সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক মন্ত্রণালয় একটি নতুন নিয়ম তৈরীর প্রস্তুতি নিচ্ছে, যা গাড়ির মালিকদের জন্য বড়সড় সতর্কতা নিয়ে আসছে। এই প্রস্তাবিত নিয়মের অধীনে যদি কোনো গাড়ির টোল ট্যাক্স বকেয়া থাকে, তাহলে সেই গাড়ির রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট (RC), ইন্স্যুরেন্স রিনিউয়াল, ফিটনেস সার্টিফিকেট, মালিকানা হস্তান্তর অথবা নো অবজেকশন সার্টিফিকেট (NOC) জারি করা হবে না। মন্ত্রণালয় এই জন্য মোটর ভেহিকেল আইনের সংশোধনের জন্য ড্রাফট নোটিফিকেশন জারি করেছে।
টোল না দিলে আর কোনো সরকারি অনুমোদন মিলবে না
মন্ত্রণালয় কর্তৃক জারি করা খসড়াতে এটি স্পষ্ট করা হয়েছে যে, যদি কোনো গাড়ির FASTag সম্পর্কিত ডেটাতে টোল শুল্কের বকেয়া দেখা যায়, তাহলে সেই গাড়ির মালিককে আরসি রিনিউয়াল, বীমা নবায়ন বা অন্যান্য নথিপত্রের জন্য প্রয়োজনীয় অনুমোদন দেওয়া হবে না। এই নিয়ম সেই পরিস্থিতিতেও প্রযোজ্য হবে যখন গাড়িতে বৈধ FASTag লাগানো থাকবে না অথবা টোল বুথে পেমেন্ট করা হবে না।
এই নিয়মের প্রভাব সারা দেশে সেই সকল গাড়ির মালিকদের উপর পড়বে যারা সময়ে সময়ে টোল দেওয়া থেকে বাঁচেন অথবা FASTag এর সঠিক ব্যবহার করেন না।
NHAI এর MLFF সিস্টেম আরও শক্তিশালী হবে
এই নতুন নিয়ম কেন্দ্র সরকারের সেই ডিজিটাল রোডম্যাপকে আরও শক্তিশালী করবে, যার অধীনে ন্যাশনাল হাইওয়ে অথরিটি অফ ইন্ডিয়া (NHAI) মাল্টি লেন ফ্রি ফ্লো (MLFF) টোল কালেকশন সিস্টেম চালু করছে। এই পদ্ধতিতে টোল আদায়ের জন্য আর ফিজিক্যাল ব্যারিয়ার থাকবে না। অর্থাৎ টোল বুথে গাড়ি থামিয়ে পেমেন্ট নেওয়া হবে না, বরং ক্যামেরা এবং সেন্সরের মাধ্যমে টোলের গণনা এবং পেমেন্টের প্রক্রিয়া স্বয়ংক্রিয়ভাবে হবে।
MLFF কে সফল করার জন্য জরুরি হল প্রতিটি গাড়িতে বৈধ FASTag লাগানো এবং সময় মতো টোল পরিশোধ করা। এই জন্য সরকার সরাসরি মোটর ভেহিকেল পরিষেবা সম্পর্কিত অনুমোদনগুলিকে টোল পরিশোধের সঙ্গে যুক্ত করার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
বকেয়া টোলের তথ্য অনলাইনে পাওয়া যাবে
মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনা অনুযায়ী গাড়ির মালিকরা তাদের বকেয়া টোলের তথ্য অনলাইন পোর্টাল বা মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে দেখতে পারবেন। FASTag থেকে প্রাপ্ত ডেটার ভিত্তিতে টোল পরিশোধের তথ্য সংশ্লিষ্ট রেজিস্ট্রেশন অথরিটির সিস্টেমে সরাসরি উপলব্ধ হবে। যদি কোনো বকেয়া পাওয়া যায়, তাহলে সেই সিস্টেম অ্যালার্ট দেবে এবং যেকোনো ধরনের অনুমোদন বন্ধ করা যাবে।
এখানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, গাড়ির মালিককে বকেয়া পরিশোধ করার পরেই পরবর্তী প্রক্রিয়ার অনুমতি দেওয়া হবে। অর্থাৎ এখন নথিপত্রের বৈধতা বজায় রাখার জন্য টোল পরিশোধ করাও জরুরি হয়ে যাবে।
বীমা কোম্পানিগুলিও আপডেট করা ডেটা পাবে
সড়ক মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনায় এটিও অন্তর্ভুক্ত আছে যে, ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিগুলিকেও FASTag সিস্টেমের সাথে যুক্ত করা হবে। এর ফলে পলিসি রিনিউয়ালের সময় তারা জানতে পারবে যে সংশ্লিষ্ট গাড়ির টোল বকেয়া আছে কিনা। এমন পরিস্থিতিতে বীমার নবায়নও তখনই সম্ভব হবে যখন গাড়ির টোল ক্লিয়ার থাকবে।
বীমা ক্ষেত্রের বিশেষজ্ঞদের মতে, এর ফলে গাড়ির নজরদারি এবং ক্লেম প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা আসবে, কারণ টোল পরিশোধের মাধ্যমে গাড়ির মুভমেন্ট এবং যাত্রার তথ্য স্বয়ংক্রিয়ভাবে পাওয়া যাবে।
টোল চুরি রুখতে সরকারের বড় পদক্ষেপ
এখনও পর্যন্ত সারাদেশে বহু সংখ্যক গাড়ির মালিক আছেন যারা জেনেশুনে FASTag নিষ্ক্রিয় রাখেন বা টোল রাস্তা দিয়ে পেমেন্ট না করে যাত্রা করেন। এর ফলে সরকারের প্রতি বছর হাজার হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়। এই নিয়ম চালু হওয়ার পরে এই ধরনের গাড়ি মালিকদের উপর সরাসরি প্রভাব পড়বে এবং টোল চুরির সম্ভাবনা অনেকখানি কমে যাবে।
জাতীয় সড়কগুলোতে প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ গাড়ি চলাচল করে, যাদের মধ্যে একটা বড় অংশ এখনও টোল দেওয়া থেকে বাঁচে অথবা জেনেশুনে FASTag ব্লক করে বেরিয়ে যায়। মন্ত্রণালয়ের নতুন ড্রাফট নিয়মের উদ্দেশ্য এটাই যে, এখন টোল না দেওয়া লোকেদের গাড়ির সাথে যুক্ত অন্যান্য পরিষেবা দেওয়ার আগে আটকানো হবে।
বৈধ FASTag না থাকলেও কড়াকড়ি
খসড়া নিয়মে এটিও বলা হয়েছে যে, যদি কোনো গাড়িতে বৈধ FASTag না পাওয়া যায় তাহলে তাকেও টোল বকেয়ার শ্রেণীতে রাখা হবে। অর্থাৎ শুধু টোল পরিশোধ করাই নয়, FASTag লাগানোও এখন আইনি বাধ্যবাধকতা হতে পারে। এর থেকে এটা নিশ্চিত হবে যে প্রতিটি গাড়ি হাইওয়েতে নজরদারিতে থাকবে।
FASTag এর মাধ্যমে সরকার টোল আদায়ে অনেকগুণ বেশি সাফল্য পেয়েছে, তবে এর সম্পূর্ণরূপে সফল হওয়ার জন্য এখন এর সাথে যুক্ত কঠোরতা জরুরি বলে মনে করা হচ্ছে।