রাজস্থানে বসুন্ধরা রাজের প্রত্যাবর্তন: সংঘ প্রধানের সঙ্গে সাক্ষাতে রাজনৈতিক জল্পনা তুঙ্গে

রাজস্থানে বসুন্ধরা রাজের প্রত্যাবর্তন: সংঘ প্রধানের সঙ্গে সাক্ষাতে রাজনৈতিক জল্পনা তুঙ্গে

রাজস্থানে বিজেপি-র রাজনীতি আপাতত যেন স্থির জল, কিন্তু ভেতরে ভেতরে চলছে নানা গুঞ্জন। অনেক রাজনৈতিক চরিত্র নিজেদের ভূমিকা পালনের সুযোগের অপেক্ষায় রয়েছে, তবে সবচেয়ে বেশি নজর একটি মুখেই কেন্দ্রীভূত — তিনি হলেন বসুন্ধরা রাজে।

জয়পুর: রাজস্থানের রাজনীতি এই মুহূর্তে উত্তাল। রাজ্যে বিজেপি-র অভ্যন্তরে নেতৃত্ব নিয়ে আলোচনা তুঙ্গে, এবং এরই মধ্যে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বসুন্ধরা রাজে আবার রাজনৈতিক মহলের চর্চার কেন্দ্রে। সম্প্রতি যোধপুরে থাকাকালীন রাজে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (RSS)-এর প্রধান মোহন ভাগবতের সঙ্গে দেখা করেন, যা প্রায় ২০ মিনিট ধরে চলে। এই সাক্ষাৎ তাঁর রাজনৈতিক 'নির্বাসন' থেকে ফেরার ইঙ্গিত হিসেবে দেখা হচ্ছে।

রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে রাজস্থান বিজেপি-তে নেতৃত্ব নির্বাচন, মহিলা নেতৃত্বের প্রয়োজন এবং শক্তিশালী জনসমর্থনের কারণে বসুন্ধরা রাজের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। রাজে গত সপ্তাহে ধौलপুরে একটি ধর্মীয় মঞ্চ থেকে বলেছিলেন, “জীবনে প্রত্যেকেরই নির্বাসন হয়, কিন্তু তা স্থায়ী নয়। নির্বাসন আসবে, আবার চলেও যাবে।” একইভাবে, তিনি গত মাসে দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে দেখা করে তাঁর পরিবর্তিত সম্পর্কের ইঙ্গিত দিয়েছিলেন।

সংঘ এবং বিজেপি-তে বসন্তরা রাজের প্রত্যাবর্তন

রাজনৈতিক বিশ্লেষক মণীশ গোঁধিয়ার মতে, বসুন্ধরা এবং মোহন ভাগবতের এই সাক্ষাৎ অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। তিনি বলেছেন, “তাঁদের মধ্যে ওয়ান-টু-ওয়ান সাক্ষাৎ হয়েছে, তাই এর ফলাফল কী হবে তা কেবল অনুমানের উপর ভিত্তি করে বলা যেতে পারে। তবে বিজেপি-তে বর্তমান ঘটনাবলী দেখলে একে জাতীয় সভাপতি নির্বাচনের এবং রাজের সম্ভাব্য দাবিদার হিসেবে দেখা যেতে পারে।”

সংঘ প্রধান সম্প্রতি বলেছেন যে আরএসএস বিজেপি-র অভ্যন্তরীণ বিষয়ে সরাসরি হস্তক্ষেপ করে না। তারা পরামর্শ দিতে পারে, কিন্তু সরকার চালানোর ক্ষেত্রে দলটি স্বাধীন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, যদিও জাতীয় সভাপতি নির্বাচন বিজেপি-র নিজস্ব বিষয়, তবুও সংঘের ভেটো এবং নির্দেশনা সবসময়ই গুরুত্বপূর্ণ হয়।

বসুন্ধরা রাজের রাজনৈতিক শক্তি

বসুন্ধরা রাজের রাজনৈতিক শক্তি এবং দাবিদারী বেশ কয়েকটি কারণে শক্তিশালী বলে মনে করা হয়:

  • শক্তিশালী জনসমর্থন এবং জাতিগত ভারসাম্য: রাজস্থানে রাজে নিজেকে "রাজপুতদের কন্যা, জাঠদের পুত্রবধূ এবং গুর্জরদের শ্যালিকা" হিসেবে বর্ণনা করেছেন। এটি তাঁর ব্যাপক জনসমর্থন এবং জাতিগত ভারসাম্যকে নির্দেশ করে।
  • সংগঠন এবং সরকারের অভিজ্ঞতা: রাজে রাজস্থান বিজেপি-র সংগঠন এবং প্রশাসনের উভয় ক্ষেত্রেই অভিজ্ঞতা রাখেন। তিনি ১৪ নভেম্বর ২০০২ থেকে ১৪ ডিসেম্বর ২০০৩ এবং ২ ফেব্রুয়ারী ২০১৩ থেকে ১২ ফেব্রুয়ারী ২০১৪ পর্যন্ত প্রদেশ সভাপতি হিসেবে সংগঠন পরিচালনা করেছেন। এছাড়াও, তিনি দুবার রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী এবং দুবার কেন্দ্রে মন্ত্রীও ছিলেন।
  • মহিলা নেতৃত্বের প্রয়োজন: বিজেপি-র জাতীয় সংগঠনে এখনো পর্যন্ত কোনও মহিলা সভাপতি হননি। ২০২৩ সালে দলটি সংসদে মহিলা সংরক্ষণ বিল পাশ করে মহিলা ভোটারদের মন জয়ের চেষ্টা করেছে। এমতাবস্থায়, বসুন্ধরা রাজে নিঃসন্দেহে মহিলা নেতৃত্বের ক্ষেত্রে একজন প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব।
  • সংঘের সাথে উন্নত সম্পর্ক: দীর্ঘকাল ধরে আড়ালে থাকলেও, রাজে সংঘ এবং কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক জোরদার করেছেন। এটি তাঁর রাজনৈতিক ধৈর্য এবং দূরদর্শিতাকে প্রকাশ করে।

বসুন্ধরা রাজের রাজনৈতিক সফর

বসুন্ধরা রাজের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা অত্যন্ত সমৃদ্ধ।

  • ১৯৮৫: ধौलপুর থেকে রাজস্থান বিধানসভায় প্রথমবার নির্বাচিত।
  • ১৯৮৯-১৯৯৯: ঝালাওয়াড় লোকসভা কেন্দ্র থেকে টানা পাঁচবার সাংসদ।
  • জালরাপাটা निर्वाचन ক্ষেত্র: চারবার বিধায়ক।
  • ১৯৯৮-১৯৯৯: বিদেশ প্রতিমন্ত্রী।
  • ১৯৯৯-২০০৩: ক্ষুদ্র শিল্প, প্রশাসনিক সংস্কার, লোক অভিযোগ, পারমাণবিক শক্তি, মহাকাশ এবং পরিকল্পনা বিভাগের মন্ত্রী।
  • ২০০৩: প্রথমবার রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী হন; রাজস্থানের প্রথম মহিলা মুখ্যমন্ত্রী।
  • ২০১৩-২০১৮: দ্বিতীয়বার মুখ্যমন্ত্রী।

রাজস্থান বিজেপি-র অভ্যন্তরে নেতৃত্ব নিয়ে বেশ কয়েকজন দাবিদার রয়েছেন। এমন সময়ে বসুন্ধরা রাজের সংঘ প্রধানের সঙ্গে সাক্ষাৎ রাজনৈতিক চর্চাকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, রাজের শক্তিশালী জনসমর্থন, সংগঠন এবং সরকার উভয় ক্ষেত্রেই অভিজ্ঞতা, মহিলা নেতৃত্বের প্রয়োজন এবং সংঘের সঙ্গে উন্নত সম্পর্ক তাঁকে বিজেপি-র মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা দিতে পারে।

Leave a comment