আমেরিকা ভারত থেকে আমদানি করা জিনিসের উপর শুল্ক অর্থাৎ ট্যাক্স অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে। আগে যেখানে ২০২৪ সালে গড়ে ২.৪ শতাংশ ট্যাক্স লাগত, এখন ২০২৫ সালে তা বেড়ে ২০.৭ শতাংশ হয়েছে। গ্লোবাল রেটিং এজেন্সি ফিচ এই তথ্য জানিয়েছে। ফিচ-এর মতে, শুল্ক বৃদ্ধির সবচেয়ে বড় কারণ হল মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন বাণিজ্য নীতি।
ট্রাম্প সরকার সম্প্রতি ভারতের উপর ২৫% পর্যন্ত শুল্ক চাপানোর ঘোষণা করেছে। এই সিদ্ধান্তের ফলে ভারতীয় রপ্তানিকারকরা বড় ধাক্কা খেয়েছেন। আমেরিকা ভারতের জন্য একটি বড় বাজার এবং সেখান থেকে আসা এই সিদ্ধান্তের সরাসরি প্রভাব ভারতীয় কোম্পানিগুলোর উপর পড়তে শুরু করেছে।
বড় কোম্পানিগুলোর চিন্তা বাড়ল, অর্থনৈতিক পূর্বাভাসে कटौती
এই শুল্ক বৃদ্ধির কারণে ভারতের অর্থনৈতিক পরিস্থিতির উপরও প্রভাব পড়তে দেখা যাচ্ছে। গোল্ডম্যান স্যাক্স সোমবার বলেছে যে ভারতের জিডিপি গ্রোথ ২০২৫ সালের জন্য কমিয়ে ৬.৫% এবং ২০২৬ সালের জন্য ৬.৪% ধরা হচ্ছে। আগে এই পরিসংখ্যান এর থেকে বেশি রাখা হয়েছিল।
গোল্ডম্যান স্যাক্স মনে করে যে মার্কিন শুল্কের কারণে ভারতের রপ্তানির উপর প্রভাব পড়বে এবং এর সরাসরি প্রভাব অর্থনীতিতে আসবে। যদিও, তারা এও বলেছে যে এই শুল্ক ভবিষ্যতে আলোচনার মাধ্যমে কমানো যেতে পারে, তবে ততদিন পর্যন্ত অনিশ্চয়তা বজায় থাকবে।
রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্যের উপরও জরিমানা
ডোনাল্ড ট্রাম্প শুধু ভারতের উপর শুল্ক চাপাননি, বরং রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য করা কোম্পানিগুলোর উপরও আলাদা করে জরিমানা করার ঘোষণা করেছেন। এর ফলে সেই ভারতীয় কোম্পানিগুলো দু’বার মার খাচ্ছে, যারা রাশিয়ার সঙ্গেও বাণিজ্যিক সম্পর্ক রাখে।
এই জরিমানার কারণে ভারতীয় কোম্পানিগুলোর জন্য এটা স্থির করা কঠিন হয়ে পড়েছে যে তারা তাদের পুরনো অংশীদারদের সঙ্গে ব্যবসা চালিয়ে যাবে নাকি মার্কিন বাজারকে অগ্রাধিকার দেবে। এই পরিস্থিতি ভারতের এক্সপোর্ট সেক্টরের জন্য চাপপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
ফিচ রেটিংস-এর আপডেট
ফিচ-এর নতুন রিপোর্ট অনুযায়ী, সামগ্রিকভাবে আমেরিকার গড় শুল্ক এখন ১৭%, যা আগে ২৫% পর্যন্ত বাড়ার আশঙ্কা ছিল। অর্থাৎ আগের অনুমানের থেকে এটা একটু কম, কিন্তু ভারতের জন্য এখনও এটা বড় চিন্তার বিষয়। ফিচ এও বলেছে যে শুল্ক বৃদ্ধির কারণে ভারত-আমেরিকা বাণিজ্য সম্পর্কের মধ্যে নতুন মোড় আসতে পারে।
এইচডিএফসি ব্যাঙ্কের অনুমান
এইচডিএফসি ব্যাঙ্ক বলেছে যে আমেরিকার শুল্কের কারণে ভারতের জিডিপি-তে ২০ থেকে ২৫ বেসিস পয়েন্ট পর্যন্ত পতন হতে পারে। ব্যাঙ্কের বক্তব্য, রপ্তানি হ্রাস এবং ব্যবসায়ী অনিশ্চয়তার কারণে অর্থনৈতিক বিকাশের গতিতে প্রভাব স্পষ্ট দেখা যাবে।
ব্যাঙ্ক একইসাথে এও যোগ করেছে যে ভারতকে এখন অভ্যন্তরীণ বাজার এবং বিকল্প বিদেশি বাজারের উপর মনোযোগ দিতে হবে যাতে এই ধাক্কাকে কিছুটা সামলানো যায়।
মুডি’স-এর রিপোর্টেও উদ্বেগ প্রকাশ
মুডি’স রেটিংস-এর সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ক্রিশ্চিয়ান ডি গুজম্যান বলেছেন যে আমেরিকার এই সিদ্ধান্তের প্রভাব ভারতের উৎপাদন ক্ষেত্রের উপর পড়বে, বিশেষ করে সেই সেক্টরগুলোর উপর যারা ইলেকট্রনিক্স এবং হাই-ভ্যালু সামগ্রী তৈরি করে।
তিনি বলেছেন যে ভারতের সবচেয়ে বড় শক্তি এটাই যে তারা অন্যান্য এশিয়ান দেশগুলোর তুলনায় বাণিজ্যের উপর কম নির্ভরশীল, কিন্তু তবুও এই ধাক্কা তার উন্নয়ন পরিকল্পনাকে প্রভাবিত করতে পারে। বিশেষভাবে সেই পরিকল্পনাগুলোকে, যেগুলো মেক ইন ইন্ডিয়ার মতো অভিযানের সঙ্গে যুক্ত।
ভারতীয় কোম্পানিগুলো, বিশেষ করে টেক্সটাইল, ফার্মা এবং ইলেকট্রনিক্স সেক্টরের কোম্পানিগুলো এই সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জিং বলেছে। একটি ইলেকট্রনিক্স রপ্তানিকারক কোম্পানির আধিকারিক জানিয়েছেন যে আমেরিকাতে এখন তাদের পণ্যের দাম ২৫% বেশি হয়ে যাবে, যার ফলে প্রতিযোগিতায় ক্ষতি হবে।
কিছু কোম্পানি এও বলেছে যে তাদের এখন নতুন বাজারের খোঁজ করতে হবে, যেমন আফ্রিকা, মধ্য এশিয়া বা ল্যাটিন আমেরিকা, যেখানে তাদের এই ধরনের শুল্কের সম্মুখীন হতে না হয়।
কারবারিদের মধ্যে উদ্বেগ, সরকারের কাছে আলোচনার দাবি
বাণিজ্য সংগঠন এবং রপ্তানিকারক সংস্থাগুলো কেন্দ্র সরকারের কাছে এই বিষয়ে আমেরিকার সঙ্গে আলোচনা করার দাবি জানিয়েছে। তাদের বক্তব্য, যদি দ্রুত কোনো সমাধান না বের হয়, তাহলে ছোট এবং মাঝারি শিল্পগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ান এক্সপোর্ট অর্গানাইজেশন (FIEO) বলেছে যে আমেরিকা ভারতের মোট রপ্তানির প্রায় ১৭% অংশ, এবং সেখানে শুল্কের এত বেশি বৃদ্ধি বাণিজ্যের জন্য ভালো ইঙ্গিত নয়।
শুল্ক বৃদ্ধির পর এখন ভারতকে তার বাণিজ্য নীতি নিয়ে পুনরায় ভাবতে হতে পারে। অনেক বিশেষজ্ঞের মতে, ভারতকে বহুপাক্ষিক চুক্তি এবং নতুন বাণিজ্য চুক্তির দিকে এগিয়ে যেতে হবে যাতে একটি বাজারের উপর নির্ভরতা কমানো যায়।
শিল্পজগতের চোখ এখন সরকারের পরবর্তী প্রতিক্রিয়ার দিকে যে তারা এই সমস্যাকে কিভাবে সমাধান করার চেষ্টা করে।