বহু দিন আগের কথা, এক ঘন সবুজ জঙ্গল ছিল। সেখানে নানা ধরনের পশু বাস করত – সিংহ, হাতি, খরগোশ, শেয়াল, বাঁদর, ময়ূর এবং অনেক পাখি। জঙ্গলে সবাই নিজের নিজের কাজে ব্যস্ত থাকত, কিন্তু একটা সমস্যা ছিল – পশুদের মধ্যে পারস্পরিক ঐক্য ছিল না। কেউ কাউকে সাহায্য করত না, এবং সবাই নিজের লাভের কথা ভাবত।
একদিন, জঙ্গলে এক নতুন শিকারী এল। সে ছিল ধূর্ত এবং রোজ কোনো না কোনো পশুকে তার জালে ফাঁসাত। প্রথমে তো সবাই ভাবল যে হয়তো এটা কিছু দিনের ব্যাপার, কিন্তু যখন বিপদ বাড়তে লাগল, তখন পশুরা বুঝতে পারল যে এখন কিছু করতে হবে।
বিপদের ঘণ্টা
শিকারী রোজ জঙ্গলে জাল পেতে পশুদের ধরত। পশুরা ভয় পেত, কিন্তু কেউ কিছু করতে পারত না। একদিন সিংহের স্ত্রীও জালে আটকা পড়ে গেল। সিংহের খুব রাগ হল, কিন্তু সে একা ছিল এবং কিছু করতে পারল না। এরই মধ্যে হাতির একটা বাচ্চাও হারিয়ে গেল। এখন সব পশুদের মনে ভয় ঢুকলো। তারা বুঝতে পারল যে যদি তারা একজোট না হয়, তাহলে শিকারী এক-এক করে সবাইকে ধরবে এবং জঙ্গল জনশূন্য হয়ে যাবে।
সভার আয়োজন
খরগোশ, যে খুব বুদ্ধিমান ছিল, সে একদিন সব পশুদের ডাকল এবং বলল, 'আমাদের এখন এক হয়ে লড়তে হবে। শিকারীকে উচিত শিক্ষা দিতে হবে।' প্রথমে তো কিছু পশু রাজি হল না, কারণ তারা ভয় পাচ্ছিল। কিন্তু যখন সিংহ এবং হাতির মতো বড় পশুরা সমর্থন করল, তখন সবাই রাজি হয়ে গেল। তারা একসঙ্গে একটা পরিকল্পনা করল। সবাইকে নিজের নিজের কাজ দেওয়া হল — কেউ নজর রাখবে, কেউ জাল কাটতে সাহায্য করবে, এবং কেউ শিকারীর মনোযোগ অন্যদিকে সরিয়ে দেবে।
পরিকল্পনার শুরু
শিকারী পরের দিন আবার জাল পাতল, কিন্তু এইবার পশুরা একসঙ্গে একটা পরিকল্পনা করেছিল। বাঁদর গাছের উপর থেকে নজর রাখছিল, শেয়াল শিকারীর পিছনে পিছনে যাচ্ছিল, এবং হাতি জোরে জোরে আওয়াজ করছিল যাতে মনোযোগ সরে যায়। ওদিকে, খরগোশ এবং তার বন্ধুরা চুপচাপ এসে জাল কাটতে লাগল। কিছুক্ষণ পর জালে আটকে থাকা সব পশু মুক্ত হয়ে গেল। এটা teamwork এবং ঐক্যের কারণে সম্ভব হল, যার ফলে শিকারীকে খালি হাতে ফিরতে হল।
শিকারীকে শিক্ষা
শিকারী রোজের মতো জাল নিয়ে জঙ্গলে এল, কিন্তু এইবার পরিস্থিতি বদলে গেছে। সব পশু একসঙ্গে তার উপর নজর রাখছিল। যেই শিকারী জাল পাতল, সিংহ এবং হাতি তার সামনে এসে দাঁড়াল এবং জোরে গর্জন করল। এটা দেখে শিকারী খুব ভয় পেয়ে গেল। সে বুঝতে পারল যে এখন জঙ্গলের পশুরা ভয় পায় না, বরং একজোট হয়ে মোকাবিলা করে। সে সঙ্গে সঙ্গে তার জিনিসপত্র তুলে নিয়ে সেখান থেকে পালিয়ে গেল এবং আর কখনো ফিরে আসেনি। এইভাবে পশুদের ঐক্য জঙ্গলকে শিকারীর হাত থেকে মুক্তি দিল।
জঙ্গলে খুশির মহল
জঙ্গলে এখন সবকিছু বদলে গেছে। পশুরা বুঝতে পেরেছিল যে একা কেউ নিরাপদ নয়, কিন্তু একসঙ্গে তারা যেকোনো বিপদের মোকাবিলা করতে পারে। এখন যখন কোনো সমস্যা আসত, তখন সব পশু একসঙ্গে সমাধান করত। যদি কেউ অসুস্থ হত, তাহলে অন্যেরা তার দেখাশোনা করত। কেউ রাস্তা হারিয়ে গেলে, সবাই মিলে তাকে খুঁজে বের করত। এখন জঙ্গলে ভয়ের জায়গায় ভরসা এবং বন্ধুত্ব স্থান করে নিয়েছে। সবাই মিলেমিশে থাকত এবং জঙ্গলে আবার সুখ ফিরে এসেছিল।
ছোটোদের অবদানও বড়ো হয়
প্রত্যেক পশুর, সে ছোটো হোক বা বড়ো, কোনো না কোনো বিশেষত্ব অবশ্যই থাকে। খরগোশ যদিও শক্তিশালী ছিল না, কিন্তু তার বুদ্ধি এবং সাহস সবাইকে একজোট করেছিল এবং শিকারীর হাত থেকে বাঁচিয়েছিল। এর থেকে আমরা এই শিক্ষা পাই যে যখন আমরা একসঙ্গে কোনো সমস্যার মোকাবিলা করি, তখন কোনো অসুবিধাই বড়ো হয় না। ছোটো ছোটো চেষ্টাও একসঙ্গে অনেক বড়ো পরিবর্তন আনতে পারে।
গল্প থেকে কী শিখলাম?
- ঐক্যে শক্তি: যখন সবাই মিলে পরিকল্পনা করল, তখন শিকারীকে হারানো গেল।
- সবার অবদান জরুরি: সে সিংহ হোক বা খরগোশ, প্রত্যেকের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
- ভয় থেকে নয়, বুদ্ধি দিয়ে লড়তে হয়: আবেগের বশে নয়, ভেবেচিন্তে পরিকল্পনা করতে হয়।
- ছোটো-বড়োর পার্থক্য করো না: নেতৃত্বের ক্ষমতা কারো আকারের উপর নির্ভর করে না।