মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের দক্ষিণ কোরিয়ার বুসানে বৈঠক শুরু হয়েছে। ছয় বছর পর এই বৈঠকে শুল্ক যুদ্ধ কমানো এবং অর্থনৈতিক সহযোগিতা বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনার সম্ভাবনা রয়েছে।
বাণিজ্যিক উত্তেজনা: মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের বহু প্রতীক্ষিত বৈঠক দক্ষিণ কোরিয়ার বুসানে শুরু হয়েছে। এই বৈঠকটি APEC শীর্ষ সম্মেলন থেকে আলাদাভাবে আয়োজন করা হয়েছে, যা এর গুরুত্ব আরও বাড়িয়েছে। দুই নেতার মধ্যে ২০১৯ সালের পর এটিই প্রথম সরাসরি সাক্ষাৎ। বর্তমান পরিস্থিতিতে যখন আমেরিকা ও চীনের মধ্যে শুল্ক যুদ্ধ (Tariff War) চলছে, তখন এই বৈঠকটি বিশ্বের দুটি বৃহত্তম অর্থনীতির মধ্যে উত্তেজনা কমানোর একটি বড় প্রচেষ্টা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
আমেরিকা-চীন শুল্ক যুদ্ধ
গত বেশ কয়েক মাস ধরে আমেরিকা ও চীনের মধ্যে বাণিজ্যিক উত্তেজনা চরমে। মার্কিন প্রশাসন চীনা পণ্যের ওপর ব্যাপক শুল্ক আরোপ করেছে, অন্যদিকে চীনও পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে বেশ কিছু মার্কিন পণ্যের ওপর শুল্ক বাড়িয়েছে। এতে শুধু উভয় দেশের অর্থনীতিই প্রভাবিত হয়নি, বিশ্ববাজারেও অস্থিরতা বেড়েছে। বুসানে এই বৈঠকটি এই প্রেক্ষাপটে একটি স্বস্তির আশা হিসেবে দেখা হচ্ছে।
ট্রাম্প শি জিনপিংকে 'কঠিন আলোচক' হিসেবে অভিহিত করেছেন
সাক্ষাতের শুরুতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন যে এই বৈঠক "খুব সফল হবে"। তিনি শি জিনপিংকে "খুব কঠিন আলোচক (Tough Negotiator)" হিসেবে বর্ণনা করেছেন এবং বলেছেন যে এটি একটি ভালো জিনিস কারণ এটি আলোচনাকে শক্তিশালী ও ফলপ্রসূ করে তোলে। ট্রাম্প আরও বলেন, "আমরা একে অপরকে ভালোভাবে চিনি। আমাদের মধ্যে সবসময় খুব ভালো সম্পর্ক ছিল।"

ট্রাম্প সম্মান প্রদর্শন করেছেন
বৈঠকের সময় ট্রাম্প চীনা প্রেসিডেন্টের প্রশংসা করে বলেন, "দীর্ঘ সময় পর একজন বন্ধুর সাথে দেখা করতে পারা আমার জন্য সম্মানের বিষয়। চীনের অত্যন্ত সম্মানিত এবং শ্রদ্ধেয় প্রেসিডেন্টের সাথে আমরা ইতিমধ্যেই অনেক বিষয়ে একমত হয়েছি এবং আরও কিছু বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছানোর আশা করছি। প্রেসিডেন্ট শি একটি মহান দেশের মহান নেতা। আমি নিশ্চিত যে আমাদের মধ্যে দীর্ঘ সময় ধরে চমৎকার সম্পর্ক বজায় থাকবে।" তিনি আরও বলেন যে শি জিনপিংয়ের সঙ্গ আমেরিকার জন্য গর্বের বিষয়।
শি জিনপিংও ইতিবাচকতা দেখিয়েছেন
চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংও তার মার্কিন প্রতিপক্ষের প্রতি উষ্ণতা দেখিয়েছেন। তিনি বলেন, "প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প, আপনার সাথে দেখা করে আনন্দিত। অনেক বছর পেরিয়ে গেছে, কিন্তু আমরা ফোন কল এবং চিঠিপত্রের মাধ্যমে নিয়মিত যোগাযোগ রেখেছি। আমাদের যৌথ নির্দেশনায় চীন-মার্কিন সম্পর্ক সামগ্রিকভাবে স্থিতিশীল রয়েছে।" শি আরও যোগ করেন যে উভয় দেশের পরিস্থিতি ভিন্ন, তাই প্রতিটি বিষয়ে ঐকমত্য সম্ভব নয়, তবে মতপার্থক্য থাকা স্বাভাবিক।
শি জিনপিংয়ের অংশীদারিত্বের উপর জোর
শি জিনপিং বলেছেন, "আমি বহুবার প্রকাশ্যে বলেছি যে চীন এবং আমেরিকার অংশীদার ও বন্ধু হওয়া উচিত। ইতিহাস আমাদের এটাই শিখিয়েছে।" তার এই বক্তব্যকে উভয় দেশের মধ্যে সহযোগিতার দিকে একটি ইতিবাচক ইঙ্গিত হিসেবে দেখা হচ্ছে।
আমেরিকার পক্ষ থেকে ইঙ্গিত: শুল্কে নমনীয়তা সম্ভব

বৈঠকের আগে মার্কিন কর্মকর্তারা ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে ট্রাম্প চীনা পণ্যের উপর ১০০ শতাংশ অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের সাম্প্রতিক হুমকি কার্যকর করবেন না। এই ইঙ্গিত উভয় দেশের মধ্যে উত্তেজনা কমার সম্ভাবনাকে জোরদার করে। অন্যদিকে, চীনও রেয়ার আর্থ মিনারেলস (Rare Earth Minerals) এর রপ্তানি নিয়ন্ত্রণে শিথিলতা এবং আমেরিকা থেকে সয়াবিন ক্রয় বাড়ানোর ইচ্ছা প্রকাশ করেছে।
ফেন্টানিল বিতর্ক নিয়েও নমনীয়তার আশা
দক্ষিণ কোরিয়া সফরের সময় ট্রাম্প এয়ার ফোর্স ওয়ান-এ সাংবাদিকদের বলেন যে তিনি ফেন্টানিল (Fentanyl) উৎপাদনে চীনের ভূমিকা নিয়ে আরোপিত শুল্কেও ছাড় দিতে পারেন। এটি ইঙ্গিত দেয় যে আমেরিকা এই বিতর্কিত বিষয়টি আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করতে ইচ্ছুক।
তাইওয়ান ইস্যুতে সতর্ক পদক্ষেপ
আমেরিকা ও চীনের কর্মকর্তাদের সাম্প্রতিক কুয়ালালামপুর বৈঠকে প্রাথমিক ঐকমত্যের ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছিল। মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট বলেছিলেন যে এটি "একটি খুব সফল কাঠামো"। তা সত্ত্বেও ট্রাম্প স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে এবার তিনি তাইওয়ান (Taiwan) ইস্যুটি বৈঠকে তুলবেন না। এই পদক্ষেপটি সম্পর্কের উত্তেজনা এড়ানোর কৌশল হিসেবে দেখা হচ্ছে।
২০১৯ সালের পর প্রথম সরাসরি আলোচনা
ট্রাম্প ও শি জিনপিংয়ের মধ্যে এই বৈঠকটি প্রায় ছয় বছর পর হচ্ছে। শেষবার ২০১৯ সালে বৈঠক হয়েছিল যখন দুই নেতা বাণিজ্য বিরোধ নিষ্পত্তির দিকে কিছু পদক্ষেপ নিয়েছিলেন, কিন্তু এরপর উত্তেজনা বাড়তে থাকে। এবার বুসানে এই বৈঠকটি সম্পর্ককে নতুন দিকে নিয়ে যাওয়ার সুযোগ হতে পারে।













