আসানসোলে জাতীয় সড়কে ধস স্তব্ধ যান চলাচল

আসানসোলে জাতীয় সড়কে ধস স্তব্ধ যান চলাচল

জাতীয় সড়কে হঠাৎ ধস, আতঙ্কে এলাকাবাসী

আসানসোলের গাড়ুই ব্রিজ সংলগ্ন এলাকায় রবিবার সকালে জাতীয় সড়কে দেখা গেল এক বিশাল গর্ত। ১৯ নম্বর জাতীয় সড়কের উপর এই ধসের জেরে তীব্র আতঙ্ক ছড়ায় স্থানীয় বাসিন্দা ও পথচারীদের মধ্যে। প্রায় ২০ ফুট গভীর এই গর্তটি দেখে প্রথমে থমকে যান স্থানীয়রা। এরপরেই দ্রুত খবর যায় পুলিশ ও জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের কাছে। ঘটনার আকস্মিকতায় স্তব্ধ হয়ে যায় যান চলাচল।

রাতের অন্ধকারে হলে বিপর্যয় অনিবার্য!

স্থানীয়দের কথায়, এই ধস যদি রাতে হতো, তাহলে ঘটতে পারত প্রাণহানির মত বড় দুর্ঘটনা। কারণ রাতে সাধারণত এই জাতীয় সড়কে ভারী যানবাহনের যাতায়াত অনেক বেশি থাকে। সেই পরিস্থিতিতে ধসের কারণে কোনও বাস বা লরির চাকা যদি গর্তে পড়ত, তাহলে তার ফলাফল ভয়ঙ্কর হতে পারত। সৌভাগ্যবশত সকালেই চোখে পড়ে যাওয়ায় বড় ক্ষতি থেকে বেঁচে গিয়েছে শহরবাসী।

খোঁজ নিয়ে পৌঁছল প্রশাসন, ঘিরে ফেলা হল এলাকা

ধসের খবর পেয়েই তৎপর হয় আসানসোল উত্তর থানার ট্র্যাফিক গার্ড। পুলিশ অফিসার তাপস রায় জানান, "ধসের খবর পাওয়ার পরেই ঘটনাস্থলে পৌঁছে যাই আমরা। জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষকে খবর দিই এবং তাঁরা এসে ধসগ্রস্ত এলাকা ঘিরে ফেলে কংক্রিটের ব্যারিকেড দিয়ে।" আপাতত একপাশের লেন দিয়ে নিয়ন্ত্রিতভাবে গাড়ি চলাচল চালু রাখা হয়েছে।

তদন্ত শুরু, খনি অঞ্চলের ভূগর্ভস্থ প্রভাবের আশঙ্কা

এই ধসের কারণ কী, তা নিয়ে ইতিমধ্যেই তদন্ত শুরু করেছে প্রশাসন। প্রাথমিকভাবে অনুমান করা হচ্ছে, জাতীয় সড়কের নীচের মাটি সরে যাওয়ার ফলেই এই ধস। খনি অঞ্চল হিসেবে পরিচিত এই এলাকা—অন্ডাল, রানিগঞ্জ, পাণ্ডবেশ্বর, এমনকি আসানসোলে মাঝে মাঝেই ছোট বা মাঝারি ধস নামার খবর মেলে। তবে জাতীয় সড়কের মতো গুরুত্বপূর্ণ পথে এমন ধস, তা প্রশাসনের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে।

শুরু হয়েছে মেরামতির কাজ, চরম সতর্কতা প্রশাসনের

সড়ক মেরামতির কাজও দ্রুত শুরু হয়েছে। জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, দ্রুত গর্ত ভরাট করে রাস্তার মজবুতিকরণ করা হবে। একই সঙ্গে রাস্তার নিচে মাটির গঠন ও চাপ নিয়ে বিশেষজ্ঞ টিম দিয়ে সমীক্ষা করানো হবে। পরবর্তী ধস আটকাতে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে। আপাতত যাত্রীদের যান চলাচলে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বনের নির্দেশ দিয়েছে পুলিশ।

সাময়িক স্বস্তি, কিন্তু চরম সতর্ক থাকার পরামর্শ

যদিও এখন পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক, তবু জাতীয় সড়কে যাত্রীদের প্রতি রয়েছে পুলিশের কড়া নজর। কংক্রিট ব্যারিকেডের মধ্যে দিয়ে সীমিত পরিসরে চলাচল চালু থাকলেও, যেকোনও মুহূর্তে আবার ধস নামার আশঙ্কায় উদ্বেগে রয়েছে প্রশাসন। ধসের চিহ্ন থাকায় ট্র্যাফিক বিভাগ চালকদের গতি কমিয়ে সাবধানে গাড়ি চালানোর পরামর্শ দিয়েছে।

স্থানীয়দের দাবি, আরও মজবুত হোক পরিকাঠামো

ঘটনার পরে এলাকার মানুষ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, জাতীয় সড়কের মতো জায়গায় এমন গাফিলতি মেনে নেওয়া যায় না। এত গুরুত্বপূর্ণ পথ দিয়ে হাজার হাজার গাড়ি চলে প্রতিদিন। মাটি পরীক্ষা না করে রাস্তাঘাট তৈরি হলে এই ধরনের ঘটনা ঘটতেই থাকবে। তাঁদের দাবি, রাস্তা নির্মাণের আগে ভূগর্ভস্থ কাঠামো ভালোভাবে খতিয়ে দেখা হোক এবং ভবিষ্যতে যেন এমন বিপদ না আসে তার জন্য প্রশাসন উপযুক্ত ব্যবস্থা নিক।

Leave a comment