ভারতে প্রায়শই এই আলোচনা হয় যে রাজনীতিবিদদের জন্য অবসর গ্রহণের (রিটায়ারমেন্ট) কোনো বয়সসীমা থাকা উচিত কিনা। যদিও, ভারতীয় সংবিধানে এমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই — যে কোনো ব্যক্তি যতক্ষণ চান, নির্বাচন লড়তে পারেন এবং জনজীবনে সক্রিয় থাকতে পারেন।
আহমেদাবাদ: ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ (Amit Shah) তাঁর রাজনৈতিক জীবনের পরের পরিকল্পনার কথা বলতে গিয়ে জানিয়েছেন যে তিনি অবসর গ্রহণের পর তাঁর জীবন প্রাকৃতিক চাষ (Natural Farming) এবং বেদ-উপনিষদের অধ্যয়নে উৎসর্গ করবেন। রাজনীতি থেকে অবসর নেওয়ার পর তাঁর এই পরিকল্পনা কেবল সামাজিক দিক থেকেই অনুপ্রেরণামূলক নয়, বরং এটি টেকসই উন্নয়ন এবং ভারতীয় সাংস্কৃতিক মূল্যবোধের সংরক্ষণের দিকেও একটি শক্তিশালী ইঙ্গিত দেয়।
অবসর গ্রহণের পর চাষ ও আধ্যাত্মিকতার পথ
আহমেদাবাদে এক জনসভায় ভাষণ দেওয়ার সময় অমিত শাহ বলেন, "আমি ঠিক করেছি যে যখনই রাজনীতি থেকে অবসর নেব, আমার বাকি জীবন প্রাকৃতিক চাষের জন্য উৎসর্গ করব এবং বেদ-উপনিষদের গভীর অধ্যয়ন করব।" তিনি আরও বলেন, "এটি কেবল একজন কৃষকের কাজ নয়, বরং প্রাকৃতিক চাষ একটি বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা, যার ফলাফল অত্যন্ত ইতিবাচক।"
অমিত শাহ রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের কারণে হওয়া ক্ষতির ওপর আলোকপাত করে বলেন যে, এগুলির দীর্ঘকাল সেবনে ক্যান্সার, উচ্চ রক্তচাপ, থাইরয়েড এবং অন্যান্য রোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়। তিনি জোর দিয়ে বলেন, "যদি আমরা প্রাকৃতিক উপায়ে উৎপন্ন খাদ্য গ্রহণ করি, তাহলে শরীরের ওষুধের প্রয়োজন হবে না।"
বেদ-উপনিষদের অধ্যয়নের লক্ষ্য
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও জানান যে তিনি নিজে তাঁর জমিতে প্রাকৃতিক চাষ করছেন। "যখন থেকে আমি আমার জমিতে প্রাকৃতিক চাষ শুরু করেছি, তখন থেকে আমার উৎপাদন প্রায় ১.৫ গুণ বেড়েছে।" এই মন্তব্যটি এমন এক সময়ে এসেছে যখন সারা বিশ্বে জৈব ও প্রাকৃতিক চাষের বিষয়ে সচেতনতা বাড়ছে, এবং এটি ভারত-এর মতো কৃষিপ্রধান দেশের জন্য বিশেষ গুরুত্ব রাখে।
অমিত শাহ বলেন যে তিনি ভারতীয় জ্ঞান-ঐতিহ্যকে গভীরভাবে জানতে চান এবং অবসর গ্রহণের পর তিনি বেদ ও উপনিষদের অধ্যয়ন করবেন। তাঁর ধারণা, এই গ্রন্থগুলিতে কেবল ধর্মীয় বা আধ্যাত্মিক জ্ঞানই নেই, বরং জীবনের অনেক ব্যবহারিক প্রয়োগযোগ্য নীতিও লুকিয়ে আছে। তাঁর এই প্রবণতা ভারতীয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করার দিকে একটি ব্যক্তিগত অবদান হিসেবে দেখা যেতে পারে।
যুবকদের স্বাস্থ্য সম্পর্কিত পরামর্শ
অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যুবকদের স্বাস্থ্য এবং জীবনযাত্রার দিকেও দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তিনি বলেন, "যদি যুবকেরা প্রতিদিন দু'ঘণ্টা শারীরিক ব্যায়াম করে এবং কমপক্ষে ছয় ঘণ্টা ঘুমায়, তাহলে তারা মানসিক ও শারীরিকভাবে সুস্থ থাকবে।" তিনি আরও বলেন যে ভারতের যুব সমাজ আগামী ৪০-৫০ বছর পর্যন্ত দেশের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও প্রযুক্তিগত অগ্রগতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে, যদি তারা নিজেদের ফিট ও সচেতন রাখে।