উত্তরাখণ্ডে লাগাতার ভারী বৃষ্টি পরিস্থিতিকে অত্যন্ত কঠিন করে তুলেছে। নদীর জলস্ফীতি এবং বিভিন্ন স্থানে ভূমিধসের কারণে চারধাম যাত্রায় যাওয়া তীর্থযাত্রীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
চার ধাম যাত্রা: উত্তরাখণ্ডে গত কয়েক দিন ধরে চলা প্রবল বৃষ্টিপাতের কারণে চারধাম যাত্রা স্থগিত করা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামী নিজেই এই সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, চারধাম যাত্রা আপাতত স্থগিত করা হচ্ছে। আবহাওয়া স্বাভাবিক এবং রাস্তাগুলি নিরাপদ হওয়ার পরেই যাত্রা পুনরায় শুরু হবে।
আসলে, উত্তরাখণ্ডে লাগাতার বৃষ্টির কারণে পার্বত্য অঞ্চলে পরিস্থিতি বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে। ভূমিধস, ধ্বংসস্তূপ পতন এবং রাস্তা ভেঙে যাওয়ার মতো ঘটনা ঘটেছে, যার ফলে চারধামে যাওয়া তীর্থযাত্রীদের জীবন ঝুঁকির মধ্যে পড়তে পারত। এটি বিবেচনা করে সরকার একটি বড় সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং যাত্রা সাময়িকভাবে স্থগিত করেছে।
তীর্থযাত্রীদের সুরক্ষা সবার আগে
মুখ্যমন্ত্রী স্পষ্ট করেছেন যে তীর্থযাত্রীদের সুরক্ষা তাদের সরকারের অগ্রাধিকার। মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, সমস্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটদের সতর্ক থাকতে এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা দলগুলিকে মোতায়েন রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এনডিআরএফ এবং এসডিআরএফ দলগুলি ঘটনাস্থলে উপস্থিত রয়েছে, যাতে কোনো জরুরি পরিস্থিতিতে দ্রুত সাহায্য পাঠানো যায়।
সোনপ্রয়াগে ৪০ জন যাত্রীর উদ্ধার
এই পরিস্থিতিতে, সোনপ্রয়াগ থেকে একটি স্বস্তির খবর পাওয়া গেছে, যেখানে ভূমিধসের কারণে কেদারনাথ থেকে ফিরতি পথে ৪০ জনের বেশি যাত্রী আটকে পড়েছিলেন। সোমবার গভীর রাতে হঠাৎ ভূমিধসের কারণে রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়, যার ফলে যাত্রীরা ধ্বংসস্তূপের মধ্যে আটকে পড়েন। খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই এসডিআরএফ দল রাতেই ঘটনাস্থলে পৌঁছে এবং ঝুঁকি নিয়ে উদ্ধার অভিযান চালিয়ে সকল যাত্রীকে নিরাপদে উদ্ধার করে।
এসডিআরএফ-এর এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, “প্রবল বৃষ্টির কারণে রাত প্রায় ১০টায় রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়। তবে আমাদের দলগুলি দ্রুত পদক্ষেপ নেয় এবং সারা রাত ধরে চলা অভিযানের পরে সকল তীর্থযাত্রীকে নিরাপদ স্থানে পৌঁছে দেয়।”
উত্তরাখণ্ডে আবহাওয়ার তাণ্ডব অব্যাহত
উত্তরাখণ্ডে এই মুহূর্তে বর্ষা তার পুরো শক্তি নিয়ে সক্রিয় রয়েছে। চামোলি জেলার বদ্রীনাথ হাইওয়েতে বিভিন্ন স্থানে ভূমিধসের কারণে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। চামোলি পুলিশ জানিয়েছে যে বদ্রীশ হোটেলের কাছে ভারী ধ্বংসস্তূপের কারণে হাইওয়ে অবরুদ্ধ হয়ে গেছে। যমুনোত্রী জাতীয় সড়কের অবস্থাও খারাপ। পুলিশের বক্তব্য, সিলি ব্যান্ড এবং ওজরীর মধ্যে রাস্তার একটি অংশ ভেসে গেছে, যার ফলে রাস্তা সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে গেছে। উত্তরকাশী পুলিশের মতে, যমুনোত্রী হাইওয়ে দুটি স্থানে বন্ধ রয়েছে এবং রাস্তা খুলতে সময় লাগতে পারে।
রাজ্য সরকার স্পষ্ট করেছে যে চারধাম যাত্রা তখনই পুনরায় শুরু করা হবে, যখন সমস্ত পথ সম্পূর্ণরূপে নিরাপদ এবং যাত্রী চলাচলের উপযুক্ত হবে। ঘটনাস্থলে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা দল, পুলিশ বাহিনী, বন বিভাগ এবং স্থানীয় প্রশাসন সম্পূর্ণ তৎপরতার সঙ্গে কাজ করছে। স্থানীয় প্রশাসন তীর্থযাত্রী এবং পর্যটকদের প্রতি আবেদন জানিয়েছে যে, সরকারি অনুমতি এবং আবহাওয়ার পূর্বাভাস ছাড়া যেন তারা যাত্রা শুরু না করেন। যে সকল তীর্থযাত্রী ভ্রমণের পরিকল্পনা করেছিলেন, তাদের আবহাওয়া সম্পূর্ণ স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত নিজ গন্তব্যে থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
আবহাওয়া দফতর আগামী ৪৮ ঘন্টার মধ্যে ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে, যা পরিস্থিতি আরও খারাপ করতে পারে। প্রশাসন ড্রোন এবং আধুনিক সরঞ্জামের সাহায্যে পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছে, যাতে কোনো জরুরি অবস্থায় দ্রুত উদ্ধার করা যায়।