ট্রাম্প ভারতের সফর বাতিল করলেন। তিনি কোয়াড সামিটে অংশ নেবেন না। শুল্ক বিবাদকে কেন্দ্র করে ভারত-মার্কিন সম্পর্কে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার মধ্যে এই সিদ্ধান্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে বিবেচিত হচ্ছে।
ট্রাম্প ভারতের সফর বাতিল করেছেন: মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ভারতের মধ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা এখন এক নতুন মোড় নিয়েছে। ভারতের উপর ৫০% পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করার পর, এখন জানা গেছে যে ট্রাম্প তাঁর পরিকল্পিত ভারত সফর বাতিল করেছেন। এই বছর শেষের দিকে সফরটি নির্ধারিত ছিল, যেখানে তিনি ভারতে কোয়াড সামিটে অংশ নেবেন।
তবে, নিউ ইয়র্ক টাইমস-এর এক প্রতিবেদন অনুসারে, তিনি এখন এই সফর বাতিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এই সংবাদটি ইতিমধ্যেই উত্তপ্ত ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের উপর আরও একবার সন্দেহের ছায়া ফেলেছে। যদিও, ভারতীয় সরকার বা মার্কিন প্রশাসন কেউই এখনও এই সংবাদ আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত করেনি।
শুল্ক হামলার পর ভারত-মার্কিন সম্পর্কে উত্তেজনা বৃদ্ধি
আসলে, কিছুদিন আগেই ট্রাম্প প্রশাসন ভারত থেকে আসা বেশ কয়েকটি পণ্যের উপর ৫০% পর্যন্ত শুল্ক ঘোষণা করেছিল। এই সিদ্ধান্তটি দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান বাণিজ্য পার্থক্যকে আরও গভীর করার একটি পদক্ষেপ বলে প্রমাণিত হয়েছে। ভারতও এই সিদ্ধান্তের উপর অসন্তোষ প্রকাশ করেছিল, কারণ এটি সরাসরি ভারতীয় শিল্প ও রপ্তানিকারকদের প্রভাবিত করবে। বর্ধিত শুল্কের ফলে আমেরিকায় ভারতের রপ্তানি আরও ব্যয়বহুল হবে, যা ভারতীয় ব্যবসার প্রতিযোগিতা ক্ষমতা কমিয়ে দেবে।
তাছাড়া, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও একাধিকবার বলেছেন যে ভারতের সাথে বাণিজ্য সম্পর্ক ভারসাম্যপূর্ণ নয় এবং ভারত আমেরিকার কাছ থেকে বেশি লাভবান হচ্ছে। এই মন্তব্য দুই দেশের মধ্যে তিক্ততা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। ভারত সফর বাতিলের সিদ্ধান্তকে এখন সম্পর্কের এই অবনতির পরবর্তী পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
নিউ ইয়র্ক টাইমস-এর প্রতিবেদন আলোড়ন সৃষ্টি করেছে
নিউ ইয়র্ক টাইমস তার প্রতিবেদনে দাবি করেছে যে ট্রাম্প ইতিমধ্যেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে এই সফর সম্পর্কে জানিয়েছিলেন। এই বছর শেষের দিকে সফরটি নির্ধারিত ছিল, যেখানে তিনি কোয়াড সামিটে অংশগ্রহণের পাশাপাশি ভারতের সাথে বাণিজ্য ও নিরাপত্তা ইস্যুতে আলোচনা করবেন। কিন্তু এখন তিনি হঠাৎ করেই এই সফর বাতিল করেছেন।
প্রতিবেদন অনুসারে, এই সিদ্ধান্তের প্রধান কারণ হল ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে ক্রমবর্ধমান বাণিজ্য উত্তেজনা। তবে, এই বিষয়ে মার্কিন প্রশাসন বা ভারতীয় সরকার কারো পক্ষ থেকেই এখনও কোনও আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেওয়া হয়নি।
কোয়াড সামিটের গুরুত্ব
এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের নিরাপত্তা, বাণিজ্য এবং কৌশলগত অংশীদারিত্বের জন্য কোয়াড সামিট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হয়। এই গোষ্ঠীতে ভারত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জাপান এবং অস্ট্রেলিয়া অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। ভারত এবার এই সম্মেলনের আয়োজন করছে, তাই ট্রাম্পের উপস্থিতি এই সম্মেলনকে একটি নতুন দিকনির্দেশনা দেবে বলে আশা করা হয়েছিল।
সাম্প্রতিক বছরগুলিতে, কোয়াডকে চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব মোকাবেলার একটি গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম হিসাবে দেখা হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে, ট্রাম্পের অনুপস্থিতি একটি বার্তা দিতে পারে যে আমেরিকা ও ভারতের মধ্যে কৌশলগত অংশীদারিত্বের আর আগের উষ্ণতা নেই।
ভারত-মার্কিন সম্পর্ক প্রভাবিত হতে পারে
গত কয়েক বছরে ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক বেশ শক্তিশালী বলে বিবেচিত হয়েছিল। প্রতিরক্ষা, বাণিজ্য, শক্তি এবং প্রযুক্তি ক্ষেত্রে দুই দেশের সহযোগিতা বৃদ্ধি পেয়েছিল। তবে, শুল্ক সমস্যা এই সম্পর্ককে প্রভাবিত করতে শুরু করেছে।
ট্রাম্প বারবার দাবি করেছিলেন যে তিনি ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা কমাতে ভূমিকা পালন করেছেন। তবে, ভারত সবসময়ই বলে এসেছে যে দুই দেশের মধ্যেকার বিষয়গুলো দ্বিপাক্ষিক এবং তৃতীয় দেশের কোনও ভূমিকা থাকতে পারে না। এই যুক্তিতর্কও সম্পর্ককে তিক্ত করতে অবদান রেখেছে।
বিশ্বের দৃষ্টি প্রধানমন্ত্রী মোদির চীন সফর
ট্রাম্পের ভারত সফর বাতিলের খবরের মধ্যে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বর্তমানে চীন সফরে রয়েছেন। সেখানে তিনি চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সাথে সাক্ষাত করার কথা রয়েছে। ভারত-মার্কিন সম্পর্ক যখন উত্তেজনার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, সেই সময়ে এই সফরটি ঘটছে।