হুড়মুড়িয়ে ধেয়ে আসা কাদার ধ্বংসযজ্ঞের মধ্যেও শোনা গেল একটানা বাঁশির আওয়াজ, কেন করছিলেন এমন? প্রশ্ন ঘোরে নেটদুনিয়ায়
হুড়মুড়িয়ে এল ধস, ভেসে গেল জনপদ
উত্তরকাশীতে প্রবল বৃষ্টিপাত ও কাদার হড়পা বানে একের পর এক গ্রাম মুহূর্তে ধুয়ে-মুছে শেষ। বাড়ি, হোটেল, দোকান— সবই কাদার স্রোতে তলিয়ে গেল। একের পর এক ভিডিও ভাইরাল হচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়ায়, যেখানে দেখা যাচ্ছে প্রকৃতির ভয়াবহ রূপ। এই দৃশ্য দেখেই কেঁপে উঠছে সাধারণ মানুষের মন।
সব নীরবতার মাঝে শুধুই বাঁশির আওয়াজ!
দূর পাহাড়ি জনপদে, যেখানে নেই মোবাইল নেটওয়ার্ক বা আধুনিক সংকেত ব্যবস্থার নাগাল, সেখানেই বহু প্রজন্ম ধরে চলে আসছে এক অনন্য রীতির চর্চা। ভূমিধস হোক বা আকস্মিক বন্যা কিংবা দাবানলের মতো বিপদ— একে অপরকে সতর্ক করতে গ্রামের মানুষ তুলে নেন সেই চেনা বাঁশি।
চিৎকারে বিভ্রান্তি, বাঁশিতে নির্ভুল বার্তা
পাহাড়ি এলাকায় চিৎকার করলে সেটি প্রতিধ্বনি হয়ে যায়। কখনও তা বিপদের বার্তা হিসেবে নয়, গণ্ডগোল বলে ধরে নেয় কেউ কেউ। তাই সহজে বোঝার জন্য বাঁশির আওয়াজ সবচেয়ে কার্যকর। শুধু মানুষ নয়, পশুপাখিরাও নাকি এই বাঁশির শব্দে সতর্ক হয়ে যায়, এমন বিশ্বাসও আছে পাহাড়িদের।
বাঁশির আওয়াজ ছড়ায় তরঙ্গের মতো, তৈরি হয় সতর্কতার শৃঙ্খল
যখন এক ব্যক্তি বাঁশি বাজান, তখন পাশের মানুষটিও সতর্ক হয়ে বাঁশি বাজাতে শুরু করেন। এর ফলে তৈরি হয় এক ধরণের ‘সাউন্ড চেন’— এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে বিপদের বার্তা। একটানা বাঁশির আওয়াজ তখন হয়ে ওঠে পাহাড়ি জনপদের প্রাণরক্ষা সঙ্কেত।
দুর্যোগ ব্যবস্থায় বাঁশি হতে পারে সস্তা ও কার্যকর সমাধান
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই প্রথাকে আধুনিক বিপর্যয় ব্যবস্থার অংশ করে তোলা যেতে পারে। যদি প্রত্যেক গ্রামে বাঁশি বাজানোর সুনির্দিষ্ট নিয়ম ও সংকেত নির্ধারণ করা হয়, তাহলে কম খরচে গড়ে তোলা যেতে পারে দুর্যোগের আগাম বার্তা দেওয়ার এক শক্তিশালী মাধ্যম।
এক বাঁশির গল্পে উঠে এল পাহাড়ের সংগ্রামের ইতিহাস
একটি ভিডিও, একটি বাঁশির আওয়াজ— তাতেই যেন ধরা পড়ে গেল পাহাড়ি জনপদের যুগান্তকারী অভিজ্ঞতা। প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গে যুগের পর যুগ ধরে যুঝে যাওয়ার এক আদি পন্থাই হয়ে উঠেছে এই বাঁশি। হোক সে সংকেত, হোক সে প্রার্থনা— এই সুর যেন আজও জিইয়ে রেখেছে মানুষের আশার আলো।