ওয়াশিংটন থেকে আসা সর্বশেষ খবর অনুযায়ী, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন যে ইউক্রেন অদূর ভবিষ্যতে ন্যাটোর সদস্যপদ পাবে না। শুধু তাই নয়, রাশিয়ার কাছ থেকে ক্রিমিয়া পুনরুদ্ধার করার স্বপ্নও ইউক্রেনের নাগালে নেই বলেই সাফ জানিয়ে দিলেন তিনি। এই বার্তায় কার্যত ভেঙে চুরমার হল জেলেনস্কির বহুদিনের আশা।
হোয়াইট হাউসে বৈঠকের আগে সোজা বার্তা
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে হোয়াইট হাউসে বৈঠকের আগে ট্রাম্প কোনো কূটনৈতিক ভাষা ব্যবহার না করেই স্পষ্ট করেন তাঁর অবস্থান। তিনি জানান, ইউক্রেনের যুদ্ধ পরিস্থিতি শান্তির পথে নিয়ে যেতে হলে বাস্তবতা মেনে নিতে হবে। ন্যাটোর দ্বার আপাতত ইউক্রেনের জন্য বন্ধ, এই বার্তাই তিনি দেন বৈঠকের আগেই।
রাশিয়ার শর্তে সমাধান খুঁজছেন ট্রাম্প
মার্কিন বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ জানিয়েছেন, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইতিমধ্যেই কিছু শর্ত মেনে নিয়েছেন। তবে ইউক্রেনের ন্যাটো সদস্যপদে রাশিয়ার কড়া আপত্তি অপরিবর্তিত। ট্রাম্পের লক্ষ্য হল, এই অবস্থার মধ্যে একটি স্থায়ী শান্তি চুক্তির সম্ভাবনা তৈরি করা। তবে তাতে ইউক্রেনকে ছাড় দিতে হবে অনেক ক্ষেত্রেই।
পুতিন-ট্রাম্প বৈঠকের ইতিবাচক সুর
সম্প্রতি আলাস্কায় ট্রাম্প ও পুতিন প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে বৈঠক করেন। যদিও সরাসরি কোনো যুদ্ধবিরতির সিদ্ধান্ত হয়নি, দু’পক্ষই একে ‘ইতিবাচক’ এবং ‘ফলপ্রসূ’ বৈঠক বলেই বর্ণনা করেছে। ট্রাম্পের মতে, যুদ্ধ থামাতে হলে ইউক্রেনকে কিছু কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হবে। পুতিনও ইঙ্গিত দিয়েছেন, ভবিষ্যতের শান্তি চুক্তিতে তিনি নিরাপত্তা গ্যারান্টি দিতে রাজি।
ইউক্রেনের প্রধান দাবি নিরাপত্তা
রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধে বিরতি চাইছে ইউক্রেন, তবে তাদের শর্ত স্পষ্ট—নিরাপত্তা গ্যারান্টি। জেলেনস্কি মনে করছেন, দীর্ঘস্থায়ী শান্তি কেবল তখনই সম্ভব যদি আমেরিকা ও ইউরোপের দেশগুলো নিশ্চিত করে যে রাশিয়া আর আক্রমণ করবে না। কিন্তু ট্রাম্পের বক্তব্য অনুযায়ী, ক্রিমিয়া ফেরানো বা ন্যাটোর দরজা খোলা আপাতত একেবারেই সম্ভব নয়।
ইউরোপীয় মিত্রদের আপত্তি
ট্রাম্পের প্রস্তাবিত ‘যুদ্ধবিরতি ছাড়াই শান্তি আলোচনা’ পরিকল্পনায় ইউরোপের কিছু মিত্র দেশ আপত্তি তুলেছে। তাদের মতে, ইউক্রেনকে দুর্বল অবস্থায় বসতে বাধ্য করা হলে রাশিয়ার প্রভাব আরও বাড়বে। তবে ট্রাম্পের যুক্তি, “রাশিয়া একটি বড় শক্তি। তাই যুদ্ধ থামাতে হলে কৌশলগত ছাড় দিতেই হবে।” এই অবস্থান নিয়েই বিভাজন তৈরি হয়েছে আমেরিকার মিত্রদের মধ্যে।
ভবিষ্যৎ শান্তিচুক্তির ইঙ্গিত
স্টিভ উইটকফ দাবি করেছেন, পুতিন সম্ভাব্য এক শান্তি চুক্তির অংশ হিসাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তরফে ইউক্রেনকে ‘শক্তিশালী নিরাপত্তা গ্যারান্টি’ মেনে নিতে রাজি হয়েছেন। পাশাপাশি তিনি রাশিয়ার পক্ষ থেকে ইউরোপে আর কোনো আগ্রাসন না করার বিষয়ে ‘আইনগত নিশ্চয়তা’ দিতে প্রস্তুত। এই প্রস্তাব কার্যকর হলে ইউক্রেনের যুদ্ধ পরিস্থিতি ভিন্ন মোড় নিতে পারে।
ট্রাম্পের অবস্থান নিয়ে বিশ্বজুড়ে চর্চা
ট্রাম্পের স্পষ্ট অবস্থান ঘিরে আন্তর্জাতিক মহলে আলোচনা তুঙ্গে। ইউক্রেনের যুদ্ধবিধ্বস্ত পরিস্থিতিতে ন্যাটো সদস্যপদই ছিল জেলেনস্কির মূল ভরসা। কিন্তু ট্রাম্পের এই ঘোষণায় সেই আশা কার্যত শেষ হয়ে গেল। এখন দেখার বিষয়, ইউক্রেন এই চাপের মুখে রাশিয়ার শর্তে কতটা সমঝোতা করতে রাজি হয়।