শুধু যোগাসন করলেই হবে না
নির্মেদ, ছিপছিপে চেহারা ও স্বাস্থ্যবান শরীর সকলেই চান। পুজোর সময় যেমন উৎসবের আবহ থাকে, তেমনি নিজেদের নতুন ভাবে দেখানোর ইচ্ছাও বেড়ে যায়। তবে শুধু যোগাসন করলে দেহ চেহারার পরিবর্তন ঘটে না। পর্যাপ্ত ঘুম না হওয়া, শরীরচর্চার প্রতি উদাসীনতা এবং বাইরে থেকে বেশি ফাস্টফুড বা ভাজাপোড়া খাওয়া—এই সমস্ত অভ্যাস শরীরের মেদ বাড়ায়। তাই শুধু যোগাসনের উপর নির্ভর করলে চাহিদা পূরণ হয় না। রোগা হওয়ার জন্য ডায়েটের সঠিক নিয়ম মানা অপরিহার্য।
হাল্কা খাবার গ্রহণ করুন
যোগাসন করার সময় শরীরকে অতিরিক্ত খাদ্য দেওয়া ঠিক নয়। অতিরিক্ত খাওয়া করলে আসনের পরে ক্লান্তি বাড়ে এবং শরীর ঠিকমতো স্ট্রেচ করতে পারে না। তাই যোগাসনের আগে হাল্কা খাবার গ্রহণ করা সবচেয়ে উপকারী। এখানে কলা, গ্রিক ইয়োগার্ট, বেরিজাতীয় ফল ব্যবহার করা যেতে পারে। কলায় থাকা কার্বোহাইড্রেট শরীরকে শক্তি জোগায়, আর অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট উপাদান পেশিকে পুনরুজ্জীবিত রাখে। হাল্কা এবং পুষ্টিকর খাবার শরীরকে যোগাসনের সময় সঠিকভাবে কাজ করতে সাহায্য করে।
পর্যাপ্ত জল পান করুন
যোগাসন বা অন্যান্য শরীরচর্চার সময় শরীরে জলের অভাব হলে নানা ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। জল কম থাকলে পেশিতে টান লাগতে পারে, স্ট্রেচিংয়ের সময় চোটের ঝুঁকি বেড়ে যায় এবং পেশির ব্যথা ও যন্ত্রণার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়। তাই প্রতিটি সেশন শুরু করার আগে এবং পরে পর্যাপ্ত পরিমাণে জল পান করা অত্যন্ত জরুরি। দিনে অন্তত ৮-১০ গ্লাস পানি গ্রহণ করলে শরীর হাইড্রেটেড থাকে, যা চর্বি পোড়ানো এবং শক্তি উৎপাদনে সহায়ক।
প্রোটিনে ভরপুর ডায়েট
রোগা হওয়ার জন্য প্রোটিন অপরিহার্য। শরীরচর্চার সময় প্রোটিন শরীরের মাংসপেশী বজায় রাখতে সাহায্য করে এবং চর্বি পোড়াতে সহায়ক। তাই ডায়েটে মাছ, মাংস, ডিম এবং ডাল অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। ওজন কমানোর সময় কার্বোহাইড্রেটের মাত্রা কম রাখা ভালো, যাতে শরীর প্রোটিন থেকে যথেষ্ট শক্তি পায়। বিশেষ করে সকালের নাশতা এবং যোগাসনের পর প্রোটিনযুক্ত খাবার গ্রহণ করলে পেশি শক্ত থাকে, চর্বি পোড়ানো কার্যকর হয় এবং দীর্ঘ সময় ক্ষুধা না লাগার অনুভূতি আসে।
ফলমূল ও সবজি অন্তর্ভুক্ত করুন
ডায়েটে পর্যাপ্ত ফলমূল ও সবজি রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এগুলো শুধু ভিটামিন ও মিনারেল সরবরাহ করে না, বরং দীর্ঘ সময় ধরে পেট ভর্তি রাখে। ফলমূল ও সবজি খাওয়ার মাধ্যমে শরীরে অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট এবং ফাইবার সরবরাহ হয়, যা হজমে সহায়তা করে এবং ওজন কমানোর প্রক্রিয়াকে সহজ করে। প্রতিদিন ৫-৬ ধরনের রঙিন সবজি এবং হালকা ফলমূল খেলে শরীরের ভিটামিন ব্যালেন্স ঠিক থাকে।
নিয়মিত সময়ে খাবার ও ছোট পরিমাণে গ্রহণ
ওজন কমানোর জন্য একবারে বড় পরিমাণ খাবার না খাওয়া শ্রেয়। দিনের মধ্যে ৪-৫ বার হাল্কা খাবার খেলে শরীরের বিপাক ক্রিয়া (Metabolism) ঠিক থাকে। নিয়মিত সময়ে খাওয়া ও ছোট পরিমাণে খাবার গ্রহণ করলে যোগাসনের সময় শক্তি কমে না এবং পেশি কার্যকরভাবে কাজ করে। এছাড়া শরীর চর্বি পোড়াতে সক্ষম হয়।
নিয়মিত যোগাসন ও ডায়েট সংযোগ
শুধু যোগাসন করে ওজন কমানো সম্ভব নয়। যোগাসন এবং সঠিক ডায়েট একসাথে কাজ করলে শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে, পেশি শক্ত থাকে এবং মেদ কমে। প্রতিদিন অন্তত ৩০-৪৫ মিনিট যোগাসন করা উচিত। যোগাসনের সময় প্রোটিন, জল এবং হাল্কা খাবারের দিকে নজর দেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।রোগা হওয়ার জন্য ধৈর্য এবং সঠিক পদ্ধতি প্রয়োজন। যোগাসন করলেই হবে না, তার সাথে সঠিক ডায়েট, পর্যাপ্ত জল পান, প্রোটিনযুক্ত খাবার এবং ফলমূল ও সবজি অন্তর্ভুক্তি গুরুত্বপূর্ণ। পুজোর আগে ২-৩ কেজি কমানোর জন্য নিয়মিত যোগাসন এবং সঠিক ডায়েট একসাথে পালন করুন। স্বাস্থ্যকর অভ্যাস মেনে চললেই চেহারা চিপচিপে ও শক্তিশালী হবে, আর পরিশ্রম কখনও বিফলে যাবে না।