আচার্য প্রমোদ কৃষ্ণমের তোপ, অখিলেশ যাদবের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ

আচার্য প্রমোদ কৃষ্ণমের তোপ, অখিলেশ যাদবের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ

উত্তর প্রদেশের বুলন্দশহরে একটি ব্যক্তিগত অনুষ্ঠানে কল্পি ধামের পীঠাধীশ্বর আচার্য প্রমোদ কৃষ্ণম সমাজবাদী পার্টির সভাপতি এবং প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদবের তীব্র সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, ২০১৭ সালে ‘দুই ছেলের জুটি’ (রাহুল গান্ধী-অখিলেশ যাদব)-এর দাবি হাওয়ায় উড়ে গিয়েছিল। ক্ষমতা দখলের জন্য শ্লোগান নয়, জনগণের হৃদয়ে প্রবেশ করতে হয়। প্রমোদ কৃষ্ণম সতর্ক করে বলেন, জাতিবাদ এবং রাজনৈতিক সমীকরণের জোরে কোনো সরকার টিকবে না। রাজ্যের মানুষ এই ধরনের রাজনীতি আর গ্রহণ করবে না।

কাওাড় যাত্রা নিয়ে প্রশ্ন

কাওাড় যাত্রা নিয়ে ওঠা মন্তব্য প্রসঙ্গে আচার্য প্রমোদ কৃষ্ণম বলেন, যদি কেউ এই ধর্মীয় তপস্যার অবমাননা করে, এটিকে ভুলভাবে উপস্থাপন করে, তবে তা বন্ধ করা উচিত। তিনি সরাসরি বলেন, সবার আগে অখিলেশ দেখুন, শ্রাবণ মাসে তিনি কতজন কাওাড়ীর সেবা করেছেন বা কতজনের পা টিপেছেন? তিনি মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের প্রশংসা করে বলেন, তিনিই প্রথম মুখ্যমন্ত্রী যিনি কাওাড়ীদের শ্রদ্ধার প্রতি সম্মান জানিয়েছেন এবং তাদের উপর পুষ্পবৃষ্টির ব্যবস্থা করেছেন।

সনাতন ধর্মের পুনরুত্থান হচ্ছে

আচার্য প্রমোদ কৃষ্ণম জোর দিয়ে বলেন, বর্তমান সময় জাতীয়তাবাদ এবং সনাতন ধর্ম পুনঃপ্রতিষ্ঠার সময়। তিনি স্পষ্ট করে বলেন, যদি কেউ সনাতনকে ধ্বংস করার কথা বলে এবং একই সাথে ক্ষমতা দখলের স্বপ্ন দেখে, তবে তা সম্ভব নয়। ধর্ম এবং ক্ষমতা একসাথে চলে না। শ্রাবণ মাসের শুরুতে তিনি সকলকে শিবের অভিষেক-এর শুভেচ্ছা জানান এবং বলেন, প্রত্যেক সনাতনীকে আজ এই পবিত্র অনুষ্ঠানে অংশ নিতে হবে।

নামের গুরুত্ব- ধর্মে লুকানো সত্যের প্রতি সম্মান

অনুষ্ঠানে তিনি নামের গুরুত্বের উপর জোর দেন। তিনি বলেন, জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত আমাদের প্রতিটি কাগজে—স্কুল, থানা, ভোটার তালিকা, পাসপোর্ট—নাম লেখা জরুরি। যদি কেউ নাম গোপন করে, আস্থার সুযোগ নিয়ে ব্যবসা করতে চায়, তবে সে সংবিধান, ধর্ম, রাষ্ট্র এবং পরমাত্মাকে ধোঁকা দিচ্ছে। আচার্য বলেন, মিথ্যার উপর ধর্মের ভিত্তি তৈরি হতে পারে না, এবং যারা এমনটা করে, তারা ধর্মের অপমান করে।

বিদেশী সংস্কৃতির অনুসারী

আচার্য প্রমোদ কৃষ্ণম অখিলেশ যাদবের সমালোচনা করে বলেন, তাঁর পরিবার ধার্মিক হতে পারে, কিন্তু অখিলেশ নিজে বিদেশী সংস্কৃতি দ্বারা প্রভাবিত। তিনি স্পষ্ট বার্তা দেন যে, তাঁকে এবং তাঁর দলকে সত্যিকারের শক্তিশালী হতে হলে জনমানসিকতা বুঝতে হবে এবং সকল শ্রেণী ও মতাদর্শের প্রতি সম্মান জানাতে হবে, অন্যথায় তিনি মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছেন।

ইডিএ-পিডিএ-কে নিশানা

প্রমোদ কৃষ্ণম বিরোধী জোট ইডিএ-পিডিএ-কে সনাতন ধর্ম ও হিন্দুদের মধ্যে বিভাজন তৈরির ষড়যন্ত্র হিসেবে অভিহিত করেন। তিনি বিশ্বাস করেন যে এই প্রচেষ্টা সফল হবে না কারণ ২০২৭ সালে লোক আদালত আবারও বিজেপিকে ক্ষমতা দেবে। এই সময় তিনি স্মরণ করিয়ে দেন যে, যখন অখিলেশ যাদব মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন, তখন সাধু-সন্ন্যাসীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল এবং তৎকালীন সরকার কল্পি ধামের নির্মাণও বন্ধ করে দিয়েছিল। তিনি প্রশ্ন তোলেন: এমন সময়ে অখিলেশ কোথায় ছিলেন, যখন শ্রদ্ধার ভিত্তিই ভেঙে দেওয়া হচ্ছিল?

বুলন্দশহরে আচার্য প্রমোদ কৃষ্ণমের মন্তব্য কেবল একটি বিবৃতি নয়, বরং উত্তর প্রদেশের রাজনীতিতে ধর্ম, বিশ্বাস এবং ক্ষমতার ভূমিকম্পের স্পষ্ট ইঙ্গিত। তিনি ধর্ম ও সংস্কৃতির পুনঃপ্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিয়ে রাজনীতি এবং ধর্মকে একসাথে চালানোর বিতর্কিত মডেলকে প্রত্যাখ্যান করেছেন। সময়ের সংবেদনশীলতা বিবেচনা করে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট এখন কেবল ভোটব্যাঙ্ক এবং জাতি নয়, বরং আস্থা, নাম এবং পরিচয়ের বিষয়গুলির উপর ভিত্তি করে তৈরি হচ্ছে। আগামী ২০২৭ সালের নির্বাচনের আগে এই বিতর্ক নির্বাচনী পরিবেশকে নতুন দিশা দিতে পারে।

Leave a comment