পাকিস্তানের রাজনীতিতে নতুন উত্তেজনা চিন-আমেরিকার মাঝে মুনিরের কূটনৈতিক খেলা অভ্যুত্থান ঘিরে গুঞ্জন

পাকিস্তানের রাজনীতিতে নতুন উত্তেজনা চিন-আমেরিকার মাঝে মুনিরের কূটনৈতিক খেলা অভ্যুত্থান ঘিরে গুঞ্জন

পাকিস্তানের সেনাপ্রধান আসিম মুনির সম্প্রতি নিজেকে ফিল্ড মার্শাল ঘোষণার পর থেকেই দেশজুড়ে রাজনৈতিক অস্থিরতা বেড়েছে। নানা মহলে জল্পনা শুরু হয়েছে—তিনি কি সত্যিই এক ‘মেগা’ রাজনৈতিক ধাক্কার প্রস্তুতি নিচ্ছেন? পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি আসিফ আলি জারদারিকে সরানোর মতো পদক্ষেপ নেবেন কি মুনির? তবে এ ব্যাপারে সেনাপ্রধান স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, এসব শুধু গুজব, বাস্তবতার সঙ্গে যার কোনও যোগ নেই। তাঁর মতে, একাধিক শক্তি একযোগে সরকার ও সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বাতাবরণ তৈরির চেষ্টা করছে।

আমেরিকা ও চিনের কূটনৈতিক ভারসাম্য

পাকিস্তানের ভবিষ্যৎ রাজনীতিতে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন এখন মুনিরের বিদেশনীতি। তিনি সাফ জানিয়েছেন, পাকিস্তান এক বন্ধুকে অন্য বন্ধুর জন্য কখনও ছেড়ে দেবে না। অর্থাৎ আমেরিকার সঙ্গে সম্পর্ক যতই গভীর হোক না কেন, পুরনো মিত্র চিনকে পাকিস্তান কোনওদিনও পাশে ফেলে দেবে না। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই বার্তাই ইঙ্গিত করছে যে, ইসলামাবাদ আগামী দিনে ওয়াশিংটন ও বেইজিং— দুই শক্তিধর দেশের সঙ্গে সমান দূরত্ব বজায় রাখার কৌশল নিয়েই এগোতে চাইছে।

অভ্যুত্থানের জল্পনা ও জারদারিকে সরানোর অভিযোগ

জুলাই মাস থেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় অভ্যুত্থান নিয়ে নানা গুঞ্জন ছড়াতে থাকে। অভিযোগ ওঠে, মুনির নাকি রাষ্ট্রপতি জারদারিকে পদত্যাগে বাধ্য করে নিজেই দেশের শীর্ষ পদে বসতে চাইছেন। যদিও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহসিন নকভি এই জল্পনা উড়িয়ে দিয়েছেন। তাঁদের দাবি, সেনাপ্রধানের বিরুদ্ধে ছড়ানো এসব খবরের কোনও ভিত্তি নেই।

ব্রাসেলসে সেনাপ্রধানের স্পষ্ট বার্তা

‘জং’ সংবাদমাধ্যমের কলামিস্ট সুহেল ওয়ারাইচ তাঁর সাম্প্রতিক লেখা প্রকাশ্যে এনেছেন এক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। তাঁর দাবি, ব্রাসেলসে এক বৈঠকে নিজেই মুনির বলেছেন—এই সব আলোচনা একেবারেই ভিত্তিহীন। একই শক্তি দেশের ভেতরে রাজনৈতিক অস্থিরতা ছড়াতে চাইছে। মার্কিন সফর শেষে কিছু সময় বেলজিয়ামে কাটিয়েছিলেন মুনির, সেখানেই বিভিন্ন মহলের সঙ্গে বৈঠকে বসে তিনি পরিস্থিতি পরিষ্কার করে দেন।

রাজনৈতিক পুনর্মিলনের প্রসঙ্গে মুনির

পাকিস্তানের রাজনীতিতে বিভাজন দীর্ঘদিনের। ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) কার্যত কোণঠাসা হয়ে আছে। এ প্রসঙ্গে মুনির জানিয়েছেন, সত্যিকারের রাজনৈতিক পুনর্মিলন সম্ভব তখনই, যখন আন্তরিকভাবে ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চাওয়া হবে। যদিও তিনি সরাসরি ইমরান খানের নাম নেননি, তবে রাজনৈতিক মহলের ধারণা—এই মন্তব্য আসলে কারাবন্দি ইমরান ও তাঁর দলের উদ্দেশেই। সেনাপ্রধান স্পষ্ট জানিয়ে দেন, তিনি দেশের রক্ষক, অন্য কোনও রাজনৈতিক পদ তাঁর কাম্য নয়।

আমেরিকা-চিন দ্বন্দ্বের মাঝখানে পাকিস্তানের কূটনৈতিক দিশা

বিদেশনীতি নিয়ে মুনিরের অবস্থান বেশ স্পষ্ট। তিনি জানিয়ে দিয়েছেন, পাকিস্তান একইসঙ্গে আমেরিকা ও চিনের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করবে। এ ক্ষেত্রে কোনও পক্ষপাতিত্ব হবে না। তাঁর ভাষায়, ‘‘আমরা একজন বন্ধুকে অন্য বন্ধুর জন্য ত্যাগ করব না।’’ মুনির এমনকি আমেরিকার প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শান্তি প্রচেষ্টারও প্রশংসা করেছেন। তাঁর দাবি, নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য ট্রাম্পকে প্রথম মনোনীত করেছিল পাকিস্তান, এরপরই অন্যান্য দেশ একই পথে হেঁটেছিল।

ভারতের উপর সম্ভাব্য প্রভাব

এই ঘটনাপ্রবাহ ভারতের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। একদিকে পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অস্থিরতা, অন্যদিকে দুই মহাশক্তির সঙ্গে সম্পর্ক সামলানোর চাপ—সব মিলিয়ে ইসলামাবাদের পরবর্তী পদক্ষেপ সরাসরি প্রভাব ফেলতে পারে দক্ষিণ এশিয়ার কূটনীতিতে। ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক যেখানে নাজুক, সেখানে মুনিরের বিদেশনীতি এবং রাজনৈতিক কৌশল আগামী দিনে নয়াদিল্লির জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে বলেই মনে করছেন কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।

Leave a comment