ইডি-র অভিযানে ঝাড়খণ্ডের প্রাক্তন বিধায়ক আম্বা প্রসাদ, চাঞ্চল্য রাজনৈতিক মহলে

ইডি-র অভিযানে ঝাড়খণ্ডের প্রাক্তন বিধায়ক আম্বা প্রসাদ, চাঞ্চল্য রাজনৈতিক মহলে

প্রবর্তন নির্দেশালয় (ইডি) ঝাড়খণ্ডের প্রাক্তন বিধায়ক আম্বা প্রসাদের সাথে জড়িত একটি মানি লন্ডারিং মামলায় আবারও বড় পদক্ষেপ নিয়েছে। শুক্রবার, ইডি রাঁচি সহ মোট ৮টি স্থানে অভিযান চালিয়েছে। এই অভিযানগুলি আম্বা প্রসাদের আত্মীয় এবং ঘনিষ্ঠ সহযোগীদের ঠিকানায় চালানো হয়েছে।

Amba Prasad: ঝাড়খণ্ডের আলোচিত কংগ্রেস নেত্রী এবং প্রাক্তন বিধায়ক আম্বা প্রসাদ আবারও শিরোনামে। শুক্রবার এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) আম্বা প্রসাদের সাথে জড়িত মানি লন্ডারিং মামলায় রাঁচি সহ ৮টি স্থানে অভিযান চালিয়েছে। এই স্থানগুলির মধ্যে আম্বার আত্মীয় এবং ঘনিষ্ঠ সহযোগীদের বাসভবন এবং অফিস অন্তর্ভুক্ত ছিল। এই অভিযান বেশ কিছুক্ষণ ধরে চলেছিল এবং এর কারণে প্রদেশের রাজনীতিতে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে।

আম্বা প্রসাদ, যিনি বারকাগাঁও বিধানসভা কেন্দ্র থেকে বিধায়ক ছিলেন, তিনি সেই অল্প কয়েকজন তরুণ নেতার মধ্যে একজন যিনি খুব কম বয়সে রাজনীতিতে নিজের শক্তিশালী ভাবমূর্তি তৈরি করেছেন। কিন্তু ইডির এই পদক্ষেপ তাঁর রাজনৈতিক কর্মজীবনের উপর বড় প্রশ্নচিহ্ন তৈরি করেছে।

কে এই আম্বা প্রসাদ? UPSC ত্যাগ করে রাজনীতির হাল ধরলেন

আম্বা প্রসাদ শুধু একজন বিধায়ক নন, তিনি একজন সমাজকর্মী, আইনজীবী এবং সংগ্রামী নারী নেত্রীও। তিনি বিনোবা ভাবে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি পাশ করেন এবং তারপর জেভিয়ার ইনস্টিটিউট অফ সোশ্যাল সার্ভিস থেকে পিজিডিএম করেন। একটি আকর্ষণীয় বিষয় হল, আম্বা প্রসাদ ইউপিএসসি-র সিভিল সার্ভিস পরীক্ষার প্রস্তুতি শুরু করেছিলেন, কিন্তু সেই সময় তাঁর বাবা-মায়ের বিরুদ্ধে ওঠা রাজনৈতিক অভিযোগ এবং ষড়যন্ত্রের কারণে তাঁদের জেল যেতে হয়। পরিবারকে বাঁচাতে এবং তাঁদের রাজনৈতিক ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে আম্বা সিভিল সার্ভিসের পথ ত্যাগ করে রাজনীতিতে পা রাখেন।

রাজনীতি তাঁর রক্তে মিশে আছে

আম্বার পরিবার দীর্ঘদিন ধরে ঝাড়খণ্ডের রাজনীতিতে সক্রিয় রয়েছে। তাঁর বাবা যোগেন্দ্র সাউ রাজ্য সরকারের মন্ত্রী ছিলেন, যেখানে মা নির্মলা দেবীও বিধায়ক ছিলেন। এই কারণেই আম্বার জন্য রাজনীতি কোনও নতুন জগৎ ছিল না, এবং তিনি ২০১৯ সালে রেকর্ড অল্প বয়সে বিধায়ক হয়ে তা প্রমাণও করেছেন।

নারী सशक्तিকরণের শক্তিশালী কণ্ঠস্বর

আম্বা প্রসাদ তাঁর বিধানসভা মেয়াদের সময় নারী सशक्तিকরণ, ভূমি অধিকার, আদিবাসী কল্যাণ, শিক্ষা এবং গ্রামীণ উন্নয়ন-এর মতো বিষয়গুলিতে সোচ্চার হয়েছেন। তাঁর ধরনও সবসময় আলাদা ছিল। একবার তিনি ঘোড়ার পিঠে চড়ে বিধানসভায় পৌঁছে সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন। আম্বা বলেছিলেন যে এটি নারী सशक्तিকরণ এবং স্বনির্ভরতার প্রতীক।

এছাড়াও, তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায়ও খুবই সক্রিয় থাকেন এবং ঝাড়খণ্ডের লোকসংগীতের উপর ভিত্তি করে বেশ কয়েকটি মিউজিক অ্যালবামও প্রকাশ করেছেন, যা যুবকদের মধ্যে তাঁর জনপ্রিয়তা আরও বাড়িয়েছে।

ইডির অভিযানে প্রশ্ন

ইডি-র দল রাঁচি, হাজারীবাগ সহ আটটি স্থানে আম্বা প্রসাদ এবং তাঁর ঘনিষ্ঠদের বাসস্থানে তল্লাশি চালিয়েছে। সূত্রানুসারে, এই অভিযানটি কথিত মানি লন্ডারিং এবং দুর্নীতির সাথে জড়িত লেনদেনের তদন্তের সূত্রে হয়েছে। যদিও, এখনো পর্যন্ত কোনও বড় প্রমাণ বা গ্রেপ্তারের খবর নিশ্চিত করা হয়নি। ইডির এই অভিযানের পর আম্বা সমর্থকদের মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে, তবে তাঁর ঘনিষ্ঠদের মতে, এটি রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের অংশ হতে পারে, কারণ আম্বা প্রসাদ অনেক দুর্নীতি বিরোধী ইস্যুতে সোচ্চার হয়েছিলেন।

রাজনৈতিক ভবিষ্যতে কী প্রভাব পড়বে?

কংগ্রেসের তরুণ নেত্রী হিসাবে আম্বা প্রসাদ বারকাগাঁওয়ে একটি বড় জনসমর্থন তৈরি করেছেন। তিনি বর্তমানে কংগ্রেসের জাতীয় সচিব এবং পশ্চিমবঙ্গ-এর সহ-পর্যবেক্ষকও। এমন পরিস্থিতিতে ইডির পদক্ষেপ তাঁর রাজনৈতিক জীবনকে প্রভাবিত করবে কিনা, তা ভবিষ্যৎই বলবে। আম্বা প্রসাদ নিজে একাধিকবার বলেছেন যে তিনি রাজনীতিকে সেবার মাধ্যম হিসেবে বিবেচনা করেন এবং ঝাড়খণ্ডের গ্রামীণ বঞ্চিত শ্রেণির কণ্ঠস্বর হওয়ার জন্য সংগ্রাম করে যাবেন। তবে ইডির অভিযান তাঁর যাত্রাপথে একটি নতুন চ্যালেঞ্জ অবশ্যই তৈরি করেছে।

আম্বা প্রসাদের গল্প দেখায় কীভাবে একজন তরুণী তাঁর পরিবারের কঠিন পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে এসে রাজনীতিতে নিজের পথ তৈরি করেছেন এবং নারী सशक्तিকরণের প্রতীক হয়ে উঠেছেন। তবে বর্তমান অভিযোগ এবং ইডির পদক্ষেপ তাঁর সংগ্রামকে একটি ভিন্ন মোড় দিতে পারে।

Leave a comment