ভদোদরায় ৪৩ বছরের পুরনো সেতু ভেঙে ভয়াবহ দুর্ঘটনা, নিহত ২

ভদোদরায় ৪৩ বছরের পুরনো সেতু ভেঙে ভয়াবহ দুর্ঘটনা, নিহত ২

গুজরাটের ভদোদরায় বুধবার সকালে একটি মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে, যখন ভদোদরা এবং আনন্দকে সংযোগকারী ৪৩ বছর পুরনো গম্ভীরা সেতুটি হঠাৎ ভেঙে পড়ে। বুধবার সকাল প্রায় ৭:৩০ মিনিটে মহিসাগর নদীর উপর নির্মিত গম্ভীরা সেতুর একটি অংশ হঠাৎ ধসে পড়ে, যার ফলে একটি বড় দুর্ঘটনা ঘটে। সেতুটি ভেঙে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে তার উপর দিয়ে যাওয়া দুটি ট্রাক, একটি গাড়ি এবং বেশ কয়েকটি দ্বি-চাকা বিশিষ্ট যান সরাসরি নদীতে পড়ে যায়। এই ভয়াবহ দুর্ঘটনায় ঘটনাস্থলেই দুজনের মৃত্যু হয়েছে, যেখানে তিনজন গুরুতর আহত হয়েছেন।

সেতু ভেঙে পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। স্থানীয় প্রশাসন, দমকল বিভাগ এবং ডুবুরি দল দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধার অভিযান শুরু করে। পাডরার পুলিশ পরিদর্শক বিজয় চরণ জানিয়েছেন যে, এখন পর্যন্ত চারজনকে উদ্ধার করা হয়েছে। তবে নদীতে কতগুলি যান পড়েছে, তা এখনো স্পষ্ট নয়, কারণ নদীর গভীরতা বেশি এবং জলের স্রোত তীব্র।

৪৩ বছর পুরনো ছিল সেতুটি

মহিসাগর নদীর উপর নির্মিত এই গম্ভীরা সেতুটি প্রায় ৪৩ বছর পুরনো ছিল এবং দীর্ঘদিন ধরে জরাজীর্ণ অবস্থায় ছিল। স্থানীয়দের মতে, সেতুটি বহুবার নড়াচড়া করত এবং এর মেরামতের বিষয়ে অনেকবার অভিযোগও করা হয়েছিল। কিন্তু কোনো পর্যায়েই এটিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি।

এছাড়াও, স্থানীয়রা জানিয়েছেন যে, সৌরাষ্ট্রের দিক থেকে আসা ভারী যানবাহন, টোল ট্যাক্স বাঁচানোর জন্য এই পুরনো সেতুটি ব্যবহার করত, যার ফলে এর উপর আরও বেশি চাপ পড়ছিল। আশ্চর্যের বিষয় হল, প্রশাসন সেতুর অবস্থা সম্পর্কে সম্পূর্ণ অবগত থাকা সত্ত্বেও এটিকে যান চলাচলের জন্য বন্ধ করেনি।

আগেই মিলেছিল অনুমোদন

এই দুর্ঘটনার পর প্রশাসনের কার্যকারিতা নিয়ে আরও একটি বড় প্রশ্ন উঠেছে। ভদোদরা কালেক্টরের মতে, এই সেতুর সমান্তরালে একটি নতুন সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা আগে থেকেই অনুমোদন করা হয়েছিল, কিন্তু এখন পর্যন্ত সেই কাজ শুরু হয়নি।

বর্তমানে, দুর্ঘটনার পরে বিকল্প পথের ব্যবস্থাও করা হয়নি, যার ফলে সাধারণ মানুষকে চলাচলে চরম দুর্ভোগের শিকার হতে হচ্ছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, বর্ষা শুরুর আগে প্রশাসন কোনো সতর্কতা দেখায়নি এবং সেতু নিয়ে কোনো ধরনের সতর্কবার্তা জারি করা হয়নি।

অবহেলার অভিযোগ

সেতু দুর্ঘটনার পর স্থানীয় মানুষ এবং সামাজিক সংগঠনগুলির মধ্যে তীব্র ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। তাঁদের মতে, সময় মতো যদি এই সেতুর মেরামত করা হতো বা যান চলাচল বন্ধ করা যেত, তাহলে এই প্রাণঘাতী দুর্ঘটনা এড়ানো যেত। লাগাতার অভিযোগ এবং সতর্কবার্তা সত্ত্বেও, প্রশাসন কোনো পদক্ষেপ নেয়নি এবং কোনো সুরক্ষার ব্যবস্থাও করেনি।

এখন যখন দুর্ঘটনা ঘটেছে, তখন প্রশাসনিক গাফিলতি নিয়ে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। এই দুর্ঘটনা কেবল মানুষের জীবন কেড়ে নেয়নি, বরং সরকারি ব্যবস্থার উদাসীনতাকেও প্রকাশ করেছে।

উদ্ধার অভিযান চলছে

বর্তমানে, ঘটনাস্থলে ত্রাণ ও উদ্ধারকাজ দ্রুত গতিতে চলছে। ডুবুরি দল নদীতে ডুবে যাওয়া যানবাহন এবং নিখোঁজদের সন্ধানে কাজ করছে। দুর্ঘটনার গুরুত্ব বিবেচনা করে জেলা প্রশাসন ঘটনার তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে, যাতে সেতু দুর্ঘটনার আসল কারণগুলি জানা যায়।

অন্যদিকে, স্থানীয় মানুষ এবং সমাজকর্মীরা এখন এই দুর্ঘটনার জন্য দায়ী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাচ্ছেন। তাঁদের মতে, এটি একটি সাধারণ দুর্ঘটনা নয়, বরং গাফিলতি ও অবহেলার ফল, যার মূল্য সাধারণ মানুষকে জীবন দিয়ে দিতে হয়েছে।

Leave a comment