মহাকাশচারী শুভাংশু শুক্লা এক্সিওম-৪ মিশন থেকে সফল প্রত্যাবর্তনের কয়েক সপ্তাহ পর পৃথিবীর পরিবেশে পুনরায় নিজেকে মানিয়ে নেওয়ার অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছেন। শুক্রবার একটি আলোচনায় তিনি জানান, মহাকাশ থেকে ফেরার পরের প্রথম সময়টা তাঁর জন্য খুবই কঠিন ছিল।
নয়াদিল্লি: ৪১ বছরের দীর্ঘ বিরতির পর কোনো ভারতীয় নাগরিক মহাকাশ যাত্রা সম্পন্ন করেছেন। মহাকাশচারী শুভাংশু শুক্লা, যিনি সম্প্রতি Axiom-4 (এক্সিওম-৪) মিশন থেকে পৃথিবীতে ফিরেছেন, শুক্রবার একটি ভার্চুয়াল প্রেস কনফারেন্সে তাঁর মহাকাশ प्रवासের সময় এবং পৃথিবীতে প্রত্যাবর্তনের পরে শারীরিক ও মানসিক চ্যালেঞ্জগুলো তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, মাধ্যাকর্ষণে পুনরায় অভ্যস্ত হওয়ার সময় একটি সাধারণ মোবাইল ফোনও তাঁর কাছে ভারী লাগতে শুরু করে এবং তিনি তাঁর ল্যাপটপটি সঠিকভাবে ধরে রাখতে পারছিলেন না।
৪১ বছর পর মহাকাশ থেকে ফিরলেন ভারতীয়
শুভাংশু শুক্লা, যিনি ১৫ জুলাই পৃথিবীতে ফিরে এসেছেন, রাকেশ শর্মার পর মহাকাশে ভ্রমণকারী দ্বিতীয় ভারতীয় নাগরিক। ১৯৮৪ সালে সোভিয়েত মিশনের অধীনে রাকেশ শর্মা মহাকাশে যাত্রা করেন। তবে শুভাংশুর এই যাত্রা ছিল বেসরকারি সংস্থা Axiom Space-এর নেতৃত্বে একটি আন্তর্জাতিক অংশীদারিত্বের অংশ, যা তাঁকে কেবল মহাকাশে পাঠায়নি, বরং মিশনের প্রধান অবদানকারী এবং গবেষকও করে তোলে।
শুভাংশু বলেন, 'এ বার আমরা শুধু উড়তে নয়, নেতৃত্ব দিতেও প্রস্তুত ছিলাম। এটি কোনো একক প্রচেষ্টা ছিল না, এটি একটি বিশ্বব্যাপী সহযোগিতার গল্প।'
ফোন ধরতেই মনে হল খুব ভারী
মহাকাশ থেকে ফেরার পর শরীরের পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণে অভ্যস্ত হওয়া একটি বড় শারীরিক পরিবর্তন। এ বিষয়ে শুভাংশু একটি মানবিক এবং মজার উদাহরণ দিয়েছেন:
'আমি ছবি তোলার জন্য যখন ফোন চাইলাম এবং সেটি হাতে নিলাম, তখন সেটি বেশ ভারী মনে হল। এটি সাধারণ ফোন ছিল, কিন্তু যখন ২০ দিন মাধ্যাকর্ষণহীন অবস্থায় থাকবেন, তখন শরীরের জন্য ভারের অনুভূতি বদলে যায়।'
তিনি জানান, হাত-পায়ে হালকা লাগার অভ্যাস হয়ে যায় এবং যখনই পৃথিবীর দিকে ফেরা হয়, শরীর আবার ভারী অনুভব করতে শুরু করে।
ল্যাপটপ বিছানায় রাখতে গিয়ে পড়ে গেল
আরেকটি মজার অভিজ্ঞতা শেয়ার করে শুভাংশু বলেন:
'আমি আমার ল্যাপটপে কিছু কাজ করছিলাম এবং সেটি বিছানার পাশে রাখতে চেয়েছিলাম। আমি ছেড়ে দিলাম এই ভেবে যে ওটা সেখানেই ভাসতে থাকবে, কিন্তু সেটি সরাসরি মেঝেতে পড়ে গেল। ভাগ্যিস নীচে কার্পেট ছিল, না হলে ক্ষতি হতে পারত।'
এই ঘটনাটি প্রমাণ করে যে মহাকাশে থাকার পর যখন কোনো ব্যক্তি পৃথিবীতে ফেরেন, তখন তাঁর চিন্তা ও প্রতিক্রিয়াগুলোও মাইক্রোগ্র্যাভিটির সাথে মানিয়ে চলে।
Axiom-4 মিশন: ২০ দিন মহাকাশে
শুভাংশু শুক্লা ও তাঁর সহযোগীরা ২০ দিন এই মিশনের অংশ ছিলেন, যার মধ্যে তাঁরা ১৮ দিন আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে (ISS) কাটিয়েছেন। এই মিশনের উদ্দেশ্য ছিল:
- মাইক্রোগ্র্যাভিটিতে জৈবিক পরীক্ষা
- ভারতীয় প্রযুক্তি ও ডিভাইসের পরীক্ষা
- মানব শরীরের ওপর মহাকাশের প্রভাবের অধ্যয়ন
- তাঁরা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে মহাকাশ থেকে কথাও বলেছিলেন, যা তাঁর মতে সবচেয়ে স্মরণীয় মুহূর্ত।
- গগনযান মিশনের জন্য শিক্ষা
ভারতের महत्वाकांक्षी গগনयान মিশনের প্রস্তুতির জন্য শুভাংশুর অভিজ্ঞতা অমূল্য প্রমাণিত হতে পারে। তিনি বলেন: ‘আমি যা শিখেছি, তা আমাদের গগনযান মিশনের জন্য খুবই উপযোগী হবে। মহাকাশচারীদের কীভাবে প্রশিক্ষণ দেওয়া উচিত, কী কী সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত এবং শরীরকে কীভাবে মানিয়ে নেওয়া উচিত—এই সব কিছুই আমি প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা থেকে জেনেছি।’
শুভাংশু শুক্লা আগস্ট মাসের মাঝামাঝি সময়ে ভারতে ফিরবেন, যেখানে তিনি ISRO এবং ভারতীয় এ্যারোস্পেস বিজ্ঞানীদের সাথে তাঁর অভিজ্ঞতা শেয়ার করবেন। এই সময় তিনি বিশেষ প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে এবং উদ্ভাবন প্রকল্পে অংশ নেবেন।