২০২৫ সালের উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনে এনডিএ-এর সি.পি. राधाकृष्णন এবং ইন্ডিয়া জোটের বি. সুদর্শন রেড্ডি একে অপরের মুখোমুখি। সাংসদরা ভোট দেবেন এবং গোপন ব্যালট ব্যবস্থার মাধ্যমে ফলাফল নির্ধারিত হবে। সন্ধ্যায় নতুন উপরাষ্ট্রপতি ঘোষণা করা হবে।
উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচন: ভারতের উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচন সাংবিধানিক দৃষ্টিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হয়। উপরাষ্ট্রপতি কেবল দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সাংবিধানিক পদই নন, রাজ্যসভার চেয়ারম্যান (Chairman of Rajya Sabha) হিসেবেও তার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। কোনো কারণে রাষ্ট্রপতি দায়িত্ব পালনে অক্ষম হলে উপরাষ্ট্রপতিই কার্যনির্বাহী রাষ্ট্রপতি (Acting President) হন। এইবার উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচন হচ্ছে কারণ বর্তমান উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখড় হঠাৎ ইস্তফা দিয়েছিলেন।
নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা
এইবার প্রতিদ্বন্দ্বিতা এনডিএ প্রার্থী সি.পি. राधाकृष्णন এবং ইন্ডিয়া জোটের বি. সুদর্শন রেড্ডির মধ্যে। সংসদ ভবনে মঙ্গলবার সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ চলবে। ভোটদান শেষ হওয়ার পর বিকেল ৬টা থেকে গণনা (Counting) শুরু হবে। সন্ধ্যায় স্পষ্ট হয়ে যাবে দেশের নতুন উপরাষ্ট্রপতি কে হবেন।
সাধারণ নির্বাচন থেকে ভিন্ন প্রক্রিয়া
উপরাষ্ট্রপতির নির্বাচন সাধারণ নির্বাচন থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। এতে জনগণ ভোট দেয় না, বরং সংসদের সদস্য অর্থাৎ লোকসভা এবং রাজ্যসভার সাংসদরা ভোট দেন। এই প্রক্রিয়ায় আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (Proportional Representation) প্রযোজ্য এবং ভোটদান গোপন ব্যালট পদ্ধতিতে একক হস্তান্তরযোগ্য ভোট ব্যবস্থার (Single Transferable Vote System) মাধ্যমে করা হয়।
সাংসদরা কীভাবে ভোট দেন
ভোটদানের প্রক্রিয়াটি বেশ ভিন্ন। উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনের জন্য সাংসদদের সাদা রঙের ব্যালট পেপার দেওয়া হয়। ব্যালট পেপারে প্রার্থীদের নাম হিন্দি এবং ইংরেজি উভয় ভাষাতেই লেখা থাকে। সাংসদদের তাদের পছন্দ সংখ্যার (Numbers) মাধ্যমে লিখতে হয়। উদাহরণস্বরূপ, কোনো সাংসদের প্রথম পছন্দ যদি প্রার্থী A হন, তবে তিনি তার নামের সামনে ১ লিখবেন এবং দ্বিতীয় পছন্দের জন্য ২ লিখবেন। "এক" বা "দুই" এর মতো শব্দ লিখলে ভোটটি অবৈধ বলে গণ্য হবে।
কে পোস্টাল ব্যালটে ভোট দিতে পারেন
সাধারণত সাংসদদের নিজে সংসদ ভবনে এসে ভোট দিতে হয়। তবে, যদি কোনো সাংসদ প্রতিরোধমূলক হেফাজতে (Preventive Detention) থাকেন, তবে তাকে পোস্টাল ব্যালটের (Postal Ballot) মাধ্যমে ভোট দেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়। বর্তমান নির্বাচনে শেখ আব্দুল রশিদ (বারামুলা) এবং অমৃতপাল সিং (খডুর সাহিব) জেলে থাকায় তারা পোস্টাল ব্যালটের অধিকার পেয়েছেন।
গণনা প্রক্রিয়া
ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার এক ঘণ্টা পর গণনা শুরু হয়। এতে প্রথমে সমস্ত ব্যালট পেপার বাছাই করে বৈধ এবং অবৈধ ভোট আলাদা করা হয়। এরপর বৈধ ভোটের ভিত্তিতে কোটা (Quota) নির্ধারণ করা হয়। কোটা বের করার সূত্র হল—মোট বৈধ ভোটকে দুই দিয়ে ভাগ করে তার সাথে এক যোগ করা। উদাহরণস্বরূপ, যদি ৭৫০টি বৈধ ভোট থাকে, তবে কোটা হবে ৩৭৬।
যে প্রার্থী প্রথম পছন্দের (First Preference) ভোটে কোটার বেশি ভোট পান, তাকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। যদি প্রথম রাউন্ডে কেউ সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পান, তবে সর্বনিম্ন ভোট পাওয়া প্রার্থীকে বাদ দেওয়া হয় এবং তার ভোট দ্বিতীয় পছন্দের (Second Preference) ভিত্তিতে বাকি প্রার্থীদের মধ্যে হস্তান্তর করা হয়। এই প্রক্রিয়া চলতে থাকে যতক্ষণ না কোনো প্রার্থী সংখ্যাগরিষ্ঠতা পান।
কখন ভোট অবৈধ হয়ে যায়
- উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বিভিন্ন পরিস্থিতিতে ভোট অবৈধ (Invalid) হয়ে যায়।
- যদি কোনো প্রার্থীর সামনে অগ্রাধিকার ১ লেখা না থাকে।
- যদি একাধিক প্রার্থীর সামনে ১ লেখা হয়।
- যদি অগ্রাধিকার শব্দে লেখা হয়।
- যদি নম্বর এমনভাবে লেখা হয় যা তার পরিচয় সন্দেহজনক করে তোলে।
- যদি ব্যালট পেপারে এমন কোনো চিহ্ন আঁকা থাকে যা থেকে বোঝা যায় কে ভোট দিয়েছেন।
পোস্টাল ব্যালটের ক্ষেত্রেও যদি সাংসদের স্বাক্ষর বা জেল কর্মকর্তার প্রমাণপত্র না থাকে, তবে সেই ভোটও অবৈধ বলে গণ্য হবে।
দলত্যাগ আইন প্রযোজ্য নয়
রাষ্ট্রপতি এবং উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রার্থীরা দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করেন না। তাই কোনো দলই তাদের সাংসদদের জন্য হুইপ (Whip) জারি করতে পারে না। এর মানে হল, সাংসদরা নিজেদের ইচ্ছানুযায়ী যেকোনো প্রার্থীকে ভোট দিতে পারেন। এই নির্বাচনে দলত্যাগ আইন (Anti-Defection Law) প্রযোজ্য নয়। অর্থাৎ, ক্রস ভোটিং করার পরেও সাংসদের সদস্যপদ ঝুঁকির মুখে পড়ে না।