্তায়। জুরির মতে, কোম্পানি যে অটো পাইলট সিস্টেমকে নিরাপদ বলেছিল, সেই সিস্টেমই দুর্ঘটনা আটকাতে পারেনি।

এলন মাস্ক, যিনি বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তিদের মধ্যে অন্যতম, বর্তমানে একাধিক ক্ষেত্রে সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। কিছুদিন আগেই তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে রাজনৈতিক মতভেদের পর নতুন পার্টি তৈরি করেছিলেন। এরপর থেকে তার ব্যবসায়ও অস্থিরতা দেখা দিয়েছে।

আগেও এসেছে এমন মামলা

টেসলার অটো পাইলট প্রযুক্তি নিয়ে আগেও অনেক প্রশ্ন উঠেছে। আমেরিকাতে বহু এমন ঘটনা সামনে এসেছে, যেখানে চালক গাড়িটিকে অটো পাইলট মোডে দিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন। যদিও টেসলা সবসময় এই সাফাই দিয়েছে যে অটো পাইলট মানে এই নয় যে চালকের মনোযোগ সরিয়ে নেওয়া উচিত।

এই মামলায় টেসলা সরাসরি কোনো ভুল স্বীকার করেনি। কোম্পানির আইনজীবীরা যুক্তি দিয়েছিলেন যে দুর্ঘটনার সময় চালকই দায়ী ছিলেন কারণ তিনি গাড়ির ওপর থেকে মনোযোগ সরিয়ে নিয়েছিলেন। কিন্তু জুরি এই কথা মানেনি এবং রায় দেওয়ার সময় বলেছে যে একটি স্বয়ংক্রিয় গাড়িতে এমন পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার মতো প্রযুক্তি থাকা উচিত।

২৪৩ মিলিয়ন ডলারের ক্ষতিপূরণ

জুরি মৃত মহিলার পরিবার ও আহত যুবককে মোট ২৪৩ মিলিয়ন ডলার ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। এর মধ্যে একটি বড় অংশ মৃতার বাবা-মাকে দেওয়া হবে, যেখানে আহত যুবক তার চিকিৎসা ও মানসিক আঘাতের জন্য ক্ষতিপূরণ পাবে।

অটোপাইলট প্রযুক্তি নিয়ে নতুন বিতর্ক

এই রায় স্বয়ংক্রিয় গাড়ির প্রযুক্তি নিয়ে আবারও বিতর্ক উস্কে দিয়েছে। এই প্রযুক্তি কি এতটাই পরিপক্ক যে মানুষের ভুলে যাওয়া ত্রুটি পূরণ করতে পারবে? কোম্পানিগুলোর শুধু প্রযুক্তি বিক্রি করাই যথেষ্ট, নাকি দুর্ঘটনার দায়ভারও নিতে হবে?

এলন মাস্কের একটি প্রযুক্তি উদ্ভাবক হিসাবে পরিচিতি রয়েছে, কিন্তু সাম্প্রতিক ঘটনাগুলোর কারণে তার বিশ্বাসযোগ্যতা কমেছে। টেসলার প্রযুক্তিতে ক্রমাগত ত্রুটি এবং এখন এত বড় জরিমানা, মাস্কের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এই রায়ের পর টেসলাকে তাদের প্রযুক্তির বিশ্বাসযোগ্যতা প্রমাণ করার জন্য অতিরিক্ত প্রচেষ্টা করতে হবে। পাশাপাশি, আইনি ক্ষেত্রেও কোম্পানিকে নিজেদের আরও শক্তিশালী করতে হবে, কারণ এ ধরনের আরও মামলা এখন সামনে আসতে পারে।

মানুষের আস্থা টলে গেছে

টেসলার গাড়ি ভারতসহ বিশ্বের অনেক দেশে জনপ্রিয়। কিন্তু এমন ঘটনা মানুষের বিশ্বাসে আঘাত হানে। বিশেষ করে যখন একটি প্রযুক্তি সম্পর্কে দাবি করা হয় যে এটি সম্পূর্ণরূপে নিরাপদ এবং তারপরেও তাতে ভুল ধরা পরে, তখন প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক।

Leave a comment