উত্তরাখণ্ডে ভূমিধসের গুরুতর সমস্যা মোকাবেলার জন্য কেন্দ্র সরকার ১২৫ কোটির প্রকল্প অনুমোদন করেছে। পাঁচটি স্পর্শকাতর এলাকায় অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে ত্রাণকার্য চলবে।
Uttarakhand: উত্তরাখণ্ডের স্পর্শকাতর পাহাড়ি এলাকায় প্রতি বছর বর্ষাকালে ভূমিধসের কারণে জীবন ও সম্পত্তি এবং পরিকাঠামোর ব্যাপক ক্ষতি হয়। এই সমস্যার সমাধানে কেন্দ্র সরকার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে। রাজ্য সরকারের বিভিন্ন ভূমিধস কবলিত অঞ্চলের জন্য ১২৫ কোটি টাকার একটি প্রকল্প মঞ্জুর করেছে কেন্দ্র। এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য হল - রাজ্যের দুর্যোগপ্রবণ এলাকাগুলিতে ভূমিধসের ঝুঁকি কমানো এবং স্থায়ী সমাধানের দিকে কাজ করা।
মুখ্যমন্ত্রী ধামীর কেন্দ্র সরকারের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন
মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামী কেন্দ্র সরকারের এই সিদ্ধান্তকে উত্তরাখণ্ডের জন্য 'গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ' বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, এই প্রকল্প কেবল ভূমিধসের ঘটনা কমাবে না, বরং ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের নিরাপত্তা এবং পরিবহন ব্যবস্থাকেও জোরদার করবে। ধামী আরও জানান, প্রথম পর্যায়ে অনুসন্ধান এবং বিস্তারিত প্রকল্প রিপোর্ট (DPR) তৈরির জন্য ৪.৫ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে।
এই ৫টি স্থানকে অগ্রাধিকার
রাজ্য সরকার এই প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ে পাঁচটি অতি সংবেদনশীল স্থানকে অগ্রাধিকার দিয়েছে, যেগুলি বিগত বছরগুলিতে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে:
- মনসা দেবী হিল বাইপাস রোড (হরিদ্বার): এই রাস্তাটি কাंवড় যাত্রার সময় বিকল্প পথ হিসাবে ব্যবহৃত হয় এবং এই অঞ্চলে ভূমিধসের কারণে হাজার হাজার তীর্থযাত্রী ও স্থানীয় মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হন।
- গালোজি জলবিদ্যুৎ প্রকল্প রোড (মুসৌরি): দেরাদুন-মুসৌরি সড়কে অবস্থিত এই এলাকায় বর্ষাকালে ক্রমাগত ভূমিধস হয়, যার কারণে যান চলাচল বার বার ব্যাহত হয় এবং পরিকাঠামোর ক্ষতি হয়।
- বহুগুণা নগর ভূমিধস অঞ্চল (কর্ণপ্রয়াগ, চামোলি): ভূতাত্ত্বিকভাবে অত্যন্ত অস্থির এই অঞ্চল আবাসিক ভবন এবং রাস্তার জন্য বিপজ্জনক হয়ে উঠছে।
- চার্টন লজ অঞ্চল (নৈনিতাল): সেপ্টেম্বর ২০২৩-এ এখানে বড় ভূমিধস হয়েছিল, যার কারণে অনেক পরিবারকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিতে হয়েছিল। একটানা বৃষ্টি এবং জল নিষ্কাশনের সমস্যা প্রধান কারণ হিসেবে বিবেচিত হয়েছে।
- খোতিলা-ঘাটধার অঞ্চল (ধারচুলা, পিথোরাগড়): ভারত-নেপাল সীমান্তে অবস্থিত এই এলাকা বৃষ্টি এবং ক্ষয়ের কারণে গুরুতর ভূমি ক্ষয়ের সম্মুখীন। এটি কেবল সীমান্ত সুরক্ষা নয়, স্থানীয় জীবনের জন্যও বিপজ্জনক হয়ে উঠছে।
স্থানীয় জনসংখ্যা ও পরিকাঠামোর ব্যাপক ক্ষতি
এই পাঁচটি অঞ্চলে আনুমানিক প্রায় ৫০,০০০ মানুষের জীবন প্রভাবিত হয়। বার বার ভূমিধসের কারণে শুধু প্রাণের ঝুঁকি থাকে না, রাস্তাঘাট, বিদ্যুৎ প্রকল্প এবং অন্যান্য জরুরি পরিকাঠামোও নষ্ট হয়ে যায়। বিশেষ করে দেরাদুন-মুসৌরি সড়কের গালোজি অঞ্চলে প্রতি বছর বর্ষাকালে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায় এবং পর্যটকদের অসুবিধা হয়।
প্রকল্পের প্রযুক্তিগত প্রস্তুতি ও অনুমোদনের প্রক্রিয়া
উত্তরাখণ্ড রাজ্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ (USDMA) এবং উত্তরাখণ্ড ল্যান্ডস্লাইড মিটিগেশন অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট সেন্টার (ULMMC) এই প্রকল্পের বিস্তারিত প্রস্তাব তৈরি করেছে। এরপর এটি জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ (NDMA) এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাছে পাঠানো হয়। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের তত্ত্বাবধানে এই প্রকল্পটি অনুমোদিত হয়েছে।