আমেরিকা ৯ই জুলাইয়ের মধ্যে ভারতের মতো দেশগুলিকে ট্যাক্স ডিলের শেষ নোটিশ পাঠিয়েছে। চুক্তি না হলে ২৬% শুল্ক (ট্যারিফ) কার্যকর করা হবে। বাণিজ্য, কৃষক এবং জিএম শস্যের উপর প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
শুল্ক চুক্তি: ভারত ও আমেরিকার মধ্যে বাণিজ্য নিয়ে চলমান অনিশ্চয়তা এখন এক চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে। মার্কিন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, ৯ই জুলাই পর্যন্ত যে দেশগুলির সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি সম্পন্ন হবে না, তাদের উপর পূর্বনির্ধারিত শুল্ক হার পুনরায় চালু করা হবে। ভারত সহ এক ডজনেরও বেশি দেশ বর্তমানে শেষ মুহূর্তের চেষ্টা চালাচ্ছে, যাতে এই বিপুল পরিমাণ ট্যাক্স থেকে বাঁচা যায়।
আমেরিকা কেন নতুন শুল্ক আরোপ করছে?
২রা এপ্রিল, আমেরিকা বিদেশি পণ্যের উপর নতুন শুল্কের হার কার্যকর করে। মার্কিন সরকারের যুক্তি হল, অন্যান্য দেশগুলি আমেরিকার পণ্যের উপর উচ্চ হারে ট্যাক্স আরোপ করে, যেখানে তারা নিজেরাই কম হারে ব্যবসার অনুমতি দেয়। এই অসমতা দূর করতে আমেরিকা বিশ্বজুড়ে দেশগুলিকে ৯০ দিনের সময় দিয়েছিল। এখন সেই সময়সীমা শেষ হতে চলেছে এবং ১লা আগস্ট থেকে আমেরিকা ট্যাক্সের নতুন হার কার্যকর করতে চলেছে।
ট্রাম্পের হুঁশিয়ারি: ট্যাক্স ১০% থেকে ৭০% পর্যন্ত
রাষ্ট্রপতি ট্রাম্প বলেছেন যে, তিনি শুক্রবার থেকে ১০ থেকে ১২টি দেশকে চিঠি পাঠানো শুরু করবেন, যেখানে ১লা আগস্ট থেকে তাদের পণ্যের উপর কত ট্যাক্স আরোপ করা হবে তা জানানো হবে। এই শুল্ক ১০% থেকে শুরু করে ৭০% পর্যন্ত হতে পারে। যে দেশগুলির সঙ্গে কোনো সমঝোতা হবে না, তাদের পুরনো উচ্চ হারের সম্মুখীন হতে হবে।
ভারতের অবস্থান কী?
ভারতের জন্য এই বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ আমেরিকা প্রতি বছর ভারত থেকে প্রায় ৫৩ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করে। যদি চুক্তি না হয়, তাহলে ভারতের প্রায় সব প্রধান পণ্যের উপর ২৬% পর্যন্ত ট্যাক্স লাগতে পারে। এর ফলে ওষুধ, টেক্সটাইল, অটো পার্টস-এর মতো ক্ষেত্রগুলি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
চুক্তিতে সবচেয়ে বড় বাধা: জিএম শস্যের সমস্যা
ভারত ও আমেরিকার মধ্যে চুক্তি প্রায় চূড়ান্ত, তবে সবচেয়ে বড় বাধা হল জিএম (Genetically Modified) শস্য নিয়ে। আমেরিকা চায় যে ভারত জিএম ভুট্টা এবং সয়াবিনের আমদানি করুক। যেখানে ভারতের যুক্তি হল, জিএম শস্যের উপর নিষেধাজ্ঞা কৃষকদের জীবিকা ও খাদ্য নিরাপত্তার সঙ্গে সম্পর্কিত একটি বিষয়। এই কারণেই ভারত এই শর্ত মানতে দ্বিধা বোধ করছে।
বৈশ্বিক বাণিজ্যের উপর প্রভাব
এই শুল্ক নীতি শুধুমাত্র ভারত নয়, বরং বিশ্ব বাণিজ্যর জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। চুক্তিবিহীন দেশগুলির ব্যাপক ক্ষতি হতে পারে। আমেরিকা ইতিমধ্যেই চীনের উপর ৫৫% পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করেছে, যেখানে ভিয়েতনাম থেকে সরাসরি আমদানির উপর ২০% ট্যাক্স এবং চীন হয়ে আসা পণ্যের উপর ৪০% ট্যাক্স নেওয়া হচ্ছে।
এ পর্যন্ত আমেরিকা ইউকে এবং ভিয়েতনামের সঙ্গে একটি সমঝোতা করেছে। চীনের সঙ্গে শর্তাবলীতে কিছুটা নমনীয়তা এসেছে, তবে শুল্ক এখনও উচ্চ স্তরে রয়েছে। এই দেশগুলির তুলনায় ভারতকে দ্রুত তাদের অবস্থান স্পষ্ট করতে হবে।
যদি চুক্তি না হয়, তাহলে কী হবে?
যদি ভারত ৯ই জুলাইয়ের মধ্যে আমেরিকার সঙ্গে কোনো চুক্তি করতে না পারে, তাহলে তার অনেক পণ্যের উপর ২৬% পর্যন্ত শুল্ক কার্যকর হবে। এর ফলে ভারতীয় রপ্তানিকারকদের উপর বিশাল চাপ পড়বে এবং বিশ্ব বাজারে তাদের প্রতিযোগিতা দুর্বল হতে পারে।
সমান্তরাল আইনি চ্যালেঞ্জ
তবে, আমেরিকার এই নীতির বিরুদ্ধে আইনি চ্যালেঞ্জও এসেছে। একটি মার্কিন আদালত রাষ্ট্রপতি ট্রাম্পের শুল্ক নীতিকে অসাংবিধানিক ঘোষণা করেছে। কিন্তু পরবর্তী শুনানি ৩১শে জুলাই হওয়ার কথা এবং তত দিন পর্যন্ত এই নীতিগুলি কার্যকর থাকবে।
শিল্প মহলের প্রতিক্রিয়া
CII (কনফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ান ইন্ডাস্ট্রি)-এর সভাপতি রাজীব মেমানি বলেছেন যে, প্রতিটি বিষয়ে ১০০% সাফল্য সম্ভব নয়। সমঝোতা অনেক পর্যায়ে হবে এবং যে বিষয়গুলির রাজনৈতিক প্রভাব বেশি, সেগুলি আলাদাভাবে সমাধান করা হবে। অন্যদিকে, মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট বলেছেন যে, ভারত ও আমেরিকার মধ্যে চুক্তি এখন অনেক কাছাকাছি পৌঁছেছে।