ট্রাম্পের শুল্ক নীতি ও কূটনৈতিক ভুলের জেরে ভারত-মার্কিন সম্পর্কে বড়ো ফাটল, ২৫ বছরের সম্পর্ক বিপন্ন

ট্রাম্পের শুল্ক নীতি ও কূটনৈতিক ভুলের জেরে ভারত-মার্কিন সম্পর্কে বড়ো ফাটল, ২৫ বছরের সম্পর্ক বিপন্ন

ট্রাম্পের নতুন শুল্ক নীতি ও কূটনৈতিক ভুলের ফলে ভারত-আমেরিকা (India-US) সম্পর্কে উত্তেজনা বেড়েছে। ডেমোক্র্যাট সাংসদরা সতর্ক করেছেন যে এটি ২৫ বছরের পরিশ্রমকে বিপন্ন করতে পারে। জরুরি ফোন করা হয়েছিল।

India-US Relations: মার্কিন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন শুল্ক নীতি এবং কিছু কূটনৈতিক সিদ্ধান্ত ভারত-আমেরিকা (India-US) সম্পর্কের মধ্যে গুরুতর উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে। এই উত্তেজনা এতটাই বেড়েছে যে আমেরিকার বহু প্রাক্তন কূটনীতিক এবং ডেমোক্র্যাট সাংসদরা জরুরি ভিত্তিতে এ বিষয়ে আলোচনা করতে বাধ্য হয়েছেন। তাঁরা সতর্ক করেছেন যে যদি এই পরিস্থিতি সময়মতো সংশোধন না করা হয়, তবে দুই দেশের মধ্যে ২৫ বছরের কঠোর পরিশ্রমে গড়ে ওঠা দ্বিপাক্ষিক অংশীদারিত্বের (bilateral partnership) উপর গভীর প্রভাব পড়বে।

জরুরি কনফারেন্স কলের আয়োজন

ভারত-আমেরিকা সম্পর্কের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করার জন্য কংগ্রেসনাল ইন্ডিয়া ককাসের সহ-সভাপতি এবং ডেমোক্র্যাট সাংসদ রো খান্না একটি জরুরি কনফারেন্স কলের (conference call) আয়োজন করেন। এতে বহু প্রাক্তন মার্কিন রাষ্ট্রদূত, শিল্পপতি এবং ভারতীয় বংশোদ্ভূত টেক লিডাররা অংশ নেন।

রো খান্নার বক্তব্য

সাংসদ রো খান্না স্পষ্ট জানিয়ে দেন যে তিনি কেবল তখনই এই ফোন কল ডেকেছেন যখন বিষয়টি গুরুতর। তিনি জোর দিয়ে বলেন যে ভারত-আমেরিকা সম্পর্কের অবনতি রোধ করার জন্য সতর্কবার্তা দেওয়া জরুরি। খান্না এর আগেও সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম X-এ একটি ভিডিওতে এই উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন যে ট্রাম্পের নীতির কারণে দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতা দুর্বল হচ্ছে।

প্রাক্তন রাষ্ট্রদূত ও শিল্পপতিদের প্রতিক্রিয়া

এই কলে অংশগ্রহণকারী প্রাক্তন রাষ্ট্রদূত রিচ ভার্মা এবং এরিক গারসেটি ভারত-আমেরিকা সম্পর্কের অবনতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। রিচ ভার্মা বলেন যে গত দুই মাসে ট্রাম্পের নীতি ২৫ বছরের পরিশ্রমকে নষ্ট করে দিয়েছে। তিনি বলেন যে এটি কেবল বাণিজ্য বা কূটনৈতিক বিষয় নয়, বরং জনগণের পারস্পরিক বিশ্বাস, প্রতিরক্ষা (defense cooperation), পরিচ্ছন্ন শক্তি (clean energy) এবং প্রযুক্তি অংশীদারিত্বের উপরও প্রভাব ফেলছে।

বিল ক্লিনটনের ভারত সফর

প্রাক্তন রাষ্ট্রদূতরা ২০০০ সালে তৎকালীন মার্কিন রাষ্ট্রপতি বিল ক্লিনটনের ভারত সফরের কথা উল্লেখ করেন। সেই সময় আমেরিকা ভারত-পাকিস্তান নীতিকে আলাদা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। এই পদক্ষেপটি দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য, প্রতিরক্ষা, শিক্ষা এবং বিজ্ঞানের মতো ক্ষেত্রগুলিতে সহযোগিতার ভিত্তি স্থাপন করেছিল। ভার্মা এবং অন্যান্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে ট্রাম্পের নীতিগুলি এই ২৫ বছরের পুরনো দ্বিপাক্ষিক ভিত্তিকে (bilateral foundation) বিপন্ন করছে।

শুল্ক নীতির প্রভাব

শুল্ক এবং বাণিজ্য নীতি ভারত-আমেরিকা অংশীদারিত্বে অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে। শিল্পপতিরা বলছেন যে ট্রাম্পের নীতির কারণে মার্কিন বিনিয়োগকারীদের বিশ্বাস দুর্বল হয়েছে এবং ভারতীয় কোম্পানিগুলিও অপ্রত্যাশিত শুল্ক এবং বাধার সম্মুখীন হচ্ছে। এই ধরনের পরিবেশ দুই দেশের বাণিজ্য এবং অর্থনৈতিক সহযোগিতার জন্য ক্ষতিকর প্রমাণিত হচ্ছে।

ভারতীয়-আমেরিকান সম্প্রদায়ের উদ্বেগ

জরুরি কলে অংশগ্রহণকারী ভারতীয়-আমেরিকান শিল্পপতি এবং টেক লিডাররাও উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তারা বলেন যে ভারত এবং আমেরিকার মধ্যে কৌশলগত অংশীদারিত্ব (strategic partnership) কেবল সরকারগুলির মধ্যে নয়, বরং দুই দেশের নাগরিক, ছাত্র এবং শিল্পগুলির মধ্যে আস্থার উপর ভিত্তি করে তৈরি। যদি এই আস্থা দুর্বল হয়, তবে দীর্ঘ মেয়াদে দুই দেশের সহযোগিতার ক্ষতি হবে।

Leave a comment