ভারত থেকে এপ্রিল থেকে জুন ২০২৫ ত্রৈমাসিকে যে স্মার্টফোন রপ্তানি হয়েছে, তাতে Apple-এর অবদান সবচেয়ে বেশি। বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের রিপোর্ট অনুযায়ী, Apple তাদের ভেন্ডরদের মাধ্যমে এই ত্রৈমাসিকে ৬ বিলিয়ন ডলার অর্থাৎ প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকার iPhone রপ্তানি করেছে। এই সংখ্যা গত বছরের একই ত্রৈমাসিকের চেয়ে ৮২ শতাংশ বেশি।
গত বছরের প্রথম ত্রৈমাসিকে ভারত থেকে শুধুমাত্র ৩.২ বিলিয়ন ডলারের স্মার্টফোন রপ্তানি হয়েছিল। সেখানে এই বছরের প্রথম তিন মাসে Apple একাই এত বড় অবদান রেখে নতুন রেকর্ড তৈরি করেছে। স্মার্টফোন শিল্পের জন্য এটি একটি বড় কৃতিত্ব বলে মনে করা হচ্ছে।
স্মার্টফোনই নয়, পুরো ইলেকট্রনিক্স সেক্টরও লাভবান
শুধু স্মার্টফোনই নয়, এই সময়কালে ভারতের সামগ্রিক ইলেকট্রনিক্স রপ্তানিতেও উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি দেখা গেছে। ২০২৬ অর্থবর্ষের প্রথম ত্রৈমাসিকে মোট ইলেকট্রনিক্স রপ্তানি ১২.৪ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে, যেখানে গত বছর একই সময়ে এই সংখ্যা ছিল ৮.৪ বিলিয়ন ডলার।
এভাবে দেখলে পুরো ইলেকট্রনিক্স সেক্টরে ৪৮ শতাংশ বৃদ্ধি হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় অংশ স্মার্টফোনের, যার অংশীদারিত্ব এবার ৬২ শতাংশ, যেখানে গত বছর ছিল ৫৮ শতাংশ।
ভারতে iPhone ম্যানুফ্যাকচারিং-এর বাড়ছে পরিধি
ভারতে Apple-এর ম্যানুফ্যাকচারিং প্ল্যান্টগুলি ধীরে ধীরে বাড়ছে। ফক্সকন, উইস্ট্রন এবং পেগাট্রন-এর মতো কোম্পানিগুলো ভারতে Apple-এর জন্য iPhone তৈরি করছে। এই ভেন্ডরদের মাধ্যমে ভারতে ম্যানুফ্যাকচারিং বেড়েছে এবং এর ফলে রপ্তানিও দ্রুত হয়েছে।
Apple এখন চীন এর পর ভারতকে দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ ম্যানুফ্যাকচারিং বেস হিসেবে তৈরি করছে। ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ অভিযানের অধীনে Apple সরকার থেকেও সহযোগিতা পাচ্ছে, যা কোম্পানিকে এখানে ব্যবসা করতে সাহায্য করছে।
আমেরিকার ট্যারিফ নীতি উদ্বেগের কারণ
Apple এবং ভারতের জন্য এই সময়টা সাফল্যের হলেও, আমেরিকার নীতির কারণে ঝুঁকির আশঙ্কাও রয়েছে। আমেরিকার সরকার বর্তমানে ট্রেড এক্সপ্যানশন অ্যাক্ট ১৯৬২-এর ধারা ২৩২-এর অধীনে একটি তদন্ত করছে।
এই তদন্তের উদ্দেশ্য হল এটা নির্ধারণ করা যে কোন কোন পণ্যের আমদানি আমেরিকার জাতীয় নিরাপত্তার জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। যদি তদন্তে ভারতীয় পণ্যকে এই শ্রেণিতে রাখা হয়, তাহলে সেগুলোর উপর ভারী ট্যারিফ অর্থাৎ আমদানি শুল্ক চাপানো হতে পারে।
১৪ই আগস্ট পর্যন্ত আসতে পারে রিপোর্ট
মনে করা হচ্ছে এই তদন্তের রিপোর্ট ১৪ই আগস্ট পর্যন্ত আসতে পারে। যদি আমেরিকার সরকার iPhone-এর মতো পণ্যের উপর ট্যারিফ লাগানোর সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে ভারত থেকে আমেরিকাতে হওয়া রপ্তানি ব্যয়বহুল হয়ে যাবে। এর ফলে Apple-কে খরচ বেড়ে যাওয়ার চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে।
আপাতত এই তদন্তের ফল আসা পর্যন্ত ভারত থেকে আমেরিকাতে পাঠানো স্মার্টফোন, ল্যাপটপ এবং সার্ভারের মতো পণ্যের উপর ২৫ শতাংশ ট্যারিফ লাগবে না। কিন্তু যদি রিপোর্টের পর শুল্ক কার্যকর হয়, তাহলে Apple-এর বর্তমান রপ্তানি কৌশল প্রভাবিত হতে পারে।
সরকার এবং কোম্পানির মধ্যে সমন্বয়ের প্রভাব
Apple-এর ভেন্ডররা ভারত সরকারের প্রোডাকশন লিঙ্কড ইনসেন্টিভ (PLI) স্কিম থেকেও অনেক সুবিধা পেয়েছে। এই স্কিমের অধীনে ইলেকট্রনিক্স কোম্পানিগুলোকে ভারতে উৎপাদন বাড়ানোর জন্য উৎসাহ ভাতা দেওয়া হয়।
সরকার এবং বেসরকারি কোম্পানির মধ্যে ভালো সমন্বয়ের ফলে ভারত এখন গ্লোবাল ম্যানুফ্যাকচারিং হাব হিসেবে উঠে আসছে। বিশেষ করে স্মার্টফোন এবং কনজিউমার ইলেকট্রনিক্স সেক্টরে ভারতের অবস্থা আগের চেয়ে অনেক ভালো হয়েছে।
ট্রাম্পের প্রত্যাবর্তনের আশঙ্কা
আমেরিকার আসন্ন নির্বাচন নিয়েও উদ্বেগ রয়েছে। যদি ডোনাল্ড ট্রাম্প আবার রাষ্ট্রপতি হন, তাহলে বাণিজ্য নীতি আরও কঠিন হতে পারে। ট্রাম্প প্রশাসন এর আগেও চীন ও ভারতের মতো দেশের উপর ট্যারিফ বাড়িয়েছিল।
এমন পরিস্থিতিতে যদি তিনি ক্ষমতায় ফেরেন এবং ভারত থেকে হওয়া আমদানিকে লক্ষ্য করেন, তাহলে Apple-এর মতো কোম্পানির জন্য আমেরিকাতে পণ্য বিক্রি করা কঠিন হতে পারে। এর ফলে ভারতের রপ্তানি বৃদ্ধিতেও প্রভাব পড়বে।
স্মার্টফোন ছাড়া অন্য সেক্টরও প্রভাবিত হতে পারে
আপাতত এই ঝুঁকি শুধু স্মার্টফোনের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। যদি আমেরিকা ট্যারিফ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে ভারত থেকে পাঠানো ল্যাপটপ, সার্ভার, অডিও ডিভাইস এবং অন্যান্য ইলেকট্রনিক্স পণ্যও এর আওতায় আসতে পারে।
যদিও ভারত সরকার বর্তমানে এই পরিস্থিতির উপর নজর রাখছে এবং কূটনৈতিক স্তরে চেষ্টা করছে যাতে ট্যারিফ কার্যকর না হয়। পাশাপাশি, কোম্পানিগুলোও তাদের লজিস্টিকস এবং সাপ্লাই চেইন প্ল্যানে পরিবর্তন আনছে যাতে আমেরিকান বাজারে কোনো সমস্যা না হয়।