ইমরান খানের ছেলেদের নিয়ে পাকিস্তানে রাজনৈতিক সংঘাত বেড়েছে। সরকার সতর্ক করেছে যে দেশে ফিরলে তাদের গ্রেপ্তার করা হবে। পিটিআই ৫ই আগস্ট থেকে আন্দোলন শুরু করতে চলেছে।
Pakistan Protest: পাকিস্তানের রাজনীতি আবারও গভীর উত্তেজনায়। এবারকার বিষয় প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের দুই ছেলে সুলেমান এবং কাসিম খান-কে নিয়ে। জেলে বন্দী ইমরান খানের সমর্থকরা ৫ই আগস্ট থেকে "ইমরান খান ফ্রি মুভমেন্ট" শুরু করার ঘোষণা করেছে। এরই মধ্যে খবর পাওয়া যাচ্ছে যে, তাদের দুই ছেলেই এই আন্দোলনে যোগ দিতে পাকিস্তানে আসতে পারে। এই আশঙ্কার পরিপ্রেক্ষিতে ক্ষমতাসীন দল পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন)-এর নেতারা স্পষ্ট জানিয়েছেন যে, যদি দুই ছেলে পাকিস্তানে আসে এবং কোনো ধরনের অশান্তি বা বিক্ষোভে অংশ নেয়, তাহলে তাদের গ্রেপ্তার করা হবে।
সরকারের কঠোর অবস্থান: "অব্যবস্থা বরদাস্ত করা হবে না"
পঞ্জাব সরকারের তথ্যমন্ত্রী আজমা বুখারি এই বিষয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ইমরান খানের ছেলেরা তখন পাকিস্তানে আসেননি যখন তাদের বাবা আহত ছিলেন, এখন হঠাৎ করে তাদের দেশের কথা মনে পড়ছে কেন? বুখারি স্পষ্ট করেছেন যে, যদি তারা দেশে বিশৃঙ্খলা তৈরির চেষ্টা করে, তাহলে আইন কঠোরভাবে ব্যবস্থা নেবে। তাঁর মতে, সরকার কাউকে বিশৃঙ্খলা তৈরির অনুমতি দেবে না, তিনি যেই হোন না কেন।
ইমরানের প্রাক্তন স্ত্রীর বক্তব্য
ইমরান খানের প্রাক্তন স্ত্রী জেমিমা গোল্ডস্মিথ এই ইস্যুতে সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তিনি সরকারের বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত বিদ্বেষ চরিতার্থ করার অভিযোগ করেছেন। জেমিমা লিখেছেন, "আমার সন্তানদের তাদের বাবার সাথে কথা বলারও অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না। ইমরান খান গত দুই বছর ধরে জেলে একান্তে রয়েছেন। এখন বলা হচ্ছে যে, তাঁর ছেলেরা পাকিস্তানে এলে তাদেরও জেলে দেওয়া হবে। এটা রাজনীতি নয়, ব্যক্তিগত শত্রুতা।"
বিরোধী দলের অভিযোগ: সরকারের আচরণ স্বৈরাচারী
ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) সরকারের বিরুদ্ধে স্বৈরাচারী মনোভাব প্রদর্শনের অভিযোগ করছে। দলের নেতাদের মতে, এটি সবই ইমরান খানের কণ্ঠস্বরকে স্তব্ধ করার ষড়যন্ত্র। পিটিআই দাবি করছে যে, সরকার ইমরান খানের সমর্থনে করা প্রতিটি প্রচেষ্টাকেই থামাতে চাইছে।
প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টার সতর্কতা
প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের উপদেষ্টা রানা সানাউল্লাহও এই বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেছেন যে, যদি ইমরান খানের ছেলেরা পাকিস্তানে এসে কোনো ধরনের বিক্ষোভ কর্মসূচিতে অংশ নেয়, তাহলে তাদের আইনের অধীনে গ্রেপ্তার করা হবে। রানার বক্তব্য ছিল, আইন সকলের জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য এবং এতে কাউকে ছাড় দেওয়া যায় না।
গভর্নরের মন্তব্য: আইনের প্রতি সবাইকে শ্রদ্ধাশীল হতে হবে
খাইবার পাখতুনখাওয়ার গভর্নর ফয়সল করিম কুন্ডি একই কথা বলেছেন। তিনি বলেন, দেশের কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়। যদি কোনো ব্যক্তি আইন ভাঙার চেষ্টা করে, তাহলে তাকে তার ফল ভোগ করতে হবে, তিনি যে পদেই থাকুন না কেন।
প্রতিবাদের মধ্যে নরম সুরও
যেখানে অধিকাংশ সরকারি নেতা কঠোর অবস্থান নিয়েছেন, সেখানে পিএমএল-এন-এর সাংসদ ইরফান সিদ্দিকী তুলনামূলকভাবে নরম সুর বজায় রেখেছেন। তিনি বলেছেন যে, যদি সুলেমান এবং কাসিম শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভে অংশ নেয়, তাহলে তাদের অনুমতি দেওয়া উচিত। তবে, যদি তারা কোনো প্রকার আইন লঙ্ঘন করে, তাহলে আইন তার কাজ করবে।
কাসিম খানের প্রতিক্রিয়া
ইমরান খানের ছেলে কাসিম খান এক্স (সাবেক টুইটার)-এ পোস্ট করে বলেছেন যে, তাঁর বাবাকে আইনজীবী, ডাক্তার এবং পরিবারের সঙ্গে দেখা করারও অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না। তিনি লিখেছেন, "এটা ন্যায়বিচার নয়, বরং এমন একটি পরিকল্পনা যার মাধ্যমে একজন নেতাকে দুর্বল করার চেষ্টা করা হচ্ছে, যিনি সবসময় গণতন্ত্র এবং আইনের শাসনের পক্ষে কথা বলেছেন।"
পারিবারিক উদ্বেগ এবং আন্তর্জাতিক নজরদারি
জেমিমা গোল্ডস্মিথের টুইটগুলি শুধু পাকিস্তানে নয়, আন্তর্জাতিক স্তরেও এই বিষয়টিকে আলোচনার কেন্দ্রে নিয়ে এসেছে। তাঁর মতে, শিশুদের তাদের বাবার সঙ্গে দেখা করা এবং তাঁর কুশল জানারও অধিকার দেওয়া হচ্ছে না। এই বক্তব্যে একটি মানবিক দৃষ্টিকোণও তুলে ধরা হয়েছে, যা এই বিষয়টিকে শুধু রাজনৈতিক নয়, পারিবারিক এবং সংবেদনশীল একটি ইস্যুতে পরিণত করেছে।
৫ই আগস্ট থেকে সম্ভাব্য বিক্ষোভ-সমাবেশ
পিটিআই-এর ঘোষণা অনুযায়ী, ৫ই আগস্ট থেকে "ইমরান খান ফ্রি মুভমেন্ট"-এর সূচনা হওয়ার কথা। এই আন্দোলনের উদ্দেশ্য ইমরান খানের মুক্তির দাবি জানানো। সরকার এই আন্দোলন নিয়ে সতর্ক এবং দেশজুড়ে নিরাপত্তা সংস্থাগুলিকে হাই অ্যালার্টে রাখা হয়েছে। বিশেষ করে এই বিষয়ে নজর রাখা হচ্ছে যে, আন্দোলনের নামে কোনো ধরনের সহিংসতা না ছড়ায়।