এফ-৩৫ ফাইটার জেট নিয়ে ভারতের সাথে আমেরিকার চুক্তি, পাকিস্তানের উদ্বেগ

এফ-৩৫ ফাইটার জেট নিয়ে ভারতের সাথে আমেরিকার চুক্তি, পাকিস্তানের উদ্বেগ

আমেরিকা কর্তৃক ভারতকে এফ-৩৫ ফাইটার জেট দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়ায় পাকিস্তানের উদ্বেগ বেড়েছে। পাক এয়ারফোর্স প্রধান আমেরিকার কাছে আবেদন জানিয়েছেন, ভারতকে যেন এই স্টিলথ ফাইটার না দেওয়া হয়।

India F 35 fighter jet: ভারতের প্রতিরক্ষা সক্ষমতা নিয়ে আবারও আলোচনা শুরু হয়েছে। আমেরিকা ভারতকে অত্যাধুনিক এফ-৩৫ স্টিলথ ফাইটার জেট দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে। এই জেট মার্কিন প্রযুক্তির সবচেয়ে অ্যাডভান্সড ফাইটার, যা অত্যন্ত গোপন অভিযানের জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। এই প্রস্তাবের পর দক্ষিণ এশিয়ায় কৌশলগত ভারসাম্য নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে, বিশেষ করে পাকিস্তানে এর প্রভাব দেখা যাচ্ছে।

ট্রাম্প ও মোদীর মধ্যে আলোচনায় উঠেছিল এই প্রসঙ্গ

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প ফেব্রুয়ারি মাসে ভারত সফরের সময় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। সেই আলোচনায় তিনি ভারতকে এফ-৩৫ ফাইটার জেট দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন। এরপর এপ্রিল মাসে মার্কিন উপরাষ্ট্রপতি জেডি ভেন্সের ভারত সফরের সময়ও এই বিষয়ে আলোচনা হয়। আমেরিকা ভারতের সঙ্গে তাদের কৌশলগত এবং প্রতিরক্ষা সম্পর্ক আরও জোরদার করতে চায়।

পাকিস্তানে চাঞ্চল্য

ভারতকে এফ-৩৫ দেওয়ার জল্পনা পাকিস্তানের সরকার ও সেনাবাহিনীতে অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে। পাকিস্তানি বায়ুসেনার প্রধান এয়ার মার্শাল জহির আহমেদ বাবর সিধু সম্প্রতি আমেরিকা সফর করেছেন। এই সময় তিনি মার্কিন বায়ুসেনা প্রধান জেনারেল ডেভিড অলভিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং ভারতকে এফ-৩৫ না দেওয়ার আবেদন জানান।

কৌশলগত ভারসাম্য বিগড়ে যাওয়ার ভয়

পাকিস্তানি বায়ুসেনা প্রধানের বক্তব্য, যদি আমেরিকা ভারতকে এই অত্যাধুনিক ফাইটার জেট দেয়, তাহলে দক্ষিণ এশিয়ার কৌশলগত ভারসাম্য খারাপভাবে প্রভাবিত হবে। তিনি মনে করেন যে, পাকিস্তানের বায়ুসেনা ভারতের তুলনায় দুর্বল, এমন পরিস্থিতিতে এই ধরনের প্রযুক্তিগত সুবিধা ভারত পেলে আঞ্চলিক ক্ষমতার ভারসাম্য ভেঙে যেতে পারে।

পাকিস্তানের দ্বিৈত নীতি

আশ্চর্যের বিষয় হল, পাকিস্তান নিজেও আধুনিক যুদ্ধবিমান কেনার প্রক্রিয়ায় রয়েছে। তারা চীন থেকে জে-35 স্টিলথ ফাইটার জেট কেনার প্রস্তুতি নিচ্ছে। রিপোর্ট অনুযায়ী, এই চুক্তি প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। জে-35 চীনের শেনিয়াং এয়ারক্রাফট কর্পোরেশন তৈরি করেছে এবং এটিকে এফ-35-এর জবাব হিসেবে মনে করা হয়।

ভারতের প্রতিরক্ষা প্রয়োজন

ভারত তার বায়ুসেনাকে আধুনিক করার দিকে ক্রমাগত কাজ করছে। রাফেল চুক্তির পরেই ভারতের প্রয়োজন শেষ হয়ে যায়নি। প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারত ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার জন্য এফ-35এ অথবা রাশিয়া থেকে এসইউ-57ই-এর মতো পঞ্চম প্রজন্মের ফাইটার জেট কেনার বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করছে।

আমেরিকা-ভারত প্রতিরক্ষা সহযোগিতা

ভারত ও আমেরিকার মধ্যে গত কয়েক বছরে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিরক্ষা চুক্তি হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে অ্যাপাচি হেলিকপ্টার, সি-17 গ্লোবমাস্টার ট্রান্সপোর্ট এয়ারক্রাফট এবং এমকিউ-9বি ড্রোনের চুক্তি। যদি এফ-35 চুক্তি হয়, তাহলে এটি দুই দেশের মধ্যে কৌশলগত অংশীদারিত্বকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে।

পাকিস্তানের নিরাপত্তা

পাকিস্তান মনে করে যে, যদি ভারত এফ-35 পায়, তাহলে তাদের প্রতিরক্ষা ক্ষমতা বহুগুণ বেড়ে যাবে। এর ফলে ভারতের আকাশ থেকে আকাশে এবং আকাশ থেকে ভূমিতে হামলার ক্ষমতা অনেক বাড়বে। পাকিস্তানি বায়ুসেনার কাছে এই স্তরের কোনো ফাইটার জেট নেই।

ভারতের কৌশলগত চিন্তা

ভারত দীর্ঘদিন ধরে দেশীয় অস্ত্র ব্যবস্থার উন্নয়নের পাশাপাশি অত্যাধুনিক বিদেশি প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি খুঁজছে। ডিআরডিও কর্তৃক তৈরি তেজস ফাইটার জেট একটি সফল প্রকল্প, কিন্তু এফ-35-এর মতো ফাইটার জেট ভারতের আকাশপথে আধিপত্যকে এক নতুন মাত্রা দেবে।

Leave a comment