গত ৩০ জুলাই সন্ধ্যায় রীতিমতো থরথর করে কেঁপে ওঠে হুগলির কোন্নগর।
কানাইপুরের তৃণমূল গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য পিন্টু ওরফে মুন্না চক্রবর্তীকে বাড়ির সামনে গুলি করে খুন করে দুষ্কৃতীরা। একে একে পাঁচ রাউন্ড গুলি ছোঁড়া হয় বলে অভিযোগ। আশপাশের এলাকা মুহূর্তে আতঙ্কে স্তব্ধ হয়ে যায়।
যাকে ভয়েই ছেড়ে দিয়েছিল এলাকা, সেই 'হুব্বা শ্যামলের' ভয়ের ছায়া এবার নিজে ধৃত!
দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় ‘হুব্বা শ্যামল’-এর নামে আতঙ্ক ছিল। স্থানীয় সূত্রে খবর, এই শ্যামল ওরফে বাঘা তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের এক কুখ্যাত মুখ। বহু মামলার আসামি এই শ্যামল এতটাই ত্রাস ছড়িয়েছিল যে, তৃণমূলের একাংশ পর্যন্ত এলাকা ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়। এখন সেই শ্যামলই খুনে ধরা পড়ল।
গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে ফের রক্ত ঝরল, তদন্তে একাধিক তৃণমূল যোগের ইঙ্গিত
মুন্নার মৃত্যুর পর থেকেই গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের গন্ধ পাচ্ছিল তদন্তকারী আধিকারিকরা। পুলিশের দাবি, প্রাথমিকভাবে স্থানীয় নেতৃত্বের সঙ্গে পুরনো বিবাদের জেরে এই খুন। তদন্তে উঠে আসছে তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর সংঘর্ষ এবং শ্যামলের একতরফা দাপটের কাহিনি। তদন্তের স্বার্থে জেরা করা হচ্ছে একাধিক নেতাকে।
সিসিটিভি ফুটেজে খুনিদের স্পষ্ট ছায়া, গাড়ি থেকে নেমেই গুলি চালানো শুরু
ঘটনার সময়কার সিসিটিভি ফুটেজ ইতিমধ্যেই পুলিশের হাতে এসেছে। তাতে দেখা গেছে, একটি চারচাকা গাড়ি থেমে দাঁড়ায় পিন্টু চক্রবর্তীর বাড়ির সামনে। গাড়ি থেকে বেরিয়ে তিন জন মুখ ঢাকা যুবক একের পর এক গুলি ছোঁড়ে। এরপর মুহূর্তে গাড়ি নিয়ে চম্পট দেয় তারা।
ধৃত শ্যামলের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা, আগেও ছিল খুনের অভিযোগ
শ্যামলের বিরুদ্ধে আগেও একাধিক মামলা ছিল। খুন, তোলাবাজি, চাঁদাবাজি থেকে শুরু করে অস্ত্র আইনের মামলা—সবকিছুতেই জড়িয়ে ছিল তার নাম। স্থানীয় থানায় একাধিক বার অভিযোগ জমা পড়লেও রাজনৈতিক প্রভাবে রক্ষা পেয়ে যেত। এবার তৃণমূল নেতার খুনে আর সামলানো গেল না।
তৃণমূলের অস্বস্তি, রাজনীতির আড়ালে গ্যাংওয়ারে জড়ানো নেতারা ফের আলোচনায়
মুন্না খুনের ঘটনায় ধৃত শ্যামল তৃণমূলের প্রাক্তন কর্মী হওয়ায় দলের অস্বস্তি তুঙ্গে। ঘরোয়া সূত্রে স্বীকার করছেন বহু তৃণমূল নেতা, ‘বাইরের চেয়ে ভেতরের লড়াই-ই বেশি ভয়ংকর!’ ঘাটালের পর এবার কোন্নগর—বঙ্গে ফের মাথাচাড়া দিচ্ছে রাজনৈতিক গ্যাংওয়ার।
মুন্নার স্ত্রী ভেঙে পড়েছেন, প্রশাসনের কাছে দ্রুত বিচার চেয়ে কাঁদছেন পরিবার
মুন্নার স্ত্রী সংবাদমাধ্যমের সামনে কাঁদতে কাঁদতে জানান, ‘‘আমার স্বামী কোনও অপরাধ করেনি। ভোটে জিতেছিল, কাজ করত। শ্যামলরা ওকে হুমকি দিত। পুলিশের কাছে অনেকবার বলেছিলাম, কেউ শুনল না। এখন আমার স্বামী নেই, আমি ন্যায় চাই।
পুলিশের দাবি, ‘পলাতকদের খোঁজ চলছে, শীঘ্রই সব ধরা পড়বে’
চাঞ্চল্যকর এই খুনের ঘটনায় ইতিমধ্যেই ধৃত শ্যামলকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, আরও কয়েকজন পলাতক রয়েছে, তাদের খোঁজে তল্লাশি চলছে। তদন্তে উঠে আসছে আরও একাধিক গ্যাংয়ের সম্পৃক্ততা। জেলা পুলিশ জানিয়েছে, দ্রুত চার্জশিট দিয়ে কড়া শাস্তির ব্যবস্থা হবে।