ইনদওরগামী বিমানে হঠাৎ বিপদ
রবিবার সকালেই দিল্লি বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়ন করে ইনদওরগামী এয়ার ইন্ডিয়ার ফ্লাইট AI2913। উড্ডয়নের কিছুক্ষণের মধ্যেই ককপিটে সিগন্যাল আসে যে বিমানের ডানদিকের ইঞ্জিনে আগুন লেগেছে। মুহূর্তেই আতঙ্ক ছড়ায় যাত্রীদের মধ্যে। তবে পাইলট ও কেবিন ক্রুরা ধীরস্থিরভাবে পরিস্থিতি সামাল দেন।
অভিজ্ঞতার জোরে সিদ্ধান্ত পাইলটের
ফ্লাইট টেক-অফের পর এমন বিপজ্জনক পরিস্থিতি সামলানো সহজ নয়। কিন্তু পাইলট দ্রুত স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর মেনে ডানদিকের ইঞ্জিন বন্ধ করে দেন। একইসঙ্গে দিল্লিতে জরুরি অবতরণের সিদ্ধান্ত নেন। তাঁর এই সিদ্ধান্ত শতাধিক যাত্রীর প্রাণ বাঁচাল বলেই দাবি বিশেষজ্ঞদের।
যাত্রীদের নিরাপদ অবতরণ
অবশেষে দিল্লি বিমানবন্দরে নিরাপদে অবতরণ করে বিমানটি। যাত্রীরা ভীতসন্ত্রস্ত হলেও, তাঁদের কাউকে আঘাত পেতে হয়নি। সঙ্গে সঙ্গে এয়ার ইন্ডিয়ার পক্ষ থেকে যাত্রীদের অন্য বিমানে ইনদওর পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়। যাত্রীদের অনেকে এই ঘটনার ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করেন, যেখানে তাঁদের আতঙ্ক স্পষ্ট ধরা পড়েছে।
মুখপাত্রের সরকারি বিবৃতি
এয়ার ইন্ডিয়ার মুখপাত্র এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন— "৩১শে অগাস্ট দিল্লি থেকে ইনদওরগামী ফ্লাইট উড্ডয়নের কিছু সময় পরেই ককপিট ক্রুরা ইঞ্জিনে আগুন লাগার ইঙ্গিত পান। সেইমতো ইঞ্জিন বন্ধ করে দিল্লিতে ফেরানো হয় বিমানটি। যাত্রীদের নিরাপত্তা আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার।" মুখপাত্র আরও জানান, বিমানটিকে পরীক্ষা করার জন্য গ্রাউন্ডেড করা হয়েছে।
টাটা গ্রুপের বার্তা
টাটা গ্রুপের মালিকানাধীন এয়ার ইন্ডিয়া জানিয়েছে, ঘটনার বিষয়ে নিয়মকানুন মেনে নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে অবহিত করা হয়েছে। পাশাপাশি যাত্রীদের অসুবিধার জন্য দুঃখপ্রকাশও করেছে সংস্থা। এয়ার ইন্ডিয়া কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, "প্রতিটি যাত্রী এবং ক্রুর জীবন আমাদের কাছে সবকিছুর ঊর্ধ্বে।"
বিকল্প বিমানের ব্যবস্থা
আতঙ্কিত যাত্রীদের আশ্বস্ত করতে এয়ার ইন্ডিয়া দ্রুত বিকল্প বিমানের ব্যবস্থা করে। অনেক যাত্রী প্রথমে বিমানে ওঠার বিষয়ে দ্বিধা প্রকাশ করলেও পরে নিরাপত্তার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তাঁদের গন্তব্যে পাঠানো হয়। এই ঘটনায় যাত্রীদের আতঙ্ক কাটাতে সময় লাগবে বলেই মনে করছেন মনোবিজ্ঞানীরা।
অতীতে এমন অভিজ্ঞতা
উল্লেখ্য, এর আগেও ভারতের বিভিন্ন বিমানে মাঝআকাশে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা গেছে। তবে এবার ইঞ্জিনে আগুন লাগার ইঙ্গিত যে আতঙ্কের কারণ হয়ে উঠেছিল, তাতে সন্দেহ নেই। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দ্রুত সিদ্ধান্ত না নিলে বিমানটি ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখে পড়তে পারত।
যাত্রীদের বয়ান
ঘটনার পর কয়েকজন যাত্রী সংবাদমাধ্যমে জানান, উড্ডয়নের কিছুক্ষণের মধ্যেই বিমানের ভিতরে অস্বাভাবিক শব্দ ও কম্পন টের পান তাঁরা। কেবিন ক্রুরা সবাইকে সিটবেল্ট বাঁধতে বলেন। তারপরেই জরুরি অবতরণের ঘোষণা করা হয়। তাঁদের কথায়— সাতসকালেই ভেবেছিলাম আর হয়তো ঘরে ফিরতে পারব না। পাইলটের দক্ষতার জন্যই প্রাণে বেঁচে গেছি।
বিশেষজ্ঞদের মতামত
এভিয়েশন বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ভারতীয় বিমান সংস্থাগুলির নিরাপত্তা মান আরও শক্তিশালী করা প্রয়োজন। এয়ার ইন্ডিয়ার মতো অভিজ্ঞ সংস্থার ফ্লাইটে এমন ঘটনা যাত্রীদের মধ্যে ভয়ের সঞ্চার করে। তাঁরা বলছেন, দ্রুত এই বিমানের ইঞ্জিন পরীক্ষা করে সমস্যার মূল কারণ খুঁজে বের করতে হবে।
এয়ার ইন্ডিয়ার নতুন চ্যালেঞ্জ
এই ঘটনা এমন সময় ঘটল, যখন এয়ার ইন্ডিয়া আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পরিষেবার ক্ষেত্রেও কয়েকটি বড় পরিবর্তন আনছে। ১ সেপ্টেম্বর থেকে দিল্লি–ওয়াশিংটন ডিসি রুট বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। ফলে যাত্রী পরিষেবা ও নিরাপত্তা নিয়েই এখন সংস্থার উপর বাড়তি চাপ পড়ল বলেই মনে করছেন অনেকে।