ইউপিআই ফ্রি নিয়ে ধোঁয়াশা কাটল না প্রশ্নে দেশবাসীর কপালে চিন্তার ভাঁজ

ইউপিআই ফ্রি নিয়ে ধোঁয়াশা কাটল না  প্রশ্নে দেশবাসীর কপালে চিন্তার ভাঁজ

গত মাসে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর সঞ্জয় মালহোত্রার মন্তব্য ঘিরে দেশজুড়ে তৈরি হয়েছিল জল্পনার ঝড়। তাঁর ইঙ্গিত ছিল, বহুল প্রচলিত ইউপিআই পেমেন্ট প্ল্যাটফর্ম ভবিষ্যতে হয়তো চিরকাল নিখরচায় থাকবে না। খরচ বহন করবে হয় সরকার, নয়তো ব্যবহারকারী। এই বক্তব্যের পরই আর্থিক মহল থেকে সাধারণ মানুষ—সবার মনে একই প্রশ্ন, অনলাইন পেমেন্টের জন্য কি গ্যাঁটের কড়ি গুনতে হবে?

ব্যাঙ্কগুলির চার্জ ‘পেমেন্ট এগ্রিগেটর’-এর ঘাড়ে — গোপন খরচের ছায়া

অভ্যন্তরীণ সূত্রের দাবি, আইসিআইসিআই, অ্যাক্সিস বা ইয়েস ব্যাঙ্কের মতো শীর্ষ ব্যাঙ্কগুলি ইতিমধ্যেই ইউপিআই চার্জ চাপিয়ে দিচ্ছে রেজ়রপে, পেইউ বা ক্যাশফ্রি-র মতো পেমেন্ট এগ্রিগেটরদের উপর। ফলে আশঙ্কা বাড়ছিল—এই অতিরিক্ত খরচ ভবিষ্যতে ব্যবসায়ী বা সরাসরি গ্রাহকদের ঘাড়ে এসে পড়বে কি না। পরিস্থিতি এমন জায়গায় পৌঁছেছিল যে আর্থিক প্রযুক্তি মহলেই গুঞ্জন শুরু হয়ে গিয়েছিল, ‘নিখরচা ইউপিআই’-এর দিন হয়তো শেষের পথে।

গভর্নরের নতুন ব্যাখ্যা — ‘ফ্রি’ নয়, খরচ দিচ্ছে অন্য কেউ

বুধবার ঋণনীতি কমিটির বৈঠকের পর সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে সঞ্জয় মালহোত্রা এই জল্পনায় খানিক জল ঢাললেন। তাঁর বক্তব্য, ইউপিআই চিরকাল ‘ফ্রি’ থাকবে না—এমন কিছু তিনি বলেননি। বরং পরিষ্কার জানালেন, ইউপিআই কখনওই বিনা খরচের ছিল না, নেই, ভবিষ্যতেও থাকবে না। শুধু সেই খরচটা অন্য কেউ দিচ্ছে। এককভাবে বা যৌথভাবে—কেউ না কেউ প্রতিদিন কোটি কোটি মানুষের এই লেনদেন সচল রাখতে অর্থ ব্যয় করছে।

কে সেই ‘অন্য কেউ’? — উত্তর এড়িয়ে গেলেন সঞ্জয় মালহোত্রা

সবচেয়ে বড় প্রশ্নের মুখে, অর্থাৎ এই খরচ বহন করছে ঠিক কে—সে বিষয়ে সরাসরি জবাব এড়িয়ে গেলেন গভর্নর। তাঁর বক্তব্য, “কে দিচ্ছে সেটা গুরুত্বপূর্ণ বটে, কিন্তু এতটাও গুরুত্বপূর্ণ নয়। খরচটা ঠিক সময়ে মিটিয়ে দেওয়া হচ্ছে, সেটাই মূল কথা।” পাশাপাশি তিনি ইঙ্গিত দিলেন, কেন্দ্রীয় সরকারও এই খরচে ভর্তুকি দিচ্ছে যাতে ইউপিআই ব্যবহারের গতি কমে না যায়।

আমজনতার পকেট থেকে টাকা যাবে কি না — স্পষ্ট উত্তর দিলেন গভর্নর

মূল প্রশ্নে ফের ফিরে এসে সঞ্জয় মালহোত্রা জানালেন, অতীতে তিনি কখনও বলেননি, এখনো বলছেন না যে আমজনতাকেই এই খরচ বহন করতে হবে। তাঁর মতে, কেন্দ্র ইউপিআই লেনদেন আরও প্রসারিত করতে চায় এবং সেই জন্য রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক ও সরকার মিলিতভাবে পদক্ষেপ নিচ্ছে। তবে তাঁর এই আশ্বাসের পরেও, ভবিষ্যতে নীতিগত পরিবর্তন হলে পরিস্থিতি কতটা বদলাবে, তা নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে।

ইউপিআই ব্যবহারে রেকর্ড — জুলাই মাসে শীর্ষে ভারত

ন্যাশনাল পেমেন্টস কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়ার (NPCI) তথ্য বলছে, জুলাই মাসে ভারতে ইউপিআই লেনদেনের সংখ্যা ছুঁয়েছে সর্বকালীন রেকর্ড—১৯৪৭ কোটি ট্রানজ়্যাকশন, যার আর্থিক মূল্য প্রায় ২৫.০৮ লক্ষ কোটি টাকা। এই পরিসংখ্যানই স্পষ্ট করে দিচ্ছে, ডিজিটাল লেনদেন এখন দেশের অর্থনৈতিক রক্তস্রোতে মিশে গেছে। তাই ইউপিআই খরচ সংক্রান্ত যেকোনও নীতিগত পরিবর্তন সরাসরি প্রভাব ফেলতে পারে কোটি কোটি ভারতীয়ের দৈনন্দিন জীবনে।

Leave a comment