হিমাচলে বর্ষায় ধ্বংসলীলা: ৯১ জনের মৃত্যু, ত্রাণকার্য চলছে

হিমাচলে বর্ষায় ধ্বংসলীলা: ৯১ জনের মৃত্যু, ত্রাণকার্য চলছে

হিমাচলে বর্ষায় ব্যাপক ধ্বংসলীলা। এখন পর্যন্ত ৯১ জনের মৃত্যু, ৪৩২টি বাড়ি সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত এবং ৭৪৯ কোটি টাকার সম্পত্তির ক্ষতি হয়েছে। ত্রাণকার্য চলছে।

Himachal Monsoon Alert: হিমাচল প্রদেশে এবারের বর্ষা ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞ নিয়ে এসেছে। এখন পর্যন্ত রাজ্যে ৯১ জনের মৃত্যু হয়েছে, যেখানে এখনোও ৩৪ জন নিখোঁজ। ১৩১ জন আহত হয়েছেন। ভারী বৃষ্টিপাত ও ভূমিধসের কারণে বহু জেলার জনজীবন বিপর্যস্ত। রাজ্য সরকার এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগ অবিরাম ত্রাণ ও উদ্ধার কাজে নিয়োজিত, কিন্তু খারাপ আবহাওয়া এবং ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা এই প্রচেষ্টায় বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ব্যাপক ক্ষতি: কয়েকশো বাড়ি উজাড়

রাজ্য সরকারের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত ৪৩২টি বাড়ি সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে গেছে, যেখানে ৯২৮টি বাড়ির আংশিক ক্ষতি হয়েছে। বৃষ্টি ও তার সাথে সম্পর্কিত দুর্ঘটনার কারণে প্রায় ৭৪৯ কোটি টাকার সম্পত্তির ক্ষতি হয়েছে। মান্ডি, কাংড়া এবং শিমলা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত জেলা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।

মান্ডিতে সবচেয়ে বেশি প্রভাব, রাস্তা ও ট্রান্সফর্মার অচল

মান্ডি জেলা দুর্যোগের সবচেয়ে বড় কেন্দ্র হিসেবে উঠে এসেছে। এখানে একটি জাতীয় সড়ক (NH) সহ মোট ১৬৬টি রাস্তা বন্ধ হয়ে আছে। এছাড়াও ১৪৩টি ট্রান্সফর্মার এবং ২০৪টি পানীয় জলের প্রকল্পও অচল হয়ে পড়েছে। এই পরিস্থিতির কারণে স্থানীয় বাসিন্দাদের বিদ্যুৎ এবং জলের মতো মৌলিক সুবিধাগুলির জন্য সংগ্রাম করতে হচ্ছে।

রাজ্যজুড়ে ২২৩টি রাস্তা এখনও বন্ধ

হিমাচল প্রদেশ জরুরি অপারেশন কেন্দ্র অনুসারে, রাজ্যে এখনও একটি জাতীয় সড়ক সহ মোট ২২৩টি রাস্তা বন্ধ রয়েছে। ভূমিধস এবং গাছ উপড়ে পড়ার কারণে এই রাস্তাগুলি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়াও ১৫১টি ট্রান্সফর্মার এবং ৮১৫টি পানীয় জলের প্রকল্প কাজ করছে না, যার ফলে গ্রামীণ এলাকাগুলোতে পরিস্থিতি আরও গুরুতর হয়ে উঠেছে।

আবহাওয়া বিভাগের সতর্কতা জারি

যদিও শুক্রবার রাজ্যের অধিকাংশ স্থানে আবহাওয়া পরিষ্কার ছিল, তবুও আবহাওয়া বিভাগ ১৭ জুলাই পর্যন্ত ভারী বৃষ্টির জন্য হলুদ সতর্কতা জারি করেছে। ১২ জুলাই শিমলা, সোলান এবং সিরমৌর জেলাগুলিতে ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। ১৩ জুলাইয়ের জন্য কমলা সতর্কতা জারি করা হয়েছে। আবহাওয়া বিভাগ জনগণকে অপ্রয়োজনীয় ভ্রমণ এড়াতে এবং নিরাপদ স্থানে থাকার জন্য আবেদন জানিয়েছে।

ত্রাণ কাজে গতি, তবে চ্যালেঞ্জগুলি অব্যাহত

আবহাওয়ায় কিছুটা স্বস্তি আসায় মান্ডি এবং অন্যান্য ক্ষতিগ্রস্ত জেলাগুলিতে ত্রাণ কাজে গতি এসেছে। রাস্তা পরিষ্কার করা, বিদ্যুৎ ও জল সরবরাহ পুনরুদ্ধার এবং জনগণকে নিরাপদ স্থানে সরানোর কাজ চলছে। বিআরও, লোক নির্মাণ বিভাগ, বিদ্যুৎ বোর্ড এবং জল শক্তি বিভাগের দলগুলি একসঙ্গে কাজ করছে।

চাম্বায় ভূমিকম্পের কম্পন অনুভূত হয়েছে

একদিকে যখন বৃষ্টি ও ভূমিধস মানুষের ঘুম কেড়ে নিয়েছে, তেমনই চাম্বা জেলায় শুক্রবার সকালে ভূমিকম্পের হালকা কম্পন অনুভূত হয়েছে। রিখটার স্কেলে এর তীব্রতা ছিল ৩.৫। ভূমিকম্পের কেন্দ্র ছিল ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৫ কিলোমিটার নিচে। ভূমিকম্পে কোনো প্রকার জীবনহানির খবর পাওয়া যায়নি, তবে এতে মানুষের মধ্যে ভয়ের পরিবেশ তৈরি হয়েছে।

প্রশাসন সতর্ক, জনগণকে সতর্ক থাকার আবেদন

চাম্বায় ভূমিকম্পের পর জেলা প্রশাসন অবিলম্বে ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা দলগুলিকে সতর্ক করেছে। ডেপুটি কমিশনার মুকেশ রেপসওয়াল জানিয়েছেন, ভূমিকম্পের পর প্রশাসনের পক্ষ থেকে সম্পূর্ণ সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে।

ভারী বৃষ্টিতে জনজীবন বিপর্যস্ত

বৃষ্টি ও ভূমিধসের কারণে বন্ধ হওয়া রাস্তা এবং অচল হয়ে পড়া মৌলিক পরিষেবা পুনরুদ্ধার করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। হাজার হাজার মানুষ এখনও ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় নিচ্ছেন। স্কুলগুলি বন্ধ করতে হয়েছে এবং অনেক এলাকায় প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের সরবরাহও প্রভাবিত হয়েছে। আবহাওয়া বিভাগের সতর্কতা দেখে মনে হচ্ছে আগামী দিনগুলো আরও কঠিন হতে পারে।

Leave a comment