খাবার নয়, ভয়! পরিত্যক্ত শৌচালয়ই এখন অঙ্গনওয়াড়ি রান্নাঘর
পূর্ব বর্ধমানের পূর্বস্থলী-২ ব্লকের ধোবা গোয়ালপাড়া প্রাথমিক স্কুল চত্বরে অবস্থিত একটি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে ধরা পড়ল ভয়ঙ্কর স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘনের চিত্র। বহুদিন ধরে জীর্ণ ও দুর্গন্ধময় একটি পরিত্যক্ত শৌচালয়কে রান্নাঘর হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে, যেখানে প্রতিদিন তৈরি হয় শিশু ও অন্তঃসত্ত্বা মহিলাদের খাবার।
শৌচালয়ের কলের জলেই হচ্ছে ভাত রান্না! স্বাস্থ্য সচেতনতায় প্রশ্ন
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, শৌচালয়ের পাশে থাকা একটিমাত্র কল থেকেই নেওয়া হচ্ছে রান্নার জল। ওই জল কীভাবে জীবাণুমুক্ত রাখা হচ্ছে, তা নিয়ে উঠছে বড় প্রশ্ন। শিশুর পুষ্টিকর খাদ্য তৈরি হচ্ছে এমন জায়গায়, যেখানে আগে শৌচকর্ম হতো!
সহায়িকার স্বীকারোক্তি “গরমে ঘরে টেকা যায় না, তাই শৌচালয়ই ভরসা”
অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের সহায়িকা শ্রীমতী হেমব্রম নিজেই স্বীকার করেছেন, ঘরের চাল বৃষ্টিতে চুঁইয়ে পড়ে। সেখানে কাজ করা যায় না। শৌচালয়টি পরিত্যক্ত ছিল, তাই এই ব্যবস্থা। তিনি জানিয়েছেন, একাধিকবার ঘর নির্মাণের দাবি জানানো হলেও এখনও কোনও সুরাহা হয়নি।
আট দশকের রান্না সেই শৌচালয়ে! গ্যাস, হাঁড়ি আর দুর্গন্ধ একসঙ্গে
সাংবাদিকরা শুক্রবার ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখেন, গ্যাস সিলিন্ডার ও বড় হাঁড়ি নিয়ে চলছে রান্না। পাশেই রয়েছে ডিম, চাল-ডাল। কিন্তু চারপাশে ভুরভুরে গন্ধ এবং নোংরা পরিবেশ। খাবার নিতে আসা শিশুদের অভিভাবকরাও নিজেদের অসন্তোষ চেপে রাখতে পারেননি।
রহমান মল্লিকের আক্ষেপ ‘‘সবাই নিচ্ছে বলেই নিচ্ছি... এটা তো ঠিক নয়!’’
স্থানীয় বাসিন্দা রহমান মল্লিক বলেন, শিশুরা এই খাবার খায়। আর রান্না হচ্ছে একটা পরিত্যক্ত শৌচালয়ে! কলের জলও ওইখান থেকে নেওয়া হচ্ছে। প্রশাসনের উচিত অবিলম্বে বিকল্প ব্যবস্থা করা।
অন্তঃসত্ত্বা মহিলাদের আশঙ্কা: ‘‘দুর্গন্ধেই অসুস্থ বোধ করি’’
খাবার নিতে আসা একাধিক অন্তঃসত্ত্বা মহিলাও জানিয়েছেন, যদিও শৌচালয়টি আর ব্যবহৃত হয় না, তবুও মাঝেমধ্যে গন্ধ ছড়ায়। এক মহিলার মন্তব্য, আমরা সন্তানসম্ভবা। এই পরিবেশে কীভাবে নিরাপদ খাবার আশা করব?
নতুন রান্নাঘর ও বিকল টিউবওয়েলের প্রতিশ্রুতি, কিন্তু কবে?
স্থানীয় প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, বিষয়টি তাঁদের নজরে এসেছে এবং বিকল টিউবওয়েল মেরামতির পাশাপাশি বিকল্প রান্নাঘর তৈরির পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। কিন্তু এই কাজ কবে শুরু হবে, তার নির্দিষ্ট সময়সীমা নেই।
প্রশ্ন একটাই—শিশু ও গর্ভবতীদের মুখে এই খাবার? ন্যূনতম মানবিকতা কোথায়?
পুষ্টির নামে বিষ নয়, চাই নিরাপদ খাদ্য পরিবেশ। অঙ্গনওয়াড়ি প্রকল্পের মূল লক্ষ্য শিশু ও মায়ের স্বাস্থ্যরক্ষা। কিন্তু এই ধরনের উদাসীনতা সেই লক্ষ্যকে মাটিতে মিশিয়ে দিচ্ছে। প্রশাসনের এখনই হস্তক্ষেপ জরুরি।