পঞ্জাবের রাজনীতিতে আজকাল আম আদমি পার্টি (আপ) এবং কংগ্রেস মুখোমুখি এসে দাঁড়িয়েছে। বিষয়টি তেতে ওঠে, যখন কংগ্রেসের প্রবীণ নেতা ও বিরোধী দলনেতা প্রতাপ সিং বাজওয়ার অভিযোগের ভিত্তিতে আম আদমি পার্টির বিরুদ্ধে এফআইআর (FIR) দায়ের করা হয়। অভিযোগ, আপ নেতারা বাজওয়ার একটি সম্পাদিত ভিডিও (edited video) সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করেছেন, যেখানে তাঁর বক্তব্যকে ভুল প্রসঙ্গে উপস্থাপন করা হয়েছে। ভিডিওটিতে নাকি এমনটা দেখানোর চেষ্টা করা হয়েছে যে বাজওয়া শিরোমণি আকালি দল (শিঅদ) নেতা বিক্রম সিং মাজিঠিয়ার সমর্থন করছেন।
আমার কথা বিকৃত করে পেশ করা হয়েছে
প্রতাপ বাজওয়া তাঁর অভিযোগে জানিয়েছেন যে, তিনি ২৫ জুন, দুপুর ৩:১৩ মিনিটে এক্স (আগেকার টুইটার)-এ ৩ মিনিট ৪৮ সেকেন্ডের একটি ভিডিও পোস্ট করেছিলেন, যেখানে পঞ্জাব ভিজিল্যান্স ব্যুরোর (Punjab Vigilance Bureau) কাজকর্মের ওপর প্রশ্ন তোলা হয়েছিল। তিনি মাজিঠিয়া এবং কংগ্রেস বিধায়ক সুখপাল সিং খেরার সঙ্গে কর্মকর্তাদের কথিত দুর্ব্যবহারেরও সমালোচনা করেছিলেন।
বাজওয়ার অভিযোগ, আম আদমি পার্টি সেই ভিডিওটি সম্পাদনা করে, তার থেকে মাজিঠিয়ার স্ত্রী এবং পঞ্জাব বিধানসভার সদস্য গনিভ কৌর এবং মহিলা বিধায়ক হওয়ার বিষয়টি বাদ দিয়েছে। এর ফলে ভুল বার্তা গেছে যে, তিনি মাজিঠিয়ার সমর্থন করছেন। তিনি বলেন, এটি একটি সুপরিকল্পিত চক্রান্ত, যার মাধ্যমে আমার এবং কংগ্রেস পার্টির রাজনৈতিক ভাবমূর্তিকে আঘাত করা হয়েছে।
মন্ত্রী আমন অরোরা এবং চিমা'র নাম জড়ানো হয়েছে
বাজওয়া তাঁর অভিযোগে আরও জানান, পঞ্জাবের অর্থমন্ত্রী হরপাল সিং চিমা সম্পাদিত ভিডিওটি তাঁর ফেসবুক অ্যাকাউন্টে শেয়ার করেছেন, যেখানে মন্ত্রী আমন অরোরা সেটি আপ পঞ্জাবের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে পোস্ট করেছেন। তিনি অভিযোগ করেছেন যে, এই ভিডিওটি ইচ্ছাকৃতভাবে তাঁর ভাবমূর্তি খারাপ করার জন্য সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়ানো হয়েছে।
বাজওয়া বলেন, এই ধরনের সম্পাদনা করে শুধু তাঁকে बदनाम করা হয়নি, বরং একটি মিথ্যা বয়ানও তৈরি করা হয়েছে যে তিনি তাঁদের সমর্থন করছেন, যাঁদের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। তিনি আরও অভিযোগ করেন, ভিডিও থেকে আসল বিষয়টি— ভিজিল্যান্স কর্মকর্তাদের কথিত ভুল আচরণ—সম্পূর্ণভাবে চাপা দেওয়া হয়েছে।
এফআইআরে (FIR) গুরুতর ধারা যুক্ত করা হয়েছে
বাজওয়ার অভিযোগের ভিত্তিতে দায়ের করা এফআইআরে (FIR) ভারতীয় ন্যায় সংহিতা (BNS)-র ধারাগুলি যুক্ত করা হয়েছে: ধারা ৩৩৬(৪) (জালিয়াতি), ৩৫৬ (মানহানি) এবং ৬১(২) (অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র)। মামলাটি বর্তমানে একজন 'অজ্ঞাত মিডিয়া অপারেটর'-এর বিরুদ্ধে রুজু করা হয়েছে, তবে কংগ্রেস নেতা আপ-এর শীর্ষস্থানীয় নেতা এবং তাঁদের সোশ্যাল মিডিয়া পরিচালনায় যুক্ত সহযোগীদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।
মুখ্যমন্ত্রী ভগবন্ত মান-এর পালটা জবাব
এই পুরো বিতর্ক নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী ভগবন্ত মান কেন্দ্র সরকারকে কাঠগড়ায় তুলেছেন। তিনি বলেন, যখনই কেউ সত্যি কথা বলে, তাকে চুপ করানোর চেষ্টা করা হয়। মণীশ সিসোদিয়া, সঞ্জয় সিং এবং অরবিন্দ কেজরিওয়ালকেও সত্যি বলার মূল্য হিসেবে জেলে থাকতে হয়েছে। মান এফআইআরকে (FIR) গণতন্ত্রের কণ্ঠরোধ করার ষড়যন্ত্র বলে অভিহিত করেছেন এবং বলেছেন যে আম আদমি পার্টি এমন ঘটনায় ভয় পাওয়ার পাত্র নয়।
অন্যদিকে, পঞ্জাবের অর্থমন্ত্রী হরপাল সিং চিমা কংগ্রেস নেতা প্রতাপ বাজওয়ার ওপর পালটা আক্রমণ করে তাঁর বিরুদ্ধে ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)-র সঙ্গে আঁতাত করার অভিযোগ করেছেন।
মাজিঠিয়া মামলার উদাহরণ দিয়ে ভিজিল্যান্সের (Vigilance) কাজকর্মের ওপর প্রশ্ন
বাজওয়া এই বিতর্কে শিরোমণি আকালি দলের প্রবীণ নেতা বিক্রম সিং মাজিঠিয়ার মামলাটিকে উদাহরণ হিসেবে পেশ করেছেন। তিনি বলেন, পঞ্জাব ভিজিল্যান্স ব্যুরো (Punjab Vigilance Bureau) সম্প্রতি মাজিঠিয়ার বিরুদ্ধে এফআইআর (FIR) দায়ের করেছে, যেখানে তাঁর স্ত্রী গনিভ কৌর একজন নির্বাচিত মহিলা বিধায়ক। বাজওয়ার অভিযোগ, ভিজিল্যান্স কর্মকর্তারা শুধু তাঁর বাড়িতে জোর করে প্রবেশ করেননি, এমনকি শয়নকক্ষেও প্রবেশ করেছেন, যা সম্পূর্ণভাবে অসংবেদনশীল এবং নারীর মর্যাদার পরিপন্থী।
তিনি এই কাজকে আইনের লঙ্ঘন এবং নৈতিকতার পরিপন্থী বলে অভিহিত করে সম্পূর্ণভাবে অগ্রহণযোগ্য বলে ঘোষণা করেছেন।
বাকস্বাধীনতা মানে চরিত্র হনন নয়
বাজওয়া এই বিষয়টিকে গণতন্ত্রের মূল চেতনার পরিপন্থী বলেছেন। তিনি বলেন, গণতন্ত্র অবশ্যই বাকস্বাধীনতা দেয়, কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে, কোনও ব্যক্তির ভাবমূর্তিকে আঘাত করার জন্য ভিডিওর সঙ্গে কারচুপি করা হবে এবং জনসাধারণকে বিভ্রান্ত করা হবে।
তিনি স্পষ্টভাবে বলেছেন যে, এই মামলাটি শুধু তাঁর ব্যক্তিগত ভাবমূর্তির বিষয় নয়, বরং এটি পুরো গণতান্ত্রিক কাঠামোর সম্মান ও মর্যাদার সঙ্গে জড়িত। বাজওয়া দাবি করেছেন, সংশ্লিষ্ট সকলের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হোক এবং ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত করা হোক।
রাজনৈতিক ঝড় থামার সম্ভাবনা নেই
এফআইআর (FIR) দায়ের হওয়ার পর থেকে বিষয়টি ক্রমাগত বাড়ছে। কংগ্রেস এটিকে গণতন্ত্রের হত্যা বলে অভিহিত করছে, আবার আম আদমি পার্টি এটিকে বিরোধীদের অস্থিরতা হিসেবে দেখছে। দু’পক্ষ থেকেই বিবৃতি দেওয়ার পালা চলছে এবং আগামী দিনগুলিতে এই রাজনৈতিক সংঘাত আরও তীব্র হতে পারে।