যোগী আদিত্যনাথ: উত্তর প্রদেশে দীর্ঘতম সময়ের মুখ্যমন্ত্রী

যোগী আদিত্যনাথ: উত্তর প্রদেশে দীর্ঘতম সময়ের মুখ্যমন্ত্রী

যোগী আদিত্যনাথ উত্তর প্রদেশে দীর্ঘতম সময়ের মুখ্যমন্ত্রী থাকার রেকর্ড গড়েছেন। তিনি পন্ডিত গোবিন্দ বল্লভ পন্থের ৮ বছর ১২৭ দিনের রেকর্ড ভেঙে ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন।

CM Yogi Adityanath: উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ একটি ঐতিহাসিক কৃতিত্ব অর্জন করেছেন। তিনি এখন রাজ্যের দীর্ঘতম সময় ধরে মুখ্যমন্ত্রী পদে থাকা নেতা। তিনি দেশের প্রথম স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং উত্তর প্রদেশের প্রথম মুখ্যমন্ত্রী পন্ডিত গোবিন্দ বল্লভ পন্থের ৮ বছর এবং ১২৭ দিনের রেকর্ড ভেঙে দিয়েছেন। যোগী ৮ বছর, ৪ মাস এবং ১০ দিনের বেশি সময় ধরে মুখ্যমন্ত্রী পদে থেকে এই কীর্তি স্থাপন করেছেন।

এই রেকর্ড শুধুমাত্র পরিসংখ্যানের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং একটি প্রশাসনিক যাত্রাকে প্রতিফলিত করে, যা রাজ্যকে সুশাসন, আইন-শৃঙ্খলা এবং बुनियादी কাঠামোর দিক থেকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছে।

প্রধান মুখ্যমন্ত্রীদের তুলনায় যোগীর কার্যকাল

উত্তর প্রদেশের রাজনীতিতে এখনও পর্যন্ত অনেক মুখ্যমন্ত্রী রয়েছেন যারা দীর্ঘ সময় ধরে সেবা দিয়েছেন। কিন্তু যোগী আদিত্যনাথ সবাইকে ছাড়িয়ে গেছেন। পরিসংখ্যানে চোখ রাখলে:

  • গোবিন্দ বল্লভ পন্থ: ৮ বছর ১২৭ দিন
  • মায়াবতী: ৭ বছর ১১৪ দিন
  • মুলায়ম সিং যাদব: ৬ বছর ২৭৪ দিন
  • ডঃ সম্পূর্ণানন্দ: ৫ বছর ৩৪৫ দিন
  • অখিলেশ যাদব: ৫ বছর ৪ দিন
  • নারায়ণ দত্ত তিওয়ারি: ৩ বছর ৩১৪ দিন

যোগী আদিত্যনাথ সবাইকে পিছনে ফেলে এই রেকর্ড নিজের নামে করেছেন।

আইন-শৃঙ্খলার বড় উন্নতি

যোগী সরকারের সবচেয়ে বড় পরিচয় হল আইন-শৃঙ্খলার পরিস্থিতির উন্নতি করা। যে উত্তর প্রদেশকে একসময় অপরাধ এবং অরাজকতার জন্য জানা যেত, সেখানে আজ 'জিরো টলারেন্স' নীতির অধীনে অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এনকাউন্টার, মাফিয়াদের ওপর কড়া নজর এবং গ্যাংস্টার আইনের মাধ্যমে অপরাধ নিয়ন্ত্রণকে গুরুত্বের সঙ্গে প্রয়োগ করা হয়েছে।

ভিত্তিগত অবকাঠামোতে দ্রুত বিকাশ

যোগী সরকারের আমলে উত্তর প্রদেশে ভিত্তিগত অবকাঠামোর দ্রুত বিস্তার হয়েছে। পূর্বাঞ্চল এক্সপ্রেসওয়ে, বুন্দেলখণ্ড এক্সপ্রেসওয়ে, গঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে এবং দিল্লি-গাজিপুর করিডোরের মতো মেগা প্রকল্পগুলি রাজ্যকে বিনিয়োগ এবং সংযোগের ক্ষেত্রে শক্তিশালী করেছে। গোরখপুরে এইমস, ডিফেন্স করিডোর এবং ফিল্ম সিটির মতো প্রকল্পগুলি রাজ্যের অর্থনৈতিক দিক পরিবর্তনকারী হিসাবে বিবেচিত হচ্ছে।

সামাজিক প্রকল্পের প্রভাব

সরকারের প্রকল্পগুলি সরাসরি জনগণের কাছে পৌঁছেছে। প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা, উজ্জ্বলা যোজনা, মিশন শক্তি, কন্যা সুমঙ্গলা এবং বিনামূল্যে রেশন বিতরণ প্রকল্পের মতো কর্মসূচিগুলি প্রদেশের দরিদ্র, মহিলা এবং কৃষকদের জীবনে বড় পরিবর্তন এনেছে। একই সময়ে, One District One Product (ODOP) স্কিমের মাধ্যমে রাজ্যের হস্তশিল্প এবং ছোট শিল্পগুলি নতুন জীবন পেয়েছে।

ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক পুনর্জাগরণ

যোগী আদিত্যনাথের আমলে উত্তর প্রদেশ তার ধর্মীয় পরিচয়কেও শক্তিশালী করেছে। অযোধ্যায় শ্রী রাম মন্দির, কাশী বিশ্বনাথ করিডোর এবং মথুরা-বৃন্দাবন সৌন্দর্যায়ন-এর মতো কাজগুলি ধর্মীয় পর্যটনকে উৎসাহিত করেছে। এটি কেবল সাংস্কৃতিক গরিমা বৃদ্ধি করেনি, বরং কর্মসংস্থানের নতুন সুযোগও তৈরি করেছে।

বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানে নতুন সম্ভাবনা

'Invest UP'-এর মতো প্ল্যাটফর্ম এবং গ্লোবাল ইনভেস্টর সামিটের মাধ্যমে রাজ্যকে বিনিয়োগের নতুন কেন্দ্র করা হয়েছে। ২০২৩ সালে অনুষ্ঠিত গ্লোবাল ইনভেস্টর সামিটে ৩৫ লক্ষ কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ প্রস্তাব পাওয়া গেছে। এতে লক্ষ লক্ষ মানুষের কর্মসংস্থান হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

স্বাস্থ্য ও শিক্ষাখাতে চ্যালেঞ্জ এখনও বাকি

যোগী সরকার আইন-শৃঙ্খলা ও অবকাঠামোতে প্রশংসনীয় কাজ করলেও স্বাস্থ্য ও শিক্ষাখাতে এখনও অনেক উন্নতির প্রয়োজন রয়েছে। গ্রামীণ এলাকায় মানসম্পন্ন হাসপাতাল ও স্কুল এখনও একটি বড় চ্যালেঞ্জ। যদিও সরকার অনেক মেডিকেল কলেজ ও কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেছে, তবে এর প্রভাব ব্যাপকভাবে নজরে আসা এখনও বাকি।

যোগী আদিত্যনাথ এখন কেবল একজন মুখ্যমন্ত্রী নন, বরং একটি উন্নয়নশীল রাজ্যের নির্ণায়ক নেতা হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন। তাঁর প্রশাসনিক মডেল, 'উন্নয়ন ও আইনশৃঙ্খলার' সংমিশ্রণের প্রতীক হয়ে উঠেছে।

Leave a comment