জোড়ার ব্যথায় নতুন আশা হিসেবে বায়োলজিক্যাল থেরাপি, বিশেষ করে পিআরপি (প্লেটলেট-রিচ প্লাজমা) থেরাপি উঠে আসছে। এতে রোগীর নিজের রক্ত থেকে প্লেটলেট এবং গ্রোথ ফ্যাক্টর বের করে ক্ষতিগ্রস্ত জয়েন্টে প্রয়োগ করা হয়। এটি ব্যথা কমায়, ফোলা কমায় এবং জয়েন্টের মেরামত করতে সাহায্য করে, কোনো সার্জারি ছাড়াই এবং কম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াসহ।
বায়োলজিক্যাল থেরাপি: ম্যাক্স হাসপাতালের অর্থোপেডিক বিশেষজ্ঞরা জানান যে, পিআরপি থেরাপি জয়েন্টের ব্যথা এবং অস্টিওআর্থারাইটিসে কার্যকর প্রমাণিত হচ্ছে। এতে রোগীর নিজের রক্ত থেকে প্লেটলেট এবং গ্রোথ ফ্যাক্টর বের করে ক্ষতিগ্রস্ত জয়েন্টে প্রয়োগ করা হয়, যার ফলে ব্যথা কমে এবং জয়েন্টের নড়াচড়া উন্নত হয়। হালকা এবং মাঝারি মাত্রার রোগীদের ক্ষেত্রে এটি সার্জারি ছাড়াই উপশম দেওয়ার একটি কার্যকর বিকল্প হয়ে উঠেছে।
পিআরপি থেরাপি কী
বায়োলজিক্যাল থেরাপির মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত পদ্ধতি হলো প্লেটলেট-রিচ প্লাজমা (পিআরপি) থেরাপি। ম্যাক্স হাসপাতালের অর্থোপেডিক বিভাগের ইউনিট হেড ড. অখিলেশ যাদবের মতে, পিআরপি থেরাপি শরীরের নিজস্ব ক্ষমতাকে ব্যবহার করে। এই প্রক্রিয়ায় রোগীর শরীর থেকে সামান্য রক্ত নেওয়া হয় এবং তাকে সেন্ট্রিফিউজে রেখে প্লেটলেট এবং গ্রোথ ফ্যাক্টর আলাদা করা হয়। এই ঘনীভূত পিআরপি দ্রবণ সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত জয়েন্টে ইনজেক্ট করা হয়। এতে ফোলা কমে, জয়েন্টের ব্যথা হ্রাস পায় এবং মেরামতের প্রক্রিয়া দ্রুত হয়।
পিআরপি থেরাপি কীভাবে কাজ করে
প্লেটলেট সাধারণত রক্ত জমাট বাঁধতে এবং ক্ষত নিরাময়ে ব্যবহৃত হয়, তবে এগুলিতে গ্রোথ ফ্যাক্টরও থাকে। এই গ্রোথ ফ্যাক্টরগুলি জয়েন্ট এবং আশেপাশের টিস্যুগুলির মেরামতে সাহায্য করে। কোষগুলির পুনঃগঠন প্রক্রিয়া দ্রুত হওয়ার ফলে জয়েন্টের নড়াচড়া উন্নত হয় এবং রোগী দ্রুত আরাম পান।
কার জন্য কার্যকর
বিশেষজ্ঞরা জানান যে, হালকা এবং মাঝারি মাত্রার অস্টিওআর্থারাইটিস রোগীদের জন্য পিআরপি থেরাপি সবচেয়ে বেশি উপকারী। অনেক ক্ষেত্রে দেখা গেছে যে এই থেরাপির পর ব্যথার উল্লেখযোগ্য হ্রাস ঘটে। জয়েন্টের কার্যক্ষমতা উন্নত হয় এবং রোগীরা সহজে দৈনন্দিন কাজ করতে পারেন।
পিআরপি থেরাপির সুবিধা
- সার্জারির প্রয়োজন নেই: এই থেরাপির মাধ্যমে অপারেশন ছাড়াই জয়েন্টের মেরামত সম্ভব।
- পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া অত্যন্ত কম: যেহেতু এতে শরীরের নিজস্ব রক্ত ব্যবহার করা হয়, তাই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ন্যূনতম হয়।
- দৈনন্দিন কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া যায়: রোগীরা তাদের কাজকর্ম এবং জীবনযাত্রাকে প্রভাবিত না করেই চিকিৎসা নিতে পারেন।
- দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব: কিছু ক্ষেত্রে এর প্রভাব দীর্ঘ সময় ধরে থাকে।
- ক্ষয়প্রাপ্ত জয়েন্টগুলি আবার কাজ করতে শুরু করে: জয়েন্টগুলির শক্তি এবং নড়াচড়া উন্নত হয়।
ড. অখিলেশ যাদব বলেছেন যে, পিআরপি থেরাপি অনেক রোগীর জীবনে উন্নতি এনেছে। তবে, প্রতিটি রোগীর জন্য এই চিকিৎসা সঠিক নাও হতে পারে। এর কার্যকারিতা জয়েন্টের অবস্থা, বয়স এবং স্বাস্থ্যের উপর নির্ভর করে। তাই এটি গ্রহণ করার আগে ডাক্তারের সাথে সম্পূর্ণ পরামর্শ করা অত্যন্ত জরুরি।
বায়োলজিক্যাল থেরাপি বনাম সার্জারি
সাধারণ সার্জারিতে জয়েন্ট প্রতিস্থাপন বা অপারেশনের মাধ্যমে মেরামত করা হয়, যেখানে সময়, খরচ এবং দীর্ঘ পুনরুদ্ধারের প্রক্রিয়া জড়িত থাকে। অন্যদিকে, পিআরপি থেরাপি প্রাকৃতিক উপায়ে শরীরের নিজস্ব ক্ষমতাকে ব্যবহার করে। এতে রোগী দ্রুত সক্রিয় হয়ে ওঠেন এবং পুনরুদ্ধারের সময় খুব কম হয়।