১২ জুন ২০২৫… এই তারিখটি ভারতীয় বিমান চলাচল ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ দুর্ঘটনাগুলির মধ্যে একটি হয়ে উঠলো। এয়ার ইন্ডিয়ার ফ্লাইটটি যখন আহমেদাবাদ বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়ন করে, কেউ ঘুণাক্ষরেও টের পায়নি যে কিছুক্ষণের মধ্যেই ২৪১টি প্রাণ শেষ হয়ে যাবে।
আহমেতাবাদ: ১২ জুন ২০২৫ তারিখে ভারতের বিমান পরিবহন ইতিহাসে আরও একটি কালো দিন যোগ হল, যখন এয়ার ইন্ডিয়া ফ্লাইট ১৭১ আহমেদাবাদ বিমানবন্দর থেকে ওড়ার কিছুক্ষণ পরেই বিধ্বস্ত হয়। এই ভয়াবহ দুর্ঘটনায় ২৪১ জন যাত্রীর মৃত্যু হয়। তবে, দুর্ঘটনার এক মাস পার হতে চললেও ক্র্যাশের আসল কারণ সম্পর্কে কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি আসেনি এবং ব্ল্যাক বক্সের ডেটা থেকেও চূড়ান্ত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
ফ্লাইট তদন্ত এখনও অসম্পূর্ণ, ব্ল্যাক বক্স থেকে বড় কোনো সূত্র মেলেনি
সিয়াটেল-ভিত্তিক বিমান চলাচল বিশ্লেষণ সংস্থা The Air Current-এর একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, তদন্তকারীরা এখন ফুয়েল কন্ট্রোল সুইচ (Fuel Control Switch)-এর উপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করছেন। এই সুইচগুলি বিমানের উভয় ইঞ্জিনে জ্বালানি সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ করে এবং কোনো জরুরি পরিস্থিতিতে পাইলটরা এটি ব্যবহার করেন। যদিও, ব্ল্যাক বক্স থেকে এটা স্পষ্ট হয়নি যে দুর্ঘটনার আগে থ্রাস্টে পতন (Loss of Thrust) রেকর্ড করা হয়েছিল কিনা। একইসঙ্গে, এই ত্রুটি মানব ত্রুটি, প্রযুক্তিগত ত্রুটি, নাকি কোনো ইচ্ছাকৃত কাজের ফল ছিল, তাও স্পষ্ট নয়।
ফুয়েল সুইচ কেন তদন্তের কেন্দ্রবিন্দু?
একজন সিনিয়র বোয়িং ৭৮৭ কমান্ডার-এর মতে, ফুয়েল কন্ট্রোল সুইচ অত্যন্ত সংবেদনশীল এবং গুরুত্বপূর্ণ একটি সিস্টেমের অংশ। এর দুটি অবস্থান রয়েছে—Run এবং Cutoff। যখন সুইচ "Cutoff" মোডে আসে, তখন ইঞ্জিনে জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়, যার ফলে থ্রাস্ট এবং বিদ্যুৎ সরবরাহ দুটোই বন্ধ হয়ে যায়। এর ফলে ককপিটের যন্ত্রাংশও বিকল হতে পারে।
ফুয়েল সুইচ সাধারণত স্বাভাবিক উড্ডয়নের সময় ব্যবহার করা হয় না, বরং এটি কেবল জরুরি পরিস্থিতিতে ব্যবহার করা হয়—যেমন যখন উভয় ইঞ্জিনই বিকল হয়ে যায়।
কমান্ডারের প্রশ্ন: সুইচ অফ করা হয়েছিল কেন?
TOI-এর সঙ্গে আলাপকালে কমান্ডার জানান যে পাইলটদের এমন পরিস্থিতিতে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় যাতে তারা প্রথমে ইঞ্জিনকে ধীরে ধীরে ঠান্ডা করে, হঠাৎ বন্ধ না করে। তিনি আরও যোগ করেন যে যদি দুটি ইঞ্জিনই বিকল হয়ে যায়, তাহলে ফুয়েল কাটঅফের পরে এক সেকেন্ডের ব্যবধান রাখা হয়, যাতে Auxiliary Systems সক্রিয় হতে পারে। এর মধ্যে একটি ছোট Wind Turbine ব্যাকআপ পাওয়ার সরবরাহ করে।
তিনি আরও প্রশ্ন তোলেন, “যদি সুইচ অফ করা হয়ে থাকে, তবে কেন করা হয়েছিল?” এটা কি ইচ্ছাকৃতভাবে করা হয়েছিল, নাকি ভুলবশত? এটি এখনও অজানা। আরেকটি বড় প্রশ্ন হল, দুর্ঘটনার সময় ল্যান্ডিং গিয়ার নিচে কেন ছিল? এমনটা তখন জরুরি হয় যখন বিমান অবতরণের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে, কিন্তু আকাশে এমনটা করলে ড্র্যাগ (resistance) অনেক বেশি হতে পারে, যা বিমানের ভারসাম্য নষ্ট করতে পারে। যদি এটা জরুরি অবস্থা ছিল, তাহলে গিয়ার নিচে থাকার কারণে ক্র্যাশের সম্ভাবনা কি আরও বেড়ে গিয়েছিল? তদন্ত সংস্থাগুলি এই দিকগুলোও পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে খতিয়ে দেখছে।
ডিজাইনগত ত্রুটি নাকি মানবিক ত্রুটি?
এ পর্যন্ত পাওয়া খবর অনুযায়ী, বোয়িং এয়ারক্রাফট ডিজাইন এবং জিই এরোস্পেস ইঞ্জিন—কোনোটিরই কারিগরি ত্রুটি ধরা পড়েনি। সেই কারণে দুর্ঘটনার পুরো মনোযোগ এখন পাইলটের কার্যকলাপ বা সিস্টেমের অব্যবস্থাপনার দিকে এসে পড়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বোয়িংকে খারাপ নির্মাণের অভিযোগের সম্মুখীন হতে হয়েছে, তবে এই ঘটনায় এখনো পর্যন্ত তেমন কিছু সামনে আসেনি।